কর্পূর আর ন্যাপথলিন কি এক পার্থক্য ও ব্যবহার

কর্পূর আর ন্যাপথলিন কি এক এবং ন্যাপথলিন ও কর্পূর কি কাজে ব্যবহার হয় এই বিষয়ে এখন আমি আমার আর্টিকেলের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
কর্পূর-আর-ন্যাপথলিন-কি-এক
আপনি যদি ন্যাপথলিন এর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আমার আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়বেন। চলুন দেরি না করে কর্পূর আর ন্যাপথলিন সম্পর্কে সব তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

পেজ সুচিপত্রঃ কর্পূর আর ন্যাপথলিন কি এক

কর্পূর আর ন্যাপথলিন কি এক

কর্পূর আর ন্যাপথলিন কি এক এই বিষয়ে অনেকেই আছে যারা জানতে চান। কর্পূর আর ন্যাপথলিন এই দুটো জিনিস আমরা অনেকেই আমাদের আশেপাশে দেখে থাকি। এই দুইটা জিনিস দেখতে একই রকম হওয়ার কারণে এই দুইটাকে অনেকেই এক বলে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই দুটো একদম আলাদা এবং এই দুইটি উপাদানের কাজও আলাদা। চলো কর্পূর কি আর ন্যাপথলিন কি জেনে নিই।
কর্পূর হচ্ছে এক ধরনের চকচকে সাদা পদার্থ। কর্পূর মূলত একটি প্রাকৃতিক উপাদান কারণ এটি গাছ থেকে উৎপন্ন করা হয়। গাছের কাঠ বা পাতার নির্যাস থেকে এই কর্পূর তৈরি করা হয়। এর গন্ধ অনেক সুন্দর এবং এর গন্ধ পরিবেশের আবহাওয়াতে ঠান্ডা ও সতেজ একটা অনুভূতি তৈরি করে। কর্পূর খুব সহজেই বাতাসের সাথে বাষ্পীয় হয়ে মিশে যায়। ফলে এর সুগন্ধ বাতাসের সাথে মিশে চার পাশে ছড়িয়ে পরে। এই কর্পূর মূলত ঘরকে সুগন্ধ করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

এছাড়াও এটা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য বেশ জনপ্রিয়। কর্পূর যে শুধু সুগন্ধ ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে তা কিন্তু নয়। এটা চিকিৎসার ক্ষেত্রেও অনেক চিকিৎসক ব্যবহার করে থাকে। এই কর্পূর ব্যবহার করে মলম, তেল এবং ওষুধ বানানো হয়। যেটা ব্যবহার করা হয় মাথা ব্যথা কমাতে, ঠান্ডা, সর্দি ইত্যাদি সংক্রমণ জনক রোগ প্রতিরোধ বাড়ানোর জন্য। এর ব্যবহারে শরীরে একটা ঠান্ডা অনুভূতি পাওয়া যায় যেটা শরীরকে সতেজ ও টাটকা রাখতে সাহায্য করে।

ন্যাপথলিন হচ্ছে রাসায়নিক একটি পদার্থ এটা দেখতে ছোট ছোট সাদা বল বা ট্যাবলেটের মতো হয়ে থাকে। এটা ব্যবহার করা হয় মূলত পোকামাকড় দূরে রাখার জন্য। বিশেষ করে আলমারিতে কাপড়চোপড় রাখলে সেগুলোকে পোকামাকড় যেন নষ্ট না করতে পারে এ জন্য এই ন্যাপথলিনের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ন্যাপথলিনের গন্ধ পোকামাকড়ের জন্য বিষাক্ত। যার কারণে ন্যাপথলিন এর আশেপাশেও পোকামাকড় যায় না। এই ন্যাপথলিন আলমারিতে রাখলে সেটা ধীরে ধীরে গ্যাসে পরিণত হয়।

