বিটরুট এর উপকারিতা ও অপকারিতা - গর্ভাবস্থায় এর উপকারিতা
বিটরুট এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এখন আমি আমার এই আর্টিকেলের মধ্যে
বিস্তারিত আলোচনা করবো। এর পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় বিটরুড খাওয়ার উপকারিতা
সম্পর্কেও আপনাদের জানাবো।
আপনি যদি বিটরুট খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আমার এই
আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়বেন। চলুন তাহলে আর দেরি না করে বিটরুট
সম্পর্কে সকল তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
পেজ সূচিপত্রঃ বিটরুট এর উপকারিতা ও অপকারিতা
- বিটরুট এর উপকারিতা ও অপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়া যাবে কি
- গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা
- বিটরুট খাওয়ার নিয়ম
- বিটরুট জুস এর উপকারিতা
- রাতে বিটরুটের জুস খাওয়া যাবে কি
- বিট কি কাঁচা খাওয়া যায়
- বিটরুট কি কিডনির ক্ষতি করে
- বিটরুট কি প্রতিদিন খাওয়া যায়
- FAQ/বিটরুট সম্পর্কে কিছু আলোচিত প্রশ্ন ও উত্তর
- প্রতিদিন কতটুকু বিটরুট খাওয়া উচিত
- লেখকের মন্তব্যঃ বিটরুট এর উপকারিতা ও অপকারিতা
বিটরুট এর উপকারিতা ও অপকারিতা
আপনারা অনেকে আছেন যারা বিটরুট এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে
জানতে চেয়েছেন। অনেকেই আছেন যারা বিটরুটের উপকার সম্পর্কে জানেন না।
বিটরুট পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সবজি। শুধু যে এর মধ্যে পুষ্টিগুণ আছে তা
কিন্তু নয়, এর মধ্যে ওষুধিগুণ আছে। এর মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান
গুলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি এটি
বিভিন্ন অসুখ বিসুখ থেকে আমাদের শরীরকে দূরে রাখে।
এছাড়াও এই সবজিটি আমাদের শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে এবং শরীরকে সতেজ
ও টাটকা রাখতে সাহায্য করে। এই সবজির এত গুণাগুণ আছে যে এই সবজিকে বলা হয়
সুপারফুড সবজি। যে কোন জিনিসেরই ভালো দিক থাকার পাশাপাশি খারাপ দিকে
থাকে এটিও তার ব্যতিক্রম নয়। আপনি যদি ভুল নিয়মে বা পরিমাণে অতিরিক্ত
খান। তাহলে এর কিছু খারাপ দিক আপনি পাবেন। চলুন এর উপকারিতা গুলো এবং
অপকারিতা গুলো জেনে নেওয়া যাক।
বিট এর উপকারিতা
ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ যাদের অতিরিক্ত ওজন আছে তারা তাদের ওজনকে নিয়ন্ত্রণে
রাখার জন্য বিটরুট খেতে পারেন। কারণ বিট রুটের মধ্যে ক্যালোরি অনেক
কম পরিমাণে থাকে। যার কারণে শরীরের মধ্যে অতিরিক্ত ফ্যাট অর্থাৎ ওজন বাড়ার
চান্স কম থাকে এবং এর মধ্যে প্রাকৃতিক ফাইবার বেশি পরিমাণে থাকে। যে
ফাইবার পেটকে অনেকক্ষণ ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। যার
কারনে অতিরিক্ত খাওয়া কম হয়। ফলে ওজন থাকে নিয়ন্ত্রণে। যারা
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদের জন্য এটি অনেক উপকারী একটি সবজি হতে পারে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদ রোগের সমস্যা
আছে। তারা যদি বিটরুট খায়, তাহলে তাদের উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের
সমস্যা দূর হবে। কারণ বিটরুট এর মধ্যে অনেক বেশি
নাইট্রেট পাওয়া যায়। শরীরের মধ্যে যখন এই নাইট্রেট প্রবেশ করে তখন
এটা নাইট্রিক অক্সাইডে পরিবর্তন হয়ে যায়। এই নাইট্রিক
অক্সাইড শরীরের মধ্যে রক্তনালী কে প্রসারিত করে। যার কারণে
সহজে শরীরের মধ্যে রক্ত চলাচল করে। যেটা উচ্চ রক্তচাপকে কমিয়ে
দেয় ফলে হৃদরোগের ও স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকলে সেটা দূর হয়ে যায়।
রক্ত বাড়াতে বিটরুটঃ শরীরের মধ্যে রক্তের ঘাটতি বা রক্তশূন্যতা
থাকলে সেটা পূরণ করতে সাহায্য করে বিটরুট। বিটরুট এর মধ্যে প্রচুর
পরিমাণে আয়রন ও ভিটামিন বি৯ থাকে। এই উপাদানগুলো শরীরের মধ্যে
রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে এবং নতুন
রক্তকোষ তৈরি করে। যা শরীরের মধ্যে রক্তের ঘাটতি পূরণ
করে। যেটা একজন নারীর শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
শরীরের শক্তি বাড়ায়ঃ বিটের মধ্যে এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান আছে যেগুলো
শরীরের মধ্যে শক্তি উৎপন্ন করে এবং শরীরের ক্লান্তি দূর করে। এইসবজি
সাধারণত শরীরের মধ্যে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে থাকে। এটি
খাওয়ার পর শরীর থাকে সতেজ এবং সক্রিয়। যার কারণে প্রচুর
পরিশ্রম করা যায়, কার্যক্ষমতা বাড়ে। এটা মূলত যারা দিনে প্রচুর পরিমাণে
পরিশ্রম করে যেমন ব্যায়াম, খেলাধুলা বা ভারী কোনো কাজ তাদের জন্য অনেক
উপকারী।
লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ বিটরুট লিভারকে ভেতর থেকে পরিষ্কার
করে, যার কারণে লিভার থাকে ভালো। বিটের মধ্যে ব্যাটাইন নামের একটা
প্রাকৃতিক উপাদান থাকে। এই উপাদানটি লিভারকে পরিষ্কার করে এবং লিভারের
মধ্যে জমে থাকা খারাপ চর্বি দূর করে। যার কারণে ফ্যাটি
লিভার অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ বিটরুটের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, জিংক ও ম্যাগানিজ থাকে। এই
উপাদানগুলো শরীরের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে অনেক গুণে বাড়িয়ে দেয়।
যার কারণে এইগুলো শরীরের বিভিন্ন রোগ ও জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে
এবং শরীরকে সুস্থ করে। এর কারণে সহজে ভাইরাসজনিত রোগ,
জ্বর, ঠান্ডা, মাথা ব্যথা, শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি অসুখ সহজে হতে
পারে না।
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ বিটরুট মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কে
বাড়াতে সাহায্য করে। যাদের মস্তিষ্ক অনেক দুর্বল বা বয়স বাড়ার
কারণে মস্তিষ্কের মধ্যে রক্ত প্রবাহ কমে গেছে ফলে স্মৃতিশক্তি দুর্বল
হয়ে গেছে। তারা নিয়মিত বিটরুট খেতে পারেন। কারণ বিটরুটের মধ্যে নাইট্রিক
অক্সাইড থাকে। এই উপাদানটি মস্তিষ্কের মধ্যে রক্ত চলাচল বহু গুনে বাড়িয়ে
দেয়। যার কারণে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বেড়ে যায় এবং মনোযোগ স্মৃতি ও
নতুন কিছু শেখার বা জানার ক্ষমতা ভালো হয়।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ যাদের কোলন ক্যান্সার এবং পেটের ক্যান্সার
হওয়ার ঝুঁকি আছে। তারা যদি নিয়মিত এই বিট খান, তাহলে তাদের এই
ক্যান্সারে ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে। এই বিটরুটের মধ্যে
বেটালেইনোস নামের একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এই
উপাদানটি শরীরের কোষের ক্ষতিপূরণ করে এবং ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা
করে। যদি এটা নিয়মিত খাওয়া হয় তাহলে এটা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে
দেয়।
হজম শক্তি বাড়ায়ঃ
বিটরুট একটি ফাইবার জাতীয় সবজি। এই সবজির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে
ফাইবার থাকে। এটা পেটকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে
তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। সেই সাথে পেটের গ্যাস থাকলে সেই গ্যাস
ভালো করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। যার কারণে পেটের হজম শক্তি
বাড়ে এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যায়।
ত্বকের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য বাড়াতেঃ রক্ত পরিষ্কার থাকলে ত্বকের
বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যায়। বিট রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য
করে এবং শরীরের খারাপ টক্সিন দূর করে দেয়। যার কারণে ত্বকের
স্বাস্থ্য থাকে ভালো এবং ত্বক হয় ভেতর থেকে উজ্জ্বল। নিয়মিত বিটরুট খেলে
