গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা জানুন

গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে এখন আমি আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। এর পাশাপাশি চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা, ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও বাচ্চাদের চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করবো।
গর্ভাবস্থায়-চিয়া-সিড-খাওয়ার-নিয়ম
আপনি যদি গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে অবশ্যই আমার এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। চলুন তাহলে আর দেরি না করে চিয়া সিড সম্পর্কিত সকল তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

পেজ সুচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম আপনারা অনেকে আছেন যারা জানতে চেয়েছেন। গর্ভাবস্থায় যদি আপনি চিয়া সিড থেকে ভালো উপকার পেতে চান? তাহলে অবশ্যই আপনাকে সেটা সঠিক নিয়ম ও পরিমাণ অনুযায়ী খেতে হবে। তাহলে গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড থেকে আপনি ভালো উপকার পাবেন। যেমন ধরেন গর্ভকালীন সময়ে একজন মায়ের শরীরের অনেক রকম সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।

এ সময় কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারন সমস্যা হিসেবে দেখা যায়। যেহেতু চিয়া সিডের মধ্যে প্রাকৃতিক ফাইবার প্রচুর পরিমাণে থাকে। সেহেতু এটা যদি গর্ভাবস্থায় সঠিক নিয়ম মেনে খাওয়া যায়। তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে সেটা কমে যায়। এমনকি চিয়া সিডের মধ্যে ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিড, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন আরো অনেক পুষ্টি উপাদান থাকে।
এগুলো গর্ভাবস্থায় খাওয়া হলে পেটে থাকা সন্তানের মস্তিষ্ক গঠন, হাড় ও পেসির গঠন উন্নত করে। গর্ভবতী মায়ের শরীরে রক্তের ঘাটতি ও শরীরের ক্লান্তি থাকলে সেটা দূর করতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় আপনি যদি চিয়া সিড থেকে এসব উপকারিতা ভালোভাবে পেতে চান। তাহলে আপনাকে আগে এটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। 

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

গর্ভাবস্থায় সকাল বেলা খালি পেটে চিয়া সিড খেতে পারলে সব থেকে বেশি উপকার পাওয়া যায়। অনেকে আছে যারা চিয়া সিড শুকনো অবস্থায় খেয়ে থাকে। কিন্তু এটি শুকনো অবস্থায় খাওয়া উচিত নয়। অনেকের এটি শুকনো অবস্থায় খাওয়ার কারণে পেটে গ্যাস এবং হজমের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। যার কারণে পেট ফাঁপা, পেট ব্যথা, পেটের বিভিন্ন সমস্যা হয়।

তাই সকাল বেলায় চিয়া সিড ২৫ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে খাওয়া সব থেকে নিরাপদ ও উপকারী। এছাড়াও এটি আপনি রাতের বেলায় ১ থেকে ২ চামচ চিয়া সিড এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে সেটা সকাল বেলায় খালি পেটে খেতে পারেন। চিয়া সিডের আলাদা কোন স্বাদ থাকেনা। তাই এটি আপনি দই, ওটস এবং সালাদের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।

অথবা এটি আপনি শরবতের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন এতে স্বাদ ভালো পাওয়া যাবে। দিনের সর্বোচ্চ ১ থেকে ২ চামচই যথেষ্ট অতিরিক্ত খেলে সেটা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। এটা যদি প্রথমবার খেয়ে থাকেন, তাহলে অল্প দিয়ে শুরু করা ভালো। যেমন ধরেন প্রথম যদি আপনি খান তাহলে এক চামচ খেতে হবে। এটি খাওয়ার পর খেয়াল করতে হবে।

যদি শরীরের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া অর্থাৎ এলার্জির কোন সমস্যা দেখা দেয় তাহলে এটা খাওয়া বন্ধ করতে হবে। অথবা আগে থেকেই যদি এলার্জির সমস্যা তারপর ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকে। তাহলে অবশ্যই সেটা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত। চিয়া সিড খাওয়ার পর প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত। এক কথায় বলা যায় যে গর্ভাবস্থায় যদি চিয়া সিড সঠিক নিয়ম মেনে খাওয়া হয়।

তাহলে সেটা গর্ভবতী মা এবং পেটে থাকা সন্তানের জন্য অনেক উপকারী হিসেবে কাজ করে। তবে গর্ভাবস্থায় যেহেতু মায়ের শরীর অনেক সেনসিটিভ থাকে। তাই যেকোনো জিনিস খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়ায় সব থেকে নিরাপদ হবে। আশা করছি উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনি গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।

চিয়া সিড কি গর্ভাবস্থায় খাওয়া যায়

চিয়া সিড কি গর্ভাবস্থায় খাওয়া যায় এ বিষয়ে এখন আমি আপনাদেরকে বলবো। গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড যদি সঠিক নিয়ম ও পরিমাণ অনুযায়ী খাওয়া হয়। তাহলে সেটা গর্ভবতী মা এবং পেটে থাকা সন্তানের জন্য অনেক উপকারী হিসেবে কাজ করে। সোজা কথা হচ্ছে গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়া যাবে।

গর্ভাবস্থায় যদি চিয়া সিড খাওয়া হয়। তাহলে সেটা গর্ভবতী মায়ের শরীরে রক্তের ঘাটতি থাকলে রক্তের ঘাটতি পূরণ করে এবং শরীরের বিভিন্ন অসুখ বিসুখ সহ শরীরের ক্লান্তি এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে চিয়া সিড অনেক ভালো কাজ করে। এর মধ্যে থাকা প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মা এবং পেটে থাকা সন্তানের শরীরের গঠনে সাহায্য করে।

এটি পেটে থাকা শিশুর সঠিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই ডাক্তারেরা পরামর্শ দিয়ে থাকে গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার। এটি খাওয়ার পর যদি শরীরে খারাপ কোন প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাহলে সেটা খাওয়া দ্রুত বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর সব থেকে ভালো ও নিরাপদ উপায় হচ্ছে এটি খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া।

চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা

এখন আমি আপনাদের সাথে চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। চিয়া সিড দেখতে ছোট হলেও এর উপকারিতা কিন্তু অনেক। এই ছোট দানাগুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদানে ভরপুর থাকে। বর্তমান সময়ে যারা অনেক স্বাস্থ্য সচেতন তারা এই সুপারফুড টি নিয়মিত খেয়ে থাকে। এটি যদি সঠিক নিয়ম এবং পরিমাণ অনুযায়ী খাওয়া হয়, তাহলে সেটা শরীরের মধ্যে অনেক ভালো একটি প্রভাব ফেলে থাকে।

এটি খাওয়ার কারণে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি থাকলে, সেই পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। যারা প্রচুর পরিমাণে পরিশ্রম করে থাকে তাদের জন্যও এটি অনেক উপকারী। কারণ এটি শরীরের ক্লান্তি দূর করে শরীরকে রাখে সতেজ। এটা খাওয়া শরীরের জন্য অনেক উপকারী হলেও এর কিছু অপকারিতা আছে। চলুন এর উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

চিয়া সিড এর উপকারিতা কি সেগুলো হচ্ছে

  • ওজন কমাতে চিয়া সিড অনেক ভালো কাজ করে। কারণ চিয়া সিড হচ্ছে ফাইবারযুক্ত একটি খাবার। আর এতে ফাইবার থাকার কারণে সেটা পেটকে অনেকক্ষণ ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। যার কারণে খিদা অনেক কম লাগে এবং সারাদিনে খাওয়াও কম হয়। যার ফলে আস্তে আস্তে শরীরের ওজন কমে যায়। যাদের শরীরে অতিরিক্ত চর্বি বা ওজন তারা এটি নিয়মিত খেতে পারেন।
  • চিয়া সিড হার্ট কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কারণ চিয়া সিড এর মধ্যে এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান আছে। যেগুলো রক্তের মধ্যে থাকা খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। যার কারণে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। হার্টের রক্তনালিতে রক্ত চলাচল সক্রিয় রাখে এবং হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
  • চিয়া সিড খাওয়ার পর সেটা হজম হতে সময় লাগে। যার কারণে রক্তের মধ্যে হঠাৎ শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় না। যার ফলে ডায়াবেটিস থাকে নিয়ন্ত্রণে। এক কথায় বলা যায় যে চিয়া সিড নিয়মিত খেলে সেটা ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
  • চিয়া সিড একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ফসফরাস থাকে। যেগুলো শরীরের হাড্ডি ও দাঁত শক্ত করতে সাহায্য করে এবং দাঁত ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
  • চিয়া সিড চুলের এবং ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। চিয়া সিডের মধ্যে প্রাকৃতিক উপাদান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যেটা ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। আর এটা চুলের গোড়াতে করে শক্ত এবং অতিরিক্ত চুল পড়া কমায় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
  • হজম তন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে। এর প্রাকৃতিক উপাদান পেটের মধ্যে হজম প্রক্রিয়াকে ভালো করে এবং পেটের মলকে নরম করে দেয়। যার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে সেটা দূর হয়ে যায় এবং হজম শক্তি অনেক বৃদ্ধি পায়। 
  • চিয়া সিড শরীরের ক্লান্তি দূর করে এবং শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। এটা যদি পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া হয় তাহলে সেটা শরীরের মধ্যে প্রচুর শক্তি বাড়িয়ে দেয় এবং সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। এর কারনে সারাদিনের কাজে ভালো মনোযোগ পাওয়া যায়।
  • চিয়া সিডের মধ্যে ওমেগা থ্রি থাকার কারণে এটা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং মস্তিষ্ককে রাখে ঠান্ডা। যার কারণে যেকোনো কাজে মনোযোগ ভালো পাওয়া যায় এবং স্মৃতিশক্তি ভালো থাকে।
  • চিয়া সিড যদি নিয়মিত খাওয়া হয়। তাহলে সেটা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে দেয়। যার কারণে শরীর সহজে অসুস্থ হয় না যেমন ধরেন সর্দি, কাশি, ঠান্ডা ও জ্বরের মত বিভিন্ন সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
  • চিয়া সিড খেলে সেটা সারাদিন শরীরের শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে। চিয়া সিডের কারণে শরীরের দুর্বলতা দূর হয়ে যায়
  • চিয়া সিড যৌন স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক উপকারী। যাদের যৌন দুর্বলতা আছে তারা যদি এটি নিয়মিত খেতে পারে। তাহলে এর মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক পুষ্টি গুনাগুন গুলো যৌন দুর্বলতাকে দূর করে এবং যৌন শক্তি বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও এটি নিয়মিত খেলে বীর্যের ঘনত্ব গাঢ় করে এবং বীর্যের গুণগত মান উন্নত করে যা প্রজনন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় করে।

চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা

  • চিয়া সিড স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও এটা যদি পরিমাণে অনেক বেশি খাওয়া হয়। তাহলে সেটা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এটি যদি অতিরিক্ত খাওয়া হয়, তাহলে পেট ফাঁপা, পেটে গ্যাস হওয়া, পেট ব্যথা সহ পেটের অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি এটা অতিরিক্ত খেলে ডায়রিয়া হতে পারে।
  • চিয়া সিড অনেকেই আছে যারা শুকনো খেয়ে থাকে। চিয়া সিড শুকনো অবস্থায় খাওয়া মোটে উচিত নয়। কারণ এটি শুকনো অবস্থায় খেলে গলায় আটকে যেতে পারে। যার কারণে শ্বাস রোধ হতে পারে। তাই এটি সব সময় ভিজিয়ে খাওয়াই ভালো।
  • চিয়া সিড রক্তকে পাতলা করতে সাহায্য করে। তাই যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান তারা যদি এই ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি চিয়া সিড বেশি পরিমাণে খান তাহলে সেটা অতিরিক্ত রক্তকে পাতলা করে দিতে পারে যেটা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খাচ্ছেন তাদের চিয়া সিড খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।
  • অনেকে আছে যাদের চিয়া সিড খাওয়ার পর শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় অর্থাৎ এলার্জির সমস্যা তৈরি হয়। যার কারণে শরীরে ফুসকুড়ি, ত্বকে চুলকানি, শ্বাসকষ্ট এবং বমি বমি ভাব হতে পারে। যদি এটি খাওয়ার পর এই সব লক্ষণ দেখা যায়। তাহলে সেটা দ্রুত খাওয়া বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • চিয়া সিড রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে এটি যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের জন্য অনেক উপকারী। তবে যাদের নিম্ন রক্তচাপ তারা যদি এটি বেশি খায় তাহলে তাদের সমস্যা হতে পারে। যে মন মাথা ঘোরা বমি বমি ভাব, শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া সহ আরো অনেক সমস্যা।
  • চিয়া সিড যদি প্রচুর পরিমাণে খাওয়া হয়। তাহলে সেটা ওজনকে স্বাভাবিক ওজনের থেকে অনেক কমিয়ে দিতে পারে। যেটা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
  • চিয়া সিড যদি পরিমাণে অনেক বেশি খাওয়া হয় এবং এটা যদি দীর্ঘ সময় ধরে খাওয়া হয় তাহলে প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই এটি দীর্ঘ মেয়াদে না খেয়ে পরিমাণ অনুযায়ী মাঝেমধ্যে খাওয়া উচিত। তা না হলে সেটা ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • চিয়া সিড যদি অতিরিক্ত খাওয়া হয়। তাহলে সেটা রক্তের মধ্যে শর্করার মাত্রা অনেক কমিয়ে দিতে পারে। যেটা স্বাস্থ্যের অনেক বড় ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
  • চিয়া সিড যদি বেশি খাওয়া হয় তাহলে সেটা শরীরের মধ্যে পানির ঘাটতি তৈরি করতে পারে। যার কারণে শরীরে পানির শূন্যতা হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। তাই চিয়া সিড খাওয়ার পর পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে হবে। তা না হলে পেটের অনেক সমস্যা হবে হজম শক্তি কমে যাবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিবে।
চিয়া সিড আপনি যদি সঠিক নিয়ম ও পরিমাণে খেতে পারেন। তাহলে সেটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে আপনি যদি এটা অনিয়ম এবং পরিমাণে অতিরিক্ত খান। তাহলে সেটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই উচিত হবে এটি সঠিক নিয়ম ও পরিমাণে খাওয়া।

যাদের ডায়াবেটিস উচ্চ রক্তচাপ বা নিম্ন রক্তচাপ এবং এলার্জি জাতীয় সমস্যা আছে। তারা এটি খাওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। আশা করছি উক্ত আলোচনা থেকে আপনি চিয়া সিডের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

চিয়া সিড খেলে কি এলার্জি হয়

আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন চিয়া সিড খেলে কি এলার্জি হয়। জি হাঁ চিয়া সিড খেলে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই যে কোন বীজ জাতীয় খাবারের এলার্জি আছে। তাদের চিয়া সিড খেলে এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এটি খাওয়ার পর যদি ত্বকে চুলকানি, ত্বকে জ্বালাপোড়া, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, চোখ মুখ ফুলে যাওয়া, বমি বমি ভাব, পেট ব্যথা, এমনকি পাতলা পায়খানা যদি দেখা দেয়। তাহলে বুঝে নিতে হবে যে এটা এলার্জি জনিত সমস্যা। আর এই সমস্যা যদি দেখা দেয় তাহলে এটা খাওয়া বন্ধ করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। আশা করছি উক্ত আলোচনা থেকে আপনি চিয়া সিড খেলে কি এলার্জি হয় এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

FAQ/গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

এখন আমি গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড সম্পর্কিত কিছু আলোচিত প্রশ্নের উত্তর আপনাদেরকে দেবো। চলুন তাহলে সেই আলোচিত প্রশ্নের উত্তরগুলো জেনে নেওয়া যাক।

গর্ভাবস্থার আগে কি চিয়া বীজ খাওয়া উচিত?
  • উত্তরঃ আপনারা জানতে চেয়েছেন যে গর্ভাবস্থার আগে কি চিয়া বীজ খাওয়া উচিত কিনা। গর্ভাবস্থার আগে চিয়া বীজ খাওয়া উচিত। তবে সেটা আপনাকে সঠিক নিয়ম ও পরিমাণ অনুযায়ী খেতে হবে। তাহলে এর থেকে আপনি সঠিক উপকার পাবেন। আপনার যদি কোন অসুখ না থাকে এবং বীজ জাতীয় খাবারে আপনার যদি এলার্জি না থাকে। তাহলে এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হতে পারে।
চিয়া সিড কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে?
  • উত্তরঃ আপনাদের অনেকেরই প্রশ্ন যে চিয়া সিড কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে? চিয়া সিড সাধারণত আপনি ২০ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে খেতে পারবেন। তবে সবথেকে ভালো হয় চিয়া সিড যদি আপনি রাতের বেলায় এক থেকে দুই চামচ এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে সেটাকে সারারাত রেখে সকাল বেলায় উঠে খাওয়া। এটা সবথেকে উপকারী হিসেবে কাজ করে শরীরের জন্য।
কাদের চিয়া সিড খাওয়া উচিত না?
  • উত্তরঃ চিয়া সিড মূলত অনেক উপকারী খাবার। এটা যদি সঠিক নিয়ম মেনে খাওয়া হয়। তাহলে সেটা শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। তবে এটি যাদের বিশেষ কোনো অসুখ আছে তাদের খাওয়া উচিত না। যেমন যাদের বীজ জাতীয় খাবারের এলার্জি আছে, যাদের ডায়াবেটিস আছে, যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খাচ্ছেন, যারা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাচ্ছেন এবং নিম্ন রক্তচাপের ওষুধ খাচ্ছেন এবং ছোট বাচ্চা যাদের পাঁচ বছরের নিচে বয়স তাদের এটি খাওয়া উচিত না।
চিয়া সিড খাওয়ার কতক্ষণ পর খাবার খেতে হবে?
  • উত্তর চিয়া সিড খাওয়ার কতক্ষণ পর খাবার খেতে হবে এ বিষয়ে কোনো সময়সীমা উল্লেখ করা নাই। তবে এটি থেকে আপনি যদি সঠিক উপকার পেতে চান তাহলে চিয়া সিড খাওয়ার ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পর খাবার খাওয়া উচিত।
চিয়া সিড খেলে কি ওজন বাড়ে নাকি কমে?
  • উত্তরঃ চিয়া সিড মূলত আপনার খাওয়ার উপর নির্ভর করে ওজন বাড়ে এবং কমে। চিয়া সিড লো ক্যালোরি যুক্ত একটি খাবার। এটা ওজন কমাতে অনেক কার্যকরী। তবে আপনি যদি এটা অতিরিক্ত খান সেক্ষেত্রে শরীরে ক্যালরি বেশি জমে যেতে পারে যার কারণে ওজন বেড়ে যেতে পারে। আপনি যদি এটা সঠিক নিয়ম ও পরিমানে খেতে পারেন। তাহলে সেটা আপনার ওজন কমাবে আর যদি বেশি খান তাহলে সেটা আপনার ওজন বাড়াবে।

গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা

এখন আমি আপনাদের সাথে গর্ভাবস্থার চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা কি পাওয়া যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। গর্ভাবস্থায় যদি চিয়া সিড সঠিক নিয়ম মেনে খাওয়া যায়, তাহলে সেটা মা এবং পেটে থাকা সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হিসেবে কাজ করবে। গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শরীর অনেক দুর্বল থাকে এবং ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়ে।

এ সময় অনেক গর্ভবতী মায়ের শরীরে রক্তের ঘাটতি দেখা যায়, সেই সাথে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যাও হয়ে থাকে। তাই এই সময় যদি নিয়ম করে চিয়া সিড খাওয়া হয়, তাহলে গর্ভবতী মায়ের শরীরের মধ্যে থাকা পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে এবং শিশুর সঠিক বিকাশ হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চলুন গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খেলে কি উপকার পাওয়া যায় সে বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।
  • চিয়া সিডের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড থাকে। গর্ভাবস্থায় যদি নিয়ম মেনে চিয়া সিড খাওয়া যায় তাহলে সেটাতে থাকা ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিড গর্ভে থাকা সন্তানের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ু কোষের উন্নতি করতে সাহায্য করে।
  • গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের শরীরে রক্তের ঘাটতি দেখা দেয়। এ সময় যদি চিয়া সীড খাওয়া হয় তাহলে চিয়া সিডের মধ্যে থাকা আয়রন শরীরের মধ্যে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে যেটা শরীরের রক্তের ঘাটতি পূরণ করে দেয়। গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের জন্য চিয়া সিড অনেক উপকারী।
  • গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয় এটা একটি সাধারণ ব্যাপার। এ সময় চিয়া সিড যদি পরিমাণ অনুযায়ী খাওয়া হয়, তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যায়। কারণ চিয়া সিডের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক ফাইবার থাকে যে ফাইবার পেটের মধ্যে মলকে নরম করতে সাহায্য করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে ভালো করে ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে সেটা দূর হয়ে যায়। 
  • চিয়া সিড এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায় যেটা সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে এবং শরীরের শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় যদি এটি খাওয়া হয় তাহলে সেটা গর্ভবতী মায়ের এবং পেটের সন্তানের পেশী গঠন করতে সাহায্য করে। এটা গর্ভবতী মায়ের মনকে চাঙ্গা করে রাখতে সাহায্য করে।
  • একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে যে চিয়া সিডের মধ্যে দুধের থেকেও বেশি ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। অর্থাৎ চিয়া সিড এর মধ্যে ক্যালসিয়াম ভালো পরিমাণে থাকে এটা গর্ভাবস্থায় খাওয়া হলে পেটের সন্তানের হাড়ের ও দাঁতের সঠিক গঠন করতে সাহায্য করে এবং মায়েরও হাড়ের ও দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • গর্ভবতী মহিলার যদি ডায়াবেটিস থেকে থাকে তাহলে এ সময় চিয়া সিড তার জন্য অনেক উপকারী হতে পারে। কারণ চিয়া সিড খাওয়ার পর এটা রক্তের মধ্যে থাকা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে বা কমাতে সাহায্য করে। যার কারণে ডায়াবেটিস থাকে নিয়ন্ত্রণে। তাই বলা যায় গর্ভবতী মহিলার জন্য চিয়া সিড অনেক উপকারী।
  • গর্ভ অবস্থায় যদি চিয়া সিট খাওয়া হয় তাহলে সেটা শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে কারণ চিয়া সিড খাওয়া হলে সেটা পেটের মধ্যে পানি শোষণ করে এবং জেলির মতন আকার ধারণ করে যেটা অনেকক্ষণ শরীরের মধ্যে পানি ধরে রাখে এবং শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে।
  • গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের ঘুমের অনেক সমস্যা হয় এবং মানসিক অনেক টেনশন আসে। এ সময় যদি চিয়া সিড খাওয়া হয় তাহলে এর মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান গুলো মস্তিষ্ককে শান্ত করে এবং ঘুমের মান ভালো করে যার কারণে মানসিক যে চাপ বা টেনশন থাকে সেটা দূর হয়ে যায়।
  • গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শরীরের ওজন অনেক বেড়ে যায় এ সময় ওজনকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে চিয়া সিড অনেক উপকারী। কারণ চিয়া সিড ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি যদি নিয়ম করে গর্ভাবস্থায় খাওয়া হয় তাহলে গর্ভবতী মায়ের শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমা হতে পারে না এবং অতিরিক্ত চর্বি থাকলে সেগুলো আস্তে আস্তে কমে যেতে শুরু করে।
  • গর্ভাবস্থায় যদি চিয়া সিড খাওয়া হয় তাহলে চিয়া সিটে থাকা প্রাকৃতিক কিছু উপাদান শরীরের মধ্যে থাকা খারাপ টক্সিন বার করে দিতে সাহায্য করে এবং শরীরকে রাখে সুস্থ ও সতেজ।
  • গর্ভবতী কালীন সময়ে একজন মায়ের সর্দি, কাশি, ঠান্ডা ও জ্বর এগুলা অনেক হয়। এ সময় তাদের শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমে যায়। যদি চিয়া সিড গর্ভকালীন সময়ে নিয়ম করে খাওয়া হয়। তাহলে গর্ভবতী মায়ের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে জ্বর, ঠান্ডা, সর্দি ও কাশি এই সকল ভাইরাস জনিত সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
গর্ভকালীন সময়ে চিয়া সিড খাওয়া অনেক উপকারী। তবে এটা খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পর খেতে হবে। তা না হলে এটা নিরাপদ নাও হতে পারে। আপনি যদি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সঠিক নিয়ম ও পরিমান অনুযায়ী এটি গর্ভকালীন সময় খেতে পারেন।