সেই গ্যাসের জন্য পোকামাকড় কাছে আসতে পারে না এবং দূরে দূরে থাকে। অনেকে আছে যারা এই ন্যাপথলিনের গুলি কাপড়ের আলমারিতে, বইয়ের ভেতর এবং দোকানে ব্যবহার করে থাকে। এই ট্যাবলেট বা গুলিটি আলমারি অথবা দোকানে বা ঘরের কোনায় রেখে দিলে পোকামাকড়ের ঝুঁকি থাকে না। এই ন্যাপথলিনের গুলি কখনোই খাওয়া বা হাতে রাখা উচিত নয়। এমনকি বাচ্চাদের আশেপাশেও এটি রাখা মোটেও উচিত নয়। কারণ ন্যাপথলিন রাসায়নিক বিষাক্ত পদার্থ দিয়ে তৈরি করা হয়। এটা শরীরের সংস্পর্শে আসলে শরীরের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

কর্পূর আর ন্যাপথলিন এক জিনিস না। এই দুইটি আলাদা সহজ ভাবে বলতে গেলে কর্পূর এটি প্রাকৃতিক উপাদান এটা ঘরের বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সুগন্ধ ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে এবং বিভিন্ন চিকিৎসা কাজে ব্যবহার করা হয়। আর ন্যাপথলিন এটা একটি কৃত্রিম রাসায়নিক পদার্থ যেটা পোকামাকড়কে দূর করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই উপাদান দুইটি ব্যবহার করার সময় অবশ্য সতর্ক থাকতে হবে। আশা করছি উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনি ন্যাপথলিন আর কর্পূর এক কিনা এ বিষয়ে জানতে পেরেছেন।

ন্যাপথলিন এর সংকেত কি

আপনারা অনেকেই ন্যাপথলিন এর সংকেত কি এই বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। ন্যাপথলিন মূলত এক ধরনের অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন এবং এটা দেখতে ছোট ছোট সাদা বল বা ট্যাবলেট এর মত হয়ে থাকে। এই ন্যাপথলিন ব্যবহার করা হয় পোকামাকড় দূরে রাখার জন্য। ন্যাপথলিনের রাসায়নিক সংকেত হচ্ছে (C₁₀H₈)। এখানে সি মানে হচ্ছে কার্বন আর এইচ মানে হচ্ছে হাইড্রোজেন। পুরো অর্থ হচ্ছে ১০টি কার্বন ও ৮টি হাইড্রোজেন। অর্থাৎ ন্যাপথলিন তৈরিতে দশটি কার্বন ও আটটি হাইড্রোজেন পরমাণু থাকে।

ন্যাপথলিন এর উপকারিতা

আপনারা অনেকেই ন্যাপথলিনের উপকারিতা সম্পর্কে জানেন আবার অনেকেই জানেন। আমরা অনেকেই আছি যারা ন্যাপথলিন এর ব্যবহার মূলত আমাদের দৈনন্দিন জীবনে করে থাকি। বিশেষ করে এটা আমরা আলমারি বা ঘরের পোকামাকড় দূর করার জন্য ব্যবহার করে থাকি। ন্যাপথলিন এর উপকারিতা অনেক রয়েছে, যেগুলো আমাদের জানা জরুরি। চলুন সেই উপকারিতা গুলো কি জেনে নেওয়া যাক।

ন্যাপথলিন সাধারণত পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ দূর করার জন্য অনেক উপকারী উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকে। আলমারিতে রাখা জামাকাপড় যেন পোকামাকড়ে নষ্ট না করতে পারে, সেজন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর গন্ধ পোকামাকড়কে দূরে রাখে। ঘরে যদি দুর্গন্ধ থাকে, তাহলে সে দুর্গন্ধ কমানোর জন্য ন্যাপথলিন অনেক ভালো কাজ করে। ন্যাপথলিনের তীব্র গন্ধ বাতাসের নিচে ঘরের দুর্গন্ধ কমাতে সাহায্য করে।