ত্বকে হওয়া বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রণ, দাগ এবং ত্বকের বয়সের ছাপ
দূর হয়।
হাড়কে শক্ত করেঃ বিট হাড়ের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাখে। কারণ বিটরুটের মধ্যে ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ও সিলিকা
প্রচুর পরিমাণে থাকে। এইগুলো মূলত হাড়ের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে এবং
হাড়ের বিভিন্ন অসুখের ঝুঁকি কমায়।
শরীরকে ঠান্ডা রাখেঃ গরমের সময় শরীর জ্বালাপোড়া করে। এ সময় যদি এই
বিট খাওয়া হয় তাহলে বিটে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান শরীরকে ঠান্ডা রাখে
এবং শরীরের ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে।
প্রজনন ক্ষমতা বাড়ায়ঃ বিট রোডের মধ্যে নাইট্রিক অ্যাসিড
অক্সাইড প্রচুর পরিমাণে থাকে যেগুলো একজন পুরুষের যৌন শক্তি বাড়ানোর
পাশাপাশি প্রজনন ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে। যার কারণে সন্তান ধারণ করা অনেক
সহজ হয়।
বিট এর অপকারিতা
বিটরুট সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু এটা যদি পরিমাণ এর
চেয়ে বেশি অর্থাৎ অতিরিক্ত যদি খাওয়া হয়। তাহলে এটা রক্তের চাপ অতিরিক্ত
কমিয়ে দিতে পারে, যেটা স্বাস্থ্যের জন্য বিপদজনক। বিশেষ করে যাদের লো
প্রেসার এর সমস্যা আছে। তাদের এটি অতিরিক্ত খাওয়া মোটেও উচিত নয়। যদি
এটা অতিরিক্ত খাওয়া হয়, তাহলে এটা রক্তের চাপ অতিরিক্ত কমিয়ে দিতে পারে। যার
কারণে মাথা ঘোরা, শরীর দুর্বল হওয়া বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা
দিতে পারে।
যাদের কিডনি রোগ আছে তারা এটি অতিরিক্ত খাবেন না। এটি যদি অতিরিক্ত খান
তাহলে বিটরুট এর মধ্যে ফুট থাকা প্রচুর পরিমাণে অক্সালেট ক্যালসিয়ামের
সাথে মিশে গিয়ে কিডনির পাথর তৈরি করতে পারে। এমনকি কিডনিকে ড্যামেজ ও করে দিতে
পারে। তাই যাদের কিডনিতে পাথর বা কিডনির রোগ আছে। তারা পরিমাণে এটি অল্প খাবেন
এবং এটি খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
অতিরিক্ত যদি খাওয়া হয় তাহলে এটি রক্তের মধ্যে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে
পারে যেটা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিট মিষ্টি জাতীয়
একটি সবজি, এর মধ্যে প্রাকৃতিক চিনে থাকে। তাই যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা
আছে তারা এটি পরিমাণে অল্প খাবেন। তা না হলে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে
পারে।
যদিও এই সমস্যাটি কম তারপরেও অনেকেই আছে যাদের এটি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে শরীরের
মধ্যে এলার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই
এলার্জিজনিত সমস্যা আছে, তাদের এটি খেলে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যেমন শরীর হাত চুলকানি, ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, ত্বকে ফুসকুড়ি বার
হওয়া।
বিটরুট যদি অতিরিক্ত খাওয়া হয় তাহলে এটা গর্ভবতীর মায়ের এবং
পেটে থাকা সন্তানের ক্ষতি করতে পারে। বিটরুট সাধারণত
রক্তচাপ কমিয়ে থাকে। আর গর্ভাবস্থায় যদি এই সবজিটি বেশি খাওয়া
হয়, তাহলে গর্ভবতী মায়ের শরীরের রক্তচাপ অনেকটাই কমে যেতে পারে।
যেটা গর্ভের সন্তানের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই গর্ভাবস্থায় এই এটি অল্প পরিমাণে খেতে হবে।
যারা রক্তচাপ কমানোর জন্য ওষুধ খাচ্ছেন তারা যদি এই ওষুধের
পাশাপাশি বিটরুট অতিরিক্ত খান তাহলে এটা রক্তচাপকে অতিরিক্ত
কমিয়ে দিতে পারে যার কারণে রক্তপাত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই
যারা রক্তচাপ কমানোর ওষুধ, ডায়াবেটিস এর ওষুধ এবং কিডনি রোগের
ওষুধ খান তারা অবশ্যই এটি পরিমাণে অল্প খাবেন অথবা এটি খাওয়ার আগে
ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