তাহলে এটা গর্ববতী মায়ের এবং পেটে থাকা সন্তানের স্বাস্থ্যের অনেক উন্নতি সাধন করে। আশা করছি উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনি গর্ভকালীন সময়ে চিয়া সিড খাওয়া হলে কি উপকার পাওয়া যায় সে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা

উপরে আমরা আলোচনা করলাম গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খেলে কি উপকার পাওয়া যায় সে সম্পর্কে। এখন আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা গুলো নিয়ে। আপনারা অনেকেই জানেন যে গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়া অনেক উপকারী। তবে আপনারা হয়তো জানেন না যে এটির উপকারিতা থাকার পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও আছে।
তবে এ অপকারিতা গুলো মূলত তখনই হবে, যখন আপনি এটা অনিয়ম করে খাবেন। অর্থাৎ এটা যখন আমি আপনি সঠিক নিয়মে না খেয়ে অতিরিক্ত এবং ভুল পদ্ধতিতে খাবেন তখনই এই অপকারিতা গুলো দেখা দিবে। চলুন এটি যদি গর্ভাবস্থায় ভুল ভাবে খাওয়া হয় তাহলে কি অপকারিতা হতে পারে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
  • গর্ভাবস্থায় এটি যদি অতিরিক্ত খাওয়া হয় তাহলে সেটা গর্ভবতী মায়ের পেট ফাঁপা পেটে গ্যাস হওয়া বদহজমের মত সমস্যা হওয়া হজম শক্তি কমে যাওয়া এবং পাতলা পায়খানার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এটি অতিরিক্ত না খেয়ে পরিমাণ অনুযায়ী খেতে হবে।
  • অনেকেই আছে যারা এটি শুকনো অবস্থায় খেয়ে থাকে। তবে এটি শুকনো অবস্থায় খাওয়া উচিত নয় কারণ গর্ভাবস্থায় যদি এটি শুকনো অবস্থায় খাওয়া হয়। তাহলে সেটা গর্ভবতী মায়ের গলাতে লেগে যেতে পারে। আর গলায় লেগে গেলে তখন শ্বাস রোদের মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে। যেটা মা এবং শিশুর জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
  • গর্ভবতী মা যদি রক্ত পাতলা করার ওষুধ খেয়ে থাকেন। এ সময় যদি চিয়া সিডও খাওয়া হয় তাহলে সেটা গর্ভবতী মায়ের জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কারণ দুইটা একসাথে খেলে অতিরিক্ত রক্ত পাতলা হয়ে যেতে পারে এবং সন্তান জন্মদানের সময় অতিরিক্ত রক্ত ঝরার সম্ভাবনা থাকে। যেটা তাদের জীবনের জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
  • গর্ভবতী মায়ের যদি আগে থেকেই এলার্জির সমস্যা থাকে। তাহলে এটি এড়িয়ে চলা উচিত অথবা প্রথমে অল্প পরিমাণে খেয়ে দেখা উচিত। যদি এলার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তাহলে দ্রুত সেটা খাওয়া বন্ধ করতে হবে। অথবা সবথেকে নিরাপদ উপায় হচ্ছে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।
  • চিয়া সিড ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই গর্ভবতী মহিলার যদি আগে থেকেই ডায়াবেটিস ও রক্ত চাপ কম হয়ে থাকে অথবা রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের ওষুধ চলে। সে অবস্থায় যদি চিয়া সিড খাওয়া হয়। তাহলে সেটা অতিরিক্ত ডায়াবেটিস কমিয়ে দিতে পারে এবং রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে। যেটা গর্ভবতী মায়ের এবং পেটে থাকা সন্তানের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে।
উপরে আমি যে অপকারিতা গুলো আলোচনা করলাম মনে রাখবেন এই অপকারিতা গুলো তখনই হবে যখন আপনি এটা অনিয়মে খাবেন। তাই এটি গর্ভাবস্থায় খাবার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবেন তাহলে গর্ভবতী মা এবং পেটে থাকা সন্তান দুজনেই সুস্থ থাকবেন এবং অপকারিতা গুলো থেকে বাঁচবেন।

সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা

চিয়া সিড স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী একটি খাবার। এটা থেকে উপকার পেতে হলে আপনাকে কিছু নিয়ম ফলো করা লাগবে। যেমন ধরেন এটা থেকে যদি আপনি বেশি উপকারীতা পেতে চান। তাহলে সেটা আপনাকে সকাল বেলায় খালি পেটে খেতে হবে। কারণ খালি পেটে যদি এটা খাওয়া হয়, তাহলে সেটা শরীরে ভালো কাজ করে এবং শরীরের ক্লান্তি দূর করে।