কিছু গবেষণায় পাওয়া গেছে যে ন্যাপথলিন এর গন্ধ নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করে। যেটা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এছাড়াও এই ন্যাপথলিন অনেক সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য হওয়ায় কম খরচে এটি ব্যবহার করা যায় এবং এর থেকে উপকার গ্রহণ করা যায়। তবে এর ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকতে হবে, কারণ এটা একটি বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ।

এটা সরাসরি খাওয়া বা এর গন্ধে বেশিক্ষণ নিঃশ্বাস নিলে সেটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে ছোট শিশু এবং বাড়ির পোষা প্রাণীদের থেকে এটা দূরে রাখতে হবে। তা না হলে এটা ছোট বাচ্চাদের এবং প্রাণীদের ক্ষতি করতে পারে। আশা করছি উপরোক্ত আলোচনা থেকে ন্যাপথলিন এর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

FAQ/আলোচিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

কর্পূরের আরেক নাম কি?

উত্তরঃ এই উপাদানটিকে বাংলায় আমরা কর্পূর নামে চিনে থাকি। তবে এর আন্তর্জাতিক নাম বা বিজ্ঞানসম্মত নাম হচ্ছে ক্যামফার। সহজভাবে বলতে গেলে কর্পূরের আরেক নাম হচ্ছে ক্যামফার।

কর্পূর এর অর্থ কি?

উত্তরঃ কর্পূরের অর্থ হচ্ছে এটি একটি প্রাকৃতিক সুগন্ধি জাতীয় উপাদান। এটা মূলত গাছ থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হয়ে থাকে। এটা সুগন্ধি হিসাবে ব্যবহার করা হয় এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও এটা বিভিন্ন ঔষধি কাজে ব্যবহার করা হয়।

ন্যাপথলিন দিলে কি ছারপোকা দূর হয়?

উত্তরঃ ন্যাপথলিন একটি বিষাক্ত পদার্থ। এটা যদি ঘরের কোনায় রাখা হয় বা ছারপোকা যে জায়গায় থাকে সেসব স্থানে রাখা হয়। তাহলে ন্যাপথলিনের বিষাক্ত গন্ধে ছারপোকা থাকতে পারে না। যার কারণে ন্যাপথলিন দিলে ছারপোকা দূর হয়ে যায়।

ন্যাপথলিন কি বিষাক্ত?

উত্তরঃ ন্যাপথলিন একটি বিষাক্ত পদার্থ। এটি তৈরি হয় মূলত রাসায়নিক বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ দিয়ে। এটা যদি মানুষ ভুল নিয়মে ব্যবহার করে বা এর সংস্পর্শে বহুদিন থাকে। তাহলে এটা শ্বাসনালী ও ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। এছাড়াও এটা যদি খাওয়া হয়, তাহলে পেটের মধ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। বেশিদিন এর সংস্পর্শে থাকলে চর্ম রোগ হতে পারে এবং ছোট বাচ্চা ও প্রাণীদের শারীরিক অবস্থার ওপর ক্ষতিকর প্রভাব খেলতে পারে।

ন্যাপথলিন নিষিদ্ধ কেন?

উত্তরঃ ন্যাপথলিন একটি বিষাক্ত পদার্থ হওয়ার কারণে এটা মানুষের স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। যার কারণে এটা বেশ কিছু দেশের নিষিদ্ধ করা হয়। এটার নিষিদ্ধের প্রধান কারণগুলো হচ্ছে ন্যাপথলিন শুধু যে পোকামাকড় দূর করে তা কিন্তু নয়, এটা মানুষ ও প্রাণীর জন্যেও বিষাক্ত। এটা শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের ক্ষতি করে থাকে। এর গন্ধ বায়ুকে দূষণ করে এবং এটা যদি ভুলক্রমে কোনো মানুষকে খেয়ে ফেলে, তাহলে এটা বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে। যার করণে তার জীবন চলে যেতে পারে। এই ন্যাপথলিন নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হচ্ছে, এটা মানুষের এবং প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর এমনকি পরিবেশ দূষণেও দায়ী। এর জন্য এটাকে অনেক দেশ নিষিদ্ধ করেছে।