বিটরুট স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী একটি সবজি। আপনি যদি সঠিক নিয়ম মেনে
পরিমান অনুযায়ী নিয়মিত এটি খেতে পারেন। তাহলে এটি শরীরের অনেক
রোগ প্রতিরোধ করে। কিন্তু আপনি যদি এটি সঠিক নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত
খান। তাহলে উপকারের বদলে এটি আপনার ক্ষতি করতে পারে। তাই অতিরিক্ত না
খেয়ে পরিমাণ অনুযায়ী বিটরুট খাওয়াই নিরাপদ। আশা করছি উপরোক্ত
আলোচনা থেকে আপনি বিটরুট এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে
পেরেছেন।
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়া যাবে কি
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়া যাবে কি এই সম্পর্কে অনেক গর্ভবতী মায়েরা
আছে যারা জানতে চায়। গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী
মা বিটরুট খেতে পারবে। যদি সে সঠিক নিয়ম এবং পরিমাণ মেনে খেতে
পারে। গর্ভাবস্থায় যদি সঠিক নিয়ম এবং পরিমাণ অনুযায়ী একজন গর্ভবতী
মা বিটরুট খেতে পারে। তাহলে এটা তার স্বাস্থ্যের এবং পেটে থাকা
সন্তানের জন্য অনেক উপকারী হিসেবে কাজ করবে। এটি যদি সে
সঠিক পরিমাণে খেতে পারে।
তাহলে তার শরীরের রক্ত বাড়বে সেই সাথে তার পেটে থাকা সন্তানের
সঠিক বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও আরো অনেক উপকার
পাওয়া যাবে যদি গর্ভাবস্থায় সে পরিমাণ অনুযায়ী বিটরুট খায়। তবে
সতর্ক থাকতে হবে এটি যেন অতিরিক্ত না খাওয়া হয়। অতিরিক্ত খাওয়া হলে
গর্ভবতী মা এবং পেটে থাকা সন্তানের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। আশা করছি
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়া যাবে কিনা এ বিষয়ে আপনি জানতে পেরেছেন।
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা
এখন আমি গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের সাথে
বিস্তারিত আলোচনা করবো। গর্ভাবস্থায় যদি আপনি বিটরুট সঠিক নিয়ম মেনে খেতে
পারেন, তাহলে এটা আপনার এবং আপনার পেটে থাকা সন্তানের অনেক উপকার করবে। তাই
গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মহিলার বিটরুট খাওয়ার সকল উপকারিতা সম্পর্কে জানা
উচিত। চলুন তাহলে আর দেরি না করে গর্ভাবস্থায় এটি খাওয়া হলে কি উপকার
পাওয়া যায় সে সম্পর্কে জেনে নিন।
গর্ভবতীর মায়ের শরীরের রক্তের ঘাটতি থাকলে সেই ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে
এই বিটরুট। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরের রক্তের ঘাটতি দেখা দেওয়া এটা একটি
সাধারণ ব্যাপার। এ সময় একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য বিটরুট অনেক উপকারী হিসেবে
কাজ করে। এটা গর্ভবতী মায়ের শরীরে রক্তশূন্যতা দূর করে শরীরে শক্তি উৎপন্ন
করে।
গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শরীরে অনেক অসুখ বিসুখ এবং শরীরে দুর্বলতা দেখা
দেয়। এ সময় যদি গর্ভবতী মা বিটরুট খায় তাহলে বিটরুটের মধ্যে
থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি এবং জিঙ্ক গর্ভবতী মায়ের
শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। যার কারণে গর্ভবতী মা এবং
পেটে থাকা সন্তানের সহজে কোন অসুখ বিসুখ বা সংক্রমণজনক কোন
রোগ হতে পারে না।
গর্ভাবস্থায় যদি বিটরুট খাওয়া হয় তাহলে এটা গর্ভবতী মায়ের এবং
পেটে থাকার সন্তানের মস্তিষ্ক গঠনে সাহায্য করে। বিটরুট এর
মধ্যে থাকা ফোলেট পেটের শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র সঠিকভাবে গঠন
করতে সাহায্য করে যার কারণে শিশুর জন্মগত কোন ঝুঁকি থাকলে সেই
ঝুঁকি কমিয়ে দিয়ে থাকে।
গর্ভাবস্থায় পেটে গ্যাস হওয়া হজমে সমস্যা হওয়া এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্যের
মত সমস্যা হওয়া একটি সাধারন ব্যাপার। এ সময় মূলত বেশিরভাগ
মেয়েরাই এই সমস্যায় ভোগে থাকেন। তবে এ সমস্যায়
যদি বিটরুট খাওয়া হয়, তাহলে পেটের গ্যাস ভালো