এটি সারাদিন শরীরের শক্তি ধরে রাখে ও কাজে মনোযোগ বাড়ায়। চলুন সকালবেলায় যদি খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়া হয়। তাহলে কি উপকারিতা পাওয়া যায় সেগুলো জেনে নিই। সকালবেলায় খালি পেটে যদি চিয়া সিড খাওয়া হয় তাহলে সেটা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। যার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে দূর হয়ে যায় এমনকি গ্যাসের সমস্যা থাকলেও সেটা ভালো হয়ে যায়।

যাদের অতিরিক্ত ওজন তারা যদি সকালবেলায় খালি পেটে এটি খায়। তাহলে তাদের ওজন আস্তে আস্তে কম কমে যায় এবং ওজন থাকে নিয়ন্ত্রণে। সকাল বেলায় খালি পেটে যদি খাওয়া হয়, তাহলে সেটা শরীর থেকে খারাপ পদার্থ বার করে দেয় যার কারণে শরীর থাকে সুস্থ ও সতেজ। যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে তারা তাদের ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য সকালবেলায় খালি পেটে চিয়া সিড খেতে পারেন। এতে ডায়াবেটিস থাকবে একদম নিয়ন্ত্রণে।

এছাড়াও এটি যদি সকালবেলায় খালি পেটে খাওয়া হয়। তাহলে এটা শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে, শরীরে শক্তি বৃদ্ধি ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে কারণ এর মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম থাকে। যেটা শরীরে শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং কাজে মনোযোগ বাড়ায়। শরীরের ক্লান্তি দূর করে, ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

যাদের ত্বকের সমস্যা আছে এবং অতিরিক্ত চুল পড়ে তারা যদি নিয়মিত এটি খেতে পারেন। তাহলে ত্বক ভিতর থেকে ভালো হবে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে। সেই সাথে চুলের গোড়া হবে মজবুত এবং চুল অতিরিক্ত পড়া কমে যাবে এবং নতুন চুল গজাতে শুরু করবে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতেও এটি বেশ কার্যকরী।

এক কথায় বলা যায় যে আপনি যদি সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খেতে পারেন। তাহলে সেটা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। অন্যান্য সময়ে খেয়ে যে উপকারটা পাওয়া যায় না সকালবেলায় খালি পেটে যদি খাওয়া হয় তার থেকে বেশি গুণে উপকার পাওয়া যায়। তবে সেটা অবশ্যই আপনাকে সঠিক নিয়ম ও পরিমাণ অনুযায়ী ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে। তাহলে এটা থেকে আপনি ভালো উপকার পাবেন।

ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

আপনারা অনেকে আছেন যারা ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী একটি খাবার এই চিয়া সিড। এটা যদি সঠিক নিয়ম মেনে পরিমান অনুযায়ী খাওয়া হয়, তাহলে সেটা শরীরের অনেক উপকার করে থাকে। এমনকি এটা শরীরের ওজন কমাতেও সাহায্য করে, যদি সেটা আপনি কিছু নিয়ম ফলো করে খান।

আপনি যদি ওজন কমানোর জন্য চিয়া সিড খেতে চান, তাহলে আপনাকে এটা সকালবেলায় খালি পেটে খেতে হবে। কীভাবে খাবেন চলুন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। এটা আপনি রাতের বেলায় এক থেকে দুই চামচ এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে সারা রাতের জন্য রেখে দিতে পারেন। সেই ভেজানো চিয়া সিড সকালবেলায় উঠে সেটাতে দুই চামচ লেবুর রস তার সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খালি পেটে অথবা খাবারের আধাঘন্টা আগে খেতে পারেন।

আপনি যদি এ সময় এটি খেতে পারেন খালি পেটে তাহলে সেটা আপনার পেটকে অনেকক্ষণ ভরিয়ে রাখবে এবং খিদা কম লাগবে। যার কারণে অতিরিক্ত খাওয়া কম হবে এবং আস্তে আস্তে আপনার শরীর থেকে চর্বি কমতে থাকবে। কারণ চিয়া সিডের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক ফাইবার থাকে। এই ফাইবার মূলত পেটকে ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। এটা কম ক্যালোরিযুক্ত একটি খাবার তাই অতিরিক্ত শরীরের চর্বি হওয়ারও সম্ভাবনা কম।

আপনি সকালবেলা ছাড়াও এটা রাতের বেলাতে ঘুমানোর আগে খেতে পারেন। আপনি এটা রাতের বেলায় এক গ্লাস দুধের সাথে অথবা গরম কুসুম পানির সাথে এক থেকে দুই চামচ চিয়া সিড মিশিয়ে আধা ঘন্টা রাখার পর সেটা খেয়ে নিতে পারেন। দিনে সর্বোচ্চ ১ থেকে ২ চামচ খাওয়া উচিত। এর থেকে বেশি খেলে সেটা শরীরের ওজন কমানোর চেয়ে বাড়িয়ে দিতে পারে। আপনি এটা লেবু ছাড়াও দই এর সাথে, ওটস এর সাথে অথবা সালাদের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।

এটা আপনি দুপুর বেলাও খাওয়ার আধা ঘন্টা আগে খেতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এটা যেন অতিরিক্ত না খাওয়া হয় এবং পরিমাণে খাওয়া হয়। আর যাদের আগে থেকেই ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে এবং উচ্চ রক্তচাপ ও নিম্ন রক্তচাপের ওষুধ যারা খায় এবং যেসব মায়েরা বুকের দুধ তাদের সন্তানকে খাওয়াই। তাদের এটি খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত। আশা করছি চিয়া সিড ওজন কমাতে কিভাবে খাবেন সে বিষয়ে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।

চিয়া সিড খাওয়ার পরিমাণ

আপনি যদি আমার উপরের আলোচনা গুলো ভালোভাবে পড়ে থাকেন। তাহলে এতখন আপনার চিয়া সিড খাওয়ার পরিমাণ সম্পর্কে জানা হয়ে গেছে। তার পরেও আমি আপনাদেরকে আর একটু স্পষ্ট ভাবে এখন চিয়া সিড খাওয়ার পরিমাণ সম্পর্কে বলবো। আপনি যদি চিয়া সিড থেকে ভালো উপকার পেতে চান?