কর্পূর এর উপকারিতা

আপনারা অনেকেই কর্পূর এর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। কর্পূর গাছের কাঠ থেকে তৈরি করা হয়। এই কর্পূর প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে আসছে। বিশেষ করে এটা আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথি, ইউনানী ও লোকজ চিকিৎসায় বেশি ব্যবহার করা হয়। কর্পূরের অনেক উপকারিতা রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে আমাদের জানা অনেক জরুরী। তাই দেরি না করে চলুন সেই উপকারিতা গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডার জন্য উপকারীঃ যাদের শ্বাসকষ্টের বা ঠান্ডা জনিত সমস্যা আছে তাদের জন্য কর্পূর অনেক উপকারী। কারণ কর্পূরের গন্ধ শ্বাসনালী পরিষ্কার করে। যার কারণে শ্বাসকষ্ট থাকলে সেটা কমে যায় এবং এর গন্ধ ও কর্পূরের তেল ব্যবহার করলে সর্দি কাশি ও নাক বন্ধ থাকলে ভালো হয়ে যায়।

ব্যথা দূর করেঃ কোন আঘাত প্রাপ্ত ব্যথা অথবা শরীরের কোন ব্যথা থাকলে কর্পূর যুক্ত তেল হালকা গরম করে সেই ব্যথার জায়গা গুলোতে যদি ভালোভাবে মালিক করা হয় শরীরের ব্যথা বা আঘাতপ্রাপ্ত ব্যথাগুলো দূর করে। বিশেষ করে জয়েন্টের ব্যথা মাংসপেশির ব্যথা ও অ্যাট্রাইটিসে ভালো আরাম পাওয়া যায়।

ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো করেঃ কর্পূর ত্বকের যত সমস্যা আছে সে সমস্যা গুলোকে ভালো করতে সাহায্য করে। কারণ কর্পূরের মধ্যে এন্টিসেপটিক গুণাগুণ রয়েছে। যার কারণে ত্বকে হওয়া ফোড়া, চুলকানি, দাগ ও ত্বকের সংক্রমণজনিত সমস্যা কমিয়ে দেয়।

চুলের জন্য ভালোঃ চুলের স্বাস্থ্য কে ভালো রাখা এবং মাথার ত্বকের সমস্যা থাকলে সে সমস্যা ভালো করার জন্য কর্পূরের তেল অনেক উপকারী। কর্পূরের তেল মাথার ত্বকে রক্তসঞ্চালন বাড়ায় এবং মাথাতে হওয়া খুশকি ও মাথার ত্বকের চুলকানি কমাতে সাহায্য করে।

পোকামাকড় তাড়াতেঃ কর্পূর ঘরে থাকলে সেই ঘরে পোকামাকড় আসতে পারে না। কারণ কর্পূরের গন্ধ পোকামাকড় সহ্য করতে পারে না। কর্পূরের গন্ধে ঘরে থাকা মশা, মাছি ও পোকামাকড় দূরে থাকে। এমনকি এটা কাপড়ের আলমারিতে রাখলে জামা কাপড় পোকামাকড় থেকে নিরাপদে থাকে।

মন শান্ত করেঃ কর্পূরের সুন্দর ঘ্রাণ বাতাসে মিশে পরিবেশ ঠান্ডা করে। সেই বাতাসের গন্ধে মন হয় সতেজ ও টাটকা। কারণ কর্পূরের গন্ধ মনকে একটা ফ্রেশ অনুভূতি দিয়ে থাকে, যেটা মানসিক বিষণ্যতা দূর করে বা মানসিক চাপ কমিয়ে মনকে প্রফুল্ল করে তোলে।

হজমের জন্য ভালোঃ কর্পূর যদি অল্প পরিমাণে একটু খাওয়া যায় তাহলে এটা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে আর হজম শক্তি ভালো হলে পেটের সমস্যা বিশেষ করে গ্যাস পেট ফাঁপা এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে সেটা কমে যায়। তবে অতিরিক্ত যদি কর্পূর খাওয়া হয় তাহলে এটা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।