করার পাশাপাশি এটি হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে দেয়। কারণ বিটরুট এর মধ্যে প্রচুর
পরিমাণে ফাইবার থাকে এই ফাইবার মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে এবং হজম শক্তি
বাড়াতে অনেক উপকারী।
বিটরুট গর্ভাবস্থায় লিভারের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য
করে। বিটরুট এর মধ্যে বেটেইন নামের একটি প্রাকৃতিক উপাদান
থাকে এই উপাদানটি গর্ভবতী মহিলার লিভার কে পরিষ্কার রাখে
এবং লিভারের খারাপ পদার্থ বার করে দেয় এমন কি এটি লিভারের
খারাপ চর্বি কমাতেও সাহায্য করে। যার কারণে লিভারের উপর চাপ
কম হয় এবং লিভার থাকে সুস্থ। এটা গর্ভবতী মেয়েদের জন্য অনেক
উপকারী একটি সবজি।
গর্ভাবস্থায় যদি বিটরুট খাওয়া হয়, তাহলে এটা শিশুর শরীরের ইমিউন
সিস্টেমকে অনেক শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। যার কারণে শিশুর
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় এবং সহজে কোন অসুখ
বিসুখের ঝুঁকি থাকে না। এটা গর্ভে থাকা সন্তানের জন্য অনেক
উপকারী।
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের ত্বক অনেক খারাপ হয়ে যায় এবং ত্বকের
মধ্যে দাগ ব্রণ ইত্যাদি বার হয়। এটি গর্ভাবস্থায় হরমোনের
পরিবর্তন বা হরমোন জনিত সমস্যার জন্য হয়ে
থাকে। কিন্তু গর্ভাবস্থায় যদি বিটরুট খাওয়া হয়,
তাহলে এই সবজি গর্ভবতী নারীর রক্তকে পরিষ্কার করতে সাহায্য
করে এবং হরমোনকে স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখে। ফলে ত্বক ভেতর থেকে হয়
উজ্জ্বল এবং ত্বকের ব্রণ ও দাগ দূর হয়ে যায়। এমনকি
এটি গর্ভবতী মায়ের ক্লান্তি যে ভাব এই ভাবটাকে কমাতে
সাহায্য করে।
আপনি যদি গর্ভাবস্থায় এই ফলটি সঠিক নিয়ম এবং পরিমাণ অনুযায়ী খেতে
পারেন তাহলে এটা আপনার এবং আপনার সন্তানের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখবে। তবে
অবশ্যই এটা পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। আর আপনার যদি কোন
স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, রক্তচাপের সমস্যা
থাকে তাহলে অবশ্যই এটি খাওয়ার পূর্বে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
বিটরুট খাওয়ার নিয়ম
উপরে আমি বিটরুট খাওয়ার যে উপকারিতা গুলো আপনাকে বললাম এই
উপকারিতা গুলো যদি আপনি সঠিক পরিমাণে পেতে চান। তাহলে অবশ্যই
আপনাকে বিটরুট খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। কারণ
আপনি যদি বিটরুট খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে না জানেন এবং আপনি যদি এটি
ভুল ভাবে বা অনিয়মে খান। তাহলে এটা আপনার উপকার করার চাইতে ক্ষতি করতে পারে।
তাই সঠিক পরিমাণে উপকার পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে সঠিক নিয়ম জানতে হবে।
সঠিক নিয়ম মেনে যদি আপনি এটি খেতে পারেন, তাহলে অনেক উপকার আপনি
পাবেন। চলুন তাহলে এটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া
যাক। আপনি এটি কাঁচা অবস্থায় সালাদ করে খেতে
পারেন। বিটরুট প্রায় ৫০ থেকে ৬০ নিতে হবে। এরপর এগুলোকে ছোট
ছোট পাতলা করে কেটে এর সাথে লেবু ও লবণ স্বাদমতো মিশিয়ে খেলে ভালো
উপকার পাওয়া যাবে। এছাড়াও আপনি বিটরুট হালকা সেদ্ধ করে খেতে
পারেন।
বেশি সেদ্ধ করে খাবেন না কারণ বেশি সেদ্ধ করলে এটির পুষ্টি
গুনাগুন কমে যেতে পারে। তাই হালকা সিদ্ধ করে খেলে ভালো পুষ্টি
গুনাগুন পাবেন। আপনি চাইলে বিটরুটের জুস বানিয়েও খেতে পারেন।
প্রথমে অল্প পরিমাণে বিটরুট নিতে হবে। এর সাথে আপনি চাইলে আপেল
কমলা অথবা গাজর মিশিয়ে ব্লেন্ড করে জুস বানাতে পারেন।
এতে এই জুসের স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ ভালো পাওয়া যাবে। একটু সতর্ক
থাকতে হবে একেবারেই খালি পেটে যেন এই জুস খাওয়া না হয়।
অনেকের খালি পেটে জুস খেলে মাথা ঘোরা এবং ডায়রিয়ার মত
সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই এটি খালি পেটে বেশি না