তাহলে সেটা অবশ্যই আপনাকে সঠিক পরিমাণ অনুযায়ী খেতে হবে। আর এই সঠিক পরিমাণ অনেকেই আছে যারা জানেনা। আর এই না জানার কারণে অনেকেই এটি ভুল ভাবে খায় এবং ক্ষতির সম্মুখীন হয়। চলুন তাহলে এটি খাওয়ার সঠিক পরিমাণ কি সেটা নিয়ে আলোচনা করা যাক।

আপনি যদি আপনার স্বাস্থ্যের উপকারের জন্য এটি খেতে চান। তাহলে এটি দিনে ১ চামচ খেলেই যথেষ্ট। আর আপনি যদি এটা ওজন কমানোর জন্য খেতে চান। সেক্ষেত্রে এটা ১ থেকে ২ চামচ দিনে ভাগ করে নিতে পারে। যেমন ধরেন সকালে এক চামচ খেলেন আর রাতে এক চামচ খেলেন। দিনে সর্বোচ্চ এক থেকে দুই চামচ যেটার পরিমাণ দাঁড়াই প্রায় ২০ গ্রাম।

দিনে ২০ গ্রামের বেশি চিয়া সিড খাওয়া উচিত নয়। যদি এটা এই পরিমাণের থেকে বেশি খাওয়া হয়, তাহলে সেটা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। যেমন পেট ফাঁপা, পেটে গ্যাস তৈরি হওয়া, পেটে বদহজম হওয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দেওয়া।

এছাড়াও আরো অনেক সমস্যা হতে পারে। যারা গর্ভবতী মহিলা এবং ছোট যারা বাচ্চা তাদের দিনে এক থেকে দুই চামচ খাওয়াই নিরাপদ। তবে সেটা খেতে হবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গর্ভবতী মা এবং ছোট বাচ্চাদের খাওয়া এটি উচিত নয়।

বাচ্চাদের চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

এখন আমি আপনাদের সাথে বাচ্চাদের চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করবো। সাধারণত ১ থেকে ৫ বছরের নিচে বাচ্চাদের চিয়া সিড না খাওয়াই ভালো। তারপরেও এটি বাচ্চাদের খাওয়ানো যেতে পারে যদি কিছু নিয়ম মেনে এটি খাওয়ানো যায়।

যে বাচ্চাদের দুই থেকে পাঁচ বছর বয়স। সে বাচ্চাদেরকে আপনি এক চামচ চিয়া সিড চার ভাগ করে এক ভাগ এক গ্লাস পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে সেটাকে ভিজিয়ে রাখতে হবে অন্তত ৩০ মিনিট। যখন ভেজানো চিয়া সিড ফুলে জেলির মত নরম হয়ে যাবে। তখন সেটা বাচ্চাদেরকে খাওয়াতে হবে।

বাচ্চাদেরকে আপনি এই ভেজানো চিয়া সিড দইয়ের সাথে অথবা দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। এছাড়াও আপনি এটা বিভিন্ন পায়েস অথবা মিষ্টি জাতীয় কোন খাবারের সাথে মিক্স করে খাওয়াতে পারেন। খেয়াল রাখতে হবে চিয়া সিড যেন ছোট বাচ্চাদেরকে শুকনো অবস্থায় খেতে না দেওয়া হয়।

এতে ছোট বাচ্চাদের গলাতে আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটি খাওয়ার পর যদি ছোট বাচ্চাদের পেটে গ্যাস হয় বা বমি বমি ভাব অথবা এলার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাহলে দ্রুত এটা খাওয়া বন্ধ করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ছোট বাচ্চাদের খাওয়ানোর সময় অবশ্যই এটি আগে থেকে ভালোভাবে ভিজিয়ে খাওয়াতে হবে। এটি খাওয়ানোর পর ছোট বাচ্চাদের বেশি বেশি পানি খাওয়াতে হবে।আশা করছি উক্ত আলোচনা থেকে বাচ্চাদের চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনি ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।

চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ

আপনারা অনেকেই আছেন যারা চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন না। এবং অনেকেই আছেন যারা জানতে চেয়েছেন বা জানতে চান যে চিয়া সিডের মধ্যে কি কি পুষ্টিগুণ আছে সে সম্পর্কে। নিচে আমি টেবিল আকারে চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ গুলো আপনাদের সাথে আলোচনা করলাম। চলুন সে পুষ্টিগুণ গুলো দেখে নেওয়া যাক।
    পুষ্টি উপাদানের নাম পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ পুষ্টি উপাদানের কাজ
    এন্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে থাকে এটা ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে
    ক্যালরি ৫০ থেকে ৬০ ক্যালরি শরীরের শক্তি উৎপন্ন করে
    ফ্যাট ৪.৫ গ্রাম এটা হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়
    ওমেগা৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ২.৪ গ্রাম এটা মস্তিষ্ক হার্ট ও ত্বকের জন্য অনেক ভালো
    প্রোটিন ২ গ্রাম এটা শরীরের পেশি গঠন করতে সাহায্য করে
    ফাইবার ৫ গ্রাম হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
    ক্যালসিয়াম ৭৭ মিলিগ্রাম এটার দাঁতের ও হাড়ের গঠন ভালো করে এবং মজবুত করে
    কার্বোহাইড্রেট ৬ গ্রাম এটা ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে
    ফসফরাস ৯০ মিলিগ্রাম কোষের শক্তি উৎপাদন করতে সাহায্য করে
    জিংক ০.৫ মিলিগ্রাম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে
    আইরন ১ মিলিগ্রাম শরীরের মধ্যে রক্তের ঘাটতি পূরণ করে
    পানি ১১ থেকে ১২ গুণ পেটকে ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে
    ম্যাগনেসিয়াম ৪০ মিলিগ্রাম পেশি ও নার্ভের ফাংশন ভালো রাখে