সংক্রমণ প্রতিরোধ করেঃ ক্ষতস্থানের সংক্রমণ রোধ করতে কর্পূরের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই কর্পূর যুক্ত তেল বা মলম ব্যবহার করলে দ্রুত ক্ষতস্থান পূরণ হয় এবং সংক্রমণ রোধ হয়। কারণ কর্পূরের মধ্যে এন্টিফাঙ্গাল ও এন্টিব্যাকটেরিয়াল ভালো পরিমাণে থাকে। যেটা বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

কর্পূর ব্যবহার করার সময় অবশ্যই সতর্ক হয়ে ব্যবহার করতে হবে আর এটি যদি অল্প পরিমাণে ব্যবহার না করে অতিরিক্ত শরীরে ব্যবহার করা হয় বা খাওয়া হয় তাহলে এটা শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য বিষাক্ত হতে পারে। তাই এটি অতিরিক্ত ব্যবহার না করে সীমিত পরিমানে ব্যবহার করা উচিত। ছোটো বাচ্চাদের কর্পূর থেকে দূরে রাখা উচিত। আলোচনা থেকে আপনি কর্পূরের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

কর্পূরের গন্ধ শুকলে কি হয়

কর্পূরের গন্ধ শুকলে এটা শরীর ও মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব ফেলে থাকে। যদি অল্প পরিমাণে কর্পূরের গন্ধ শুকা হয় তাহলে এটা স্বাস্থ্যের ও মস্তিষ্কের জন্য অনেক উপকারী হিসেবে কাজ করে তবে অতিরিক্ত যদি এর গন্ধ নেওয়া হয় তাহলে এটা ক্ষতিকর বা শরীরের জন্য বিষাক্ত হতে পারে। চলুন কর্পূরের গন্ধ শুকলে কি হয় বিস্তারিত জেনে নিই।

কর্পূরের গন্ধ নেওয়া হলে এটা সর্দি, কাশি বা ঠান্ডা জনিত কারণে নাক বন্ধ থাকলে এবং শ্বাসকষ্ট থাকলে কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। যাদের হাঁপানি বা এজমা জনিত সমস্যা আছে। তাদের জন্য এর গন্ধ অনেক স্বস্তি এনে দেয়। মনকে সতেজ করে এবং মানসিক চাপ কমায়, মাথা ব্যথা বা মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে এর গন্ধ মাথা ব্যথা ও মাইগ্রেনের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এর গন্ধর কারণে চারপাশে পোকামাকড়, মশা, মাছি আসতে পারেনা।

তবে অতিরিক্ত এর গন্ধ নেওয়া হলে এটা মাথা ঘোরা ও বমি ভাব তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি চোখে জ্বালাপোড়া, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। অনেকক্ষণ যদি এর গন্ধ নেওয়া হয়, তাহলে এটা নার্ভাস সিস্টেমে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পার। যার কারণে খিচুনি পর্যন্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই কর্পূরের গন্ধ অল্পতে নিরাপদ কিন্তু অতিরিক্ত হলে এটা ক্ষতিকর। আশা করছি উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনি কর্পূরের গন্ধ শুকলে কি হয় জানতে পেরেছেন।

ন্যাপথলিন এর গন্ধ কি ক্ষতিকর

আপনারা জানতে চেয়েছেন ন্যাপথলিন এর গন্ধ কি ক্ষতিকর। তাদেরকে বলতে চাই জি হ্যাঁ ন্যাপথলিন এর গন্ধ ক্ষতিকর। কারণ ন্যাপথলিন তৈরি হয় বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে। এই ন্যাপথলিন মূলত ব্যবহার করা হয় পোকামাকড় দূর করার জন্য। বিশেষ করে আলমারিতে কাপড়চোপড় ভালো রাখার জন্য ঘরের পোকামাকড় দূর করার জন্য এবং বইয়ের ও বিছানার পোকা ও ছারপোকা দূর করার জন্য।
ন্যাপথলিন মূলত সাদা ছোট ছোট বল অথবা ট্যাবলেট এর মত হয়ে থাকে। এটা বাতাসের সাথে বাষ্প হয়ে গন্ধ ছড়ায়, যেটা নিঃশ্বাসের সাথে শরীরের মধ্যে ঢুকতে পারে। আর এটা শরীরের মধ্যে ঢুকলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। ন্যাপথলিনের গন্ধ কি ক্ষতি করে চলুন সেগুলো জেনে নেওয়া যাক। ন্যাপথলিন এর বন্ধ শ্বাসনালীর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এছাড়া মাথা ঘোরা ও মাথা ব্যথার সমস্যা তৈরি করে।

এটা রক্তকণিকাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এমনকি চোখে জ্বালাপোড়া করা, চোখে পানি আসা এবং ত্বকে এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে। এই ন্যাপথলিন মানুষ যদি ভুল করে খেয়ে ফেলে, তাহলে এটা বিষক্রিয়ার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এমনকি খিচুনি, লিভার ও কিডনির ক্ষতি পর্যন্ত করবে। তাই ন্যাপথলিনের গন্ধ না নেওয়ায় শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ। অনেক দেশে ন্যাপথলিনের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে ন্যাপথলিনকে তাদের দেশে নিষিদ্ধ করেছে।

ন্যাপথলিন এর কাজ কি

এখন আমি আপনাদেরকে ন্যাপথলিন এর কাজ কি এই বিষয়ে জানাবো। ন্যাপথলিন মূলত এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ যেটা দেখতে ছোট গুলি বা বলের মতো অথবা ট্যাবলেটের মতো হয়ে থাকে। এটা মূলত পোকামাকড়কে দূরে রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর তীব্র গন্ধ হচ্ছে বিষাক্ত গ্যাস।

এই গ্যাস বাতাসের সাথে মিশে পোকামাকড়কে মেরে ফেলে, ফলে পোকামাকড় দূরে থাকে। এই ন্যাপথলিনের কাজ মূলত অনেকেই অনেক সমস্যায় ব্যবহার করে থাকে। অনেকেই জামাকাপড়, বইপত্র যেন কোনো পোকামাকড় নষ্ট না করে তার জন্য ব্যবহার করে থাকে। এই ন্যাপথলিনের গুলি যদি ট্রাঙ্ক, বাক্স বা আলমারিতে রাখা হয়। তাহলে আলমারিতে কাপড় চোপড় ভালো থাকে এবং পোকামাকড়ে কোন ক্ষতি করতে পারে না।

এই ন্যাপথলিনের গুলি যদি বইয়ের টেবিলে বা বইয়ের ভেতরে রাখা হয়। কাগজপত্র এবং বই থাকবে সুরক্ষিত। অনেকেই ন্যাপথলিনের গুলি ঘরের কোনায় বা বাপরুমে রাখে। এতে করে বাথরুমে এবং ঘরের মধ্যে মশা, মাছি, তেলাপোকা ইত্যাদি দূরে থাকে। আশাকরছি উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনি ন্যাপথলিন এর কাজ কি সেটা জানতে পেরেছেন।

কর্পূর কি কাজে ব্যবহার হয়

এখন আমি আপনাদেরকে কর্পূর কি কাজে ব্যবহার হয় জানাবো। কর্পূর মূলত অনেক উপকারী একটি উপাদান এই কর্পূর এর ব্যবহার অনেক চিকিৎসক আছে যারা তাদের চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকে। এছাড়াও এই কর্পূর বেশ কিছু কাজে ব্যবহার করা হয় সেগুলো হচ্ছে জয়েন্টের ব্যথা, মাংসপেশির ব্যথা ও অ্যাথ্রাইটিসের ব্যথা কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

এটা ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ যেমন ফোড়া, চুলকানি ও ত্বকের প