খেয়ে প্রতিদিন এক গ্লাস জুস খাওয়া নিরাপদ এর থেকে বেশি
খাওয়া উচিত নয়। আপনি চাইলে এটা দিয়ে সূপ অথবা তরকারি
রান্না করতে পারেন বিটরুট এর তরকারি অনেক সুস্বাদু হয় এবং
এতে ভালো পুষ্টিও পাওয়া যায়। এছাড়াও আপনি এটির আচার
বানিয়েও খেতে পারেন। অথবা দই বা বিভিন্ন ধরনের ফলের সাথে খেতে
পারেন।
এটি খাওয়ার পূর্বে যেসব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত সেগুলো হচ্ছেঃ এটি খেতে
হবে পরিমাণ অনুযায়ী অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। যাদের লো ব্লাড প্রেসার
আছে তারা এটি খাওয়ার পূর্বে সাবধানতা অবলম্বন করবেন। আর
যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে ও কিডনিতে পাথর বা কিডনির রোগ
আছে তারা এটি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। আর গর্ভবতী মা
বা ছোট শিশুদের এটি অল্প পরিমাণে খেতে হবে। আশা করছি এটি
খাওয়ার সঠিক নিয়ম আপনি জানতে পেরেছেন।
বিটরুট জুস এর উপকারিতা
অনেকেই বিটরুট জুস এর উপকারিতা সম্পর্কে জানেনা। তাই এখন আমি এর উপকারিতা
আমার এই আলোচনাতে তুলে ধরবো। চলুন তাহলে বিটের জুসের উপকারিতা কি সেগুলো
জেনে নিই। বিটরুট এর জুস যদি খাওয়া হয় তাহলে এটা শরীরের জন্য বেশি উপকার
করে। এটা তৈরি করতে অনেক সহজ এবং কম সময়ে বানিয়ে নেওয়া যায়।
এমনকি এটা দ্রুত শরীরে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। যার কারণে দ্রুত শরীর
শক্তি পায় এবং শরীর কাজ করে। নিয়মিত যদি এর জুস খাওয়া হয়, তাহলে এটা
রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি থাকলে সেটা কমে যায়।
বিটরুট এর মধ্যে আয়রন ও ফোলেট থাকার কারণে এটা শরীরে রক্ত উৎপন্ন করে। যার
কারণে শরীরের রক্তের ঘাটতি পূরণ হয় এবং শরীরের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
এটা খাওয়ার কারণে শরীর থাকে সতেজ, টাটকা ও শক্তিশালী। এই জুসের সব থেকে
বেশি প্রয়োজন হয় যারা প্রচুর পরিমাণে পরিশ্রম করে তাদের। যাদের হজম শক্তি
দুর্বল এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা আছে। তারা যদি বিটরুট এর জুস নিয়মিত
খাই, তাহলে এটা হজম শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে
এবং ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও এই জুস মস্তিষ্কের স্নায়ু গঠনে সাহায্য করে, যার কারণে মস্তিষ্কের
কার্যক্ষমতা বাড়ে। এর কারণে কাজে মনোযোগ ভালো পাওয়া যায় এবং স্মৃতিশক্তি
বৃদ্ধি হয়। যাদের লিভারের সমস্যা আছে এবং ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য এই
জুস অনেক উপকারী। কারণ এর মধ্যে থাকে ফাইবার যেটা পেটকে অনেকক্ষণ ভরিয়ে
রাখতে সাহায্য করে। যার কারণে অতিরিক্ত খাওয়া কম হয়।
এর মধ্যে বেটেইন থাকার কারণে এটা লিভার কে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এটা
লিভারের ভেতরে থাকা খারাপ চর্বি কমাতে সাহায্য করে। যার কারণে শরীরের ওজন
এবং লিভার দুটোই নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর জুস নিয়মিত খেলে শরীরের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। সেই সাথে এটা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
গর্ভবতী মা এবং পেটের সন্তানের মস্তিষ্ক গঠনে এবং শরীর গঠনে বিটরুট এর জুস
অনেক উপকারী ও কার্যকরী হিসেবে অবদান রাখে।
রাতে বিটরুটের জুস খাওয়া যাবে কি
আপনারা অনেকেই আছেন যারা জানতে চেয়েছিলেন যে রাতে বিটরুটের জুস খাওয়া
যাবে কি এই বিষয়ে। রাতে বিটরুটের জুস খেতে পারলে
ভালো উপকার পাওয়া যায় অর্থাৎ রাতে এর জুস খাওয়া যাবে। কিন্তু
আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে খেতে হবে এবং সতর্ক থাকতে
হবে। যেমন রাতের বেলায় খালি পেটে এর জুস খাওয়া উচিত
নয়। আপনি যদি রাতের বেলায় খান, তাহলে অবশ্যই সেটা খালি পেটে খাবেন
না এবং পরিমাণে অল্প খাবেন।