    FAQ/ চিয়া সিড সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

    এখন আমি আপনাদেরকে চিয়া সিড সম্পর্কিত আলোচিত কিছু প্রশ্নের উত্তর দিবো। চলুন আলোচিত সেই প্রশ্নের উত্তরগুলো জেনে নেওয়া যাক।

    চিয়া বীজের সাথে লেবু পানি খেলে কি ওজন কমে?
    • উত্তরঃ চিয়া বীজ ওজন কমানোর জন্য অনেক কার্যকরী একটি উপাদান। অনেকেই এটা ওজন কমানোর জন্য ব্যবহার করে থাকে। চিয়া বীজের নিজের কোন স্বাদ থাকেনা, তাই এটি অনেকেই অন্যান্য সব খাবারের সাথে মিক্স করে খায়। ওজন কমানোর জন্য এটি সবচেয়ে বেশি কাজ করে যদি আপনি সেটা সকালবেলায় চিয়া বীজের সাথে লেবু মিশিয়ে খেতে পারেন। চিয়া সিদের সাথে যদি লেবু পানি মিক্সরে খাওয়া হয় তাহলে সেটা ওজন দ্রুত কমাতে সাহায্য করে।
    ওজন কমাতে দিনে কতবার চিয়া বীজ পান করা উচিত?
    • উত্তরঃ চিয়া সীড ওজন কমানোর জন্য অনেক উপকারী একটি উপাদান। তবে এটি অতিরিক্ত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এটি দিনে সর্বোচ্চ ১ থেকে ২ চামচ চিয়া সিড খাওয়া উচিত যেটার পরিমাণ প্রায় ২০ গ্রাম মত হয় এটা আপনি সর্বোচ্চ দিনে দুই বেলা সকালে এক চামচ এবং রাতে এক চামচ খেতে পারেন।
    চিয়া বীজ লেবু ও মধু খাওয়া যাবে কি?
    • উত্তরঃ অনেকেই প্রশ্ন করেছেন যে চিয়া বীজ লেবু ও মধু খাওয়া যাবে কিনা। তাদেরকে বলি যে হ্যাঁ এই তিনটি উপাদান একসাথে মিক্স করে খাওয়া যায়। এটি যদি একসাথে মিক্স করে খাওয়া হয় তাহলে সেটা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সহ আরো অনেক উপকার করে থাকে। বিশেষ করে এটি যারা দ্রুত শরীরের ওজন কমাতে চান বা ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান। তাদের জন্য সবথেকে ভালো একটি মিশ্রণ হতে পারে।
    চিয়া সিড খেলে কি পেটের চর্বি কমে?
    • উত্তরঃ অনেকে প্রশ্ন করেছেন যে চিয়া সিড খেলে কি পেটের চর্বি কমে। তাদের প্রশ্নের উত্তরে আমি বলবো চিয়া সিড ফাইবার যুক্ত একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এটি যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ করে তাদের জন্য অনেক কার্যকারী। কারণ চিয়া সিড খাওয়া হলে সেটা অনেকক্ষণ পেটকে ভরিয়ে রাখে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দেয়। যার কারণে অতিরিক্ত খাওয়া হয়না এবং শরীরে থাকা অতিরিক্ত চর্বি আস্তে আস্তে কমে যেতে শুরু করে। তাই বলা যায় যে চিয়া সিড খেলে পেটের চর্বি কমে।
    চিয়া সিড আর তোকমা কি একই?
    • উত্তরঃ অনেকেই আছে যারা মনে করে যে চিয়া সিড আর তোকমা দুইটা উপাদান এক জিনিস। কিন্তু আসলে এটা সঠিক নয় এই দুইটি উপাদান একেবারেই একে অপরের থেকে আলাদা।

    চিয়া সিড খেলে কি বুকের দুধ বাড়ে

    আপনারা অনেকেই আছেন যারা চিয়া সিড খেলে কি বুকের দুধ বাড়ে এই বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। তাই এখন আমি আপনাদের সাথে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। যাতে করে আপনারা চিয়া সিড খেলে বুকের দুধ বাড়ে কিনা সে বিষয়ে ভালোভাবে জানতে পারেন।
    গর্ভাবস্থায়-চিয়া-সিড-খাওয়ার-নিয়ম
    চিয়া সিড বুকের দুধ বাড়াতে সাহায্য করে। কিন্তু সরাসরি যে এটি বুকের দুধ বাড়াতে পারে এটা কিন্তু কোন ডাক্তারি বা বৈজ্ঞানিক ভাবে এখনো পাওয়া যায়নি। চিয়া সিড এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান থাকে। যেগুলো হচ্ছে প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম, ওমেগা থ্রি, ফাইবার এবং জল শোষণ করার ক্ষমতা।

    এই উপাদান গুলো মূলত পরোক্ষভাবে মায়ের বুকের দুধ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এগুলো মায়ের শরীরের পুষ্টির ঘাটতি থাকলে সেই ঘাটতি গুলোকে পূরণ করে এবং বুকের দুধ বাড়াতে সাহায্য করে। দুধ বাড়ানোর জন্য আপনি চিয়া সিড এক চামচ এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে ৩০ মিনিট পর খেতে পারেন।
    এটি খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন অতিরিক্ত না খাওয়া হয়। অতিরিক্ত খাওয়া হলে সেটা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এটি খাওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া নিরাপদ হবে। আশা করছি  চিয়া সিড খেলে কি বুকের দুধ বাড়ে এই বিষয়ে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।

    লেখকের মন্তব্যঃ গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

    গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমি আমার আর্টিকেলের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সেই সাথে চিয়া সিড খেলে কি বুকের দুধ বাড়ে, চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা, চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ ও সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি । আশা করছি আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি চিয়া সিড সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে পেরেছেন। 

    আপনি যদি আমার এ আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে অবশ্যই এটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন। এছাড়াও আপনার যদি আমার এই আর্টিকেলটি নিয়ে কোন প্রশ্ন বা মতামত থেকে থাকে অথবা আপনি যদি নতুন কোন বিষয় সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে অবশ্যই সেটা আমাদের নিচে থাকা কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    অপরাজিতা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url