তা না হলে এটা পেটে গ্যাসের সমস্যা করতে পারে। যার কারণে পেট ফোলা ভাব
পেটে জ্বালাপোড়া এমন কি পেট ভারিভাব হতে পারে। তাই রাতের
বেলায় এটা অল্প পরিমাণে খাওয়া ভালো।আর যাদের লো প্রেসার এর সমস্যা আছে,
তারা এটি পরিমাণে অল্প খাবেন। তা না হলে এটা অতিরিক্ত রক্তচাপকে
কমিয়ে দিতে পারে, যার ফলে জীবনের জন্য বিপদজনক। আশা করছি উপরোক্ত
আলোচনা থেকে আপনি জানতে পেরেছেন রাতে বিটরুটের জুস খাওয়া যাবে
কিনা।
বিট কি কাঁচা খাওয়া যায়
বিট যদি কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায় তাহলে এটা শরীরের জন্য সবথেকে
বেশি উপকারী। কারণ বিটের যে পুষ্টি গুনাগুন থাকে এই
পুষ্টিগুণ গুলো সম্পূর্ণ কাঁচা অবস্থায় এটা থেকে পাওয়া
যায়। অনেকেই এটা সালাদ বানিয়ে খেয়ে থাকে। এটা সিদ্ধ বা
রান্না করার চেয়ে কাঁচা খাওয়া শরীরের জন্য বেশি উপকারী। কারণ রান্না
করলে এর মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো নষ্ট হয়ে যায় বা কমে
যায়।
কিন্তু কাঁচা অবস্থায় খেলে এর পুষ্টি উপাদান গুলো পুরোপুরি এর মধ্যে
থাকে এগুলো নষ্ট হয় না। যার কারণে এটা শরীর ও স্বাস্থ্যের ভালো উপকার
করে। কাঁচা অবস্থায় যদি এটা খাওয়া হয়, তাহলে এটা শরীরের রক্ত
বাড়াতে সাহায্য করে, রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে, হজম শক্তি ভালো করে
এবং ত্বকের সমস্যা থাকলে সে সমস্যাকে ভালো করে ও ত্বককে উজ্জ্বল করে।
বিটরুট কি কিডনির ক্ষতি করে
বিটরুট সাধারণত কিডনির স্বাস্থ্য সহ শরীরের বিভিন্ন রোগ ভালো
করে থাকে। এটা কিডনির ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু এটা
যদি পরিমাণ এর চেয়ে বেশি খাওয়া হয় তাহলে এটা কিডনিতে পাথর তৈরি
করতে পারে। যেটা কিডনির জন্য অনেক ক্ষতিকর। বিটরুটের মধ্যে
অক্সালেট নামের একটি প্রাকৃতিক উপাদান থাকে। এই
উপাদানটি শরীরের মধ্যে ক্যালসিয়ামের সাথে মিশে কিডনিতে
পাথর তৈরি করে।
যদি এটা অতিরিক্ত খাওয়া হয়, তাহলে এই সমস্যা দেখা দিতে
পারে। বিশেষ করে যাদের আগে থেকে কিডনির সমস্যা বা অসুখ
আছে তাদের জন্য অতিরিক্ত বিটরুট খাওয়া কিডনির জন্য
ক্ষতিকর। তাদের বিটরুট না খাওয়াই সবথেকে ভালো ও নিরাপদ।
তবে যাদের কিডনির কোন সমস্যা নাই বা শরীর স্বাস্থ্য সুস্থ থাকে তারা
এটি পরিমাণ মতো খেতে পারেন। পরিমাণ মত খেলে এটা থেকে ভালো উপকার
পাওয়া যায়। আর অতিরিক্ত খেলে কিডনির সমস্যা হবে।
বিটরুট কি প্রতিদিন খাওয়া যায়
একজন সুস্থ মানুষ যদি প্রতিদিন বিটরুট খেতে পারে। তাহলে
এটা তার শরীরের সকল পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে এবং শরীরকে
সুস্থ, সতেজ ও শক্তিশালী করে তোলে। এক কথায় বলা যায় যে
বিটরুট যদি প্রতিদিন খাওয়া হয়, তাহলে এটা স্বাস্থ্যের জন্য
উপকারী। তাই এটি প্রতিদিন সঠিক নিয়ম ও পরিমান
অনুযায়ী খেতে হবে। তা না হলে এটা উপকারের চেয়ে ক্ষতি করবে।
তাই প্রতিদিন অতিরিক্ত না খেয়ে অল্প পরিমাণে খেতে হবে, তাহলে এটি
প্রতিদিন খাওয়া যাবে। আর যাদের শারীরিক সমস্যা আছে যেমন
কিডনির, ডায়াবেটিস এবং রক্তচাপ তারা এটি প্রতিদিন খেতে
পারবেন না। তারা যদি প্রতিদিন এটি খায় তাহলে তাদের সমস্যা হতে
পারে। সব থেকে ভালো হবে এটি খাওয়ার আগে একজন ডাক্তারের পরামর্শ
নিয়ে খাওয়া।
FAQ/বিটরুট সম্পর্কে কিছু আলোচিত প্রশ্ন ও উত্তর
এখন আমি বিটরুট সম্পর্কে সব থেকে আলোচিত
প্রশ্নের উত্তরগুলো আপনাদের জানাবো। তাই দেরি না করে চলুন
সেই আলোচিত প্রশ্নের উত্তরগুলো জেনে আসি।
বিট কাদের খাওয়া উচিত নয়?
উত্তরঃ বিটরুট খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এটি যদি সঠিক নিয়ম
ও পরিমাণ অনুযায়ী খাওয়া হয়। তাহলে এটা শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে
এবং শরীরকে সুস্থ ও শক্তিশালী করে। তবে যাদের কিডনির অসুখ আছে , যাদের
এলার্জির সমস্যা আছে, যাদের লো প্রেসার এবং ডায়াবেটিস আছে তাদের বিট
খাওয়া উচিত নয়।
বিটরুট কি ফল নাকি সবজি?
উত্তরঃ অনেকে বিটরুটকে ফল বলে মনে করে। কিন্তু এটা আসলে
ফল না এটা একটি সবজি। এটাকে ফল ভাবার কারণ হচ্ছে এটা খেতে মিষ্টি
হয় এবং দেখতেও ফলের মত মনে হয়। কিন্তু আসলে এটা ফল নয় এটি একটি
সবজি এটি মাটির নিচে উৎপন্ন হয়। যেমন গাজর ও মুলা মাটির
নিচে জন্মায় তেমনি এই সবজিও মাটির নিচে জন্মায়।
বিটরুট কত টাকা কেজি?
উত্তরঃ আপনি যদি বিটরুট বাজার থেকে ক্রয় করতে চান তাহলে এর
দাম পড়বে প্রতি কেজিতে আশি থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত। আর আপনি যদি এটি
অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয় করেন তাহলে প্রতি কেজিতে হোম ডেলিভারি সহ ২০০
টাকা মতো দাম পড়বে।
বিট খেলে কি ফর্সা হয়?
উত্তরঃ অনেকেই মনে করে বিট খেলে ফর্সা হয়। কিন্তু আসলে তা নয় বিট কখনোই
সরাসরি ফর্সা করতে পারে না তবে গায়ের রং উজ্জ্বল করতে
পারে। বিটরুটের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আয়রন এবং ভিটামিন
সি সহ ফোলেট ও মিনারেলস। শরীরের ভেতরে রক্তকে পরিষ্কার করে এবং
রক্তের মধ্যে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়। যার কারণে ত্বকের সমস্যা
থাকলে সেটা ভালো হয় এবং ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল হয়।
বিট খেলে কি সুগার বাড়ে?
উত্তরঃ বিট ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে কারণ বিটের
মধ্যে প্রাকৃতিক চিনি থাকে অতিরিক্ত যদি এটি খাওয়া হয় তাহলে এটা
রক্তে সুগার বাড়িয়ে দিতে পারে যেটা একজন ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য
ক্ষতিরকর। তাই অতিরিক্ত না খেয়ে অল্প পরিমাণে খেলে বিট
সুগারকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
প্রতিদিন কতটুকু বিটরুট খাওয়া উচিত
আপনারা অনেকেই আছেন যারা জানতে চেয়েছেন যে প্রতিদিন কতটুকু বিটরুট
খাওয়া উচিত। তাই এখন আমি আপনাদেরকে এটি খাওয়ার সঠিক পরিমাণ
বলবো। যাতে করে আপনি এটি প্রতিদিন খেয়ে ভালো উপকার পেতে
পারেন। চলুন তাহলে প্রতিদিন কতটুকু বিটরুট খাওয়া
উচিত সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
সাধারণত প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি বিটরুট
খাওয়া নিরাপদ এবং বিটরুটের জুস খেলে সেটা দুই
গ্লাসের বেশি খাওয়া উচিত নয়। এর থেকে যদি বেশি
পরিমাণে খাওয়া হয়, তাহলে সেটা কিডনিতে পাথর তৈরি করতে
পারে এবং পেটের মধ্যে গ্যাস, পেট ফাঁপা, পেট ব্যথা
করা এমনকি ডায়রিয়া ও হতে পারে।
তাই দিনে একটি থেকে দুইটি বিটরুট খাওয়া উচিত। এই পরিমাণে
যদি প্রতিদিন খাওয়া হয় তাহলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে এবং ক্ষতিও হবে
না। তবে টানা দীর্ঘ মেয়াদে না খাওয়াই ভালো মাঝেমধ্যে গ্যাপ
দিয়ে খাওয়া উচিত। আশা করছি আপনি এই আলোচনা থেকে প্রতিদিন
কতটুকু বিট খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
লেখকের মন্তব্যঃ বিটরুট এর উপকারিতা ও অপকারিতা
বিটরুট এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমি আমার আর্টিকেলের
মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এর পাশাপাশি আমি আমার আর্টিকেলের মধ্যে
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়া যাবে কি, গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার
উপকারিতা এবং বিটরুট খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কেও আলোচনা করেছি। আশা
করছি আমারে আর্টিকেলটি পড়ে আপনি বিটরুটের উপকারিতা এবং এর
ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।
আপনি যদি আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে
থাকেন। তাহলে আমার এই আর্টিকেলটি আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে
শেয়ার করবেন এবং তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন। এছাড়াও আমার
এই আর্টিকেলটি নিয়ে আপনার যদি কোন প্রশ্ন বা
মতামত থাকে অথবা আপনি যদি নতুন কোন বিষয়ে জানতে
চান? তাহলে আমাদের নিচে থাকা কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে
জানাবেন। আমরা চেষ্টা করবো আপনাকে সেই বিষয়ে সঠিক তথ্য
দেওয়ার ধন্যবাদ।
অপরাজিতা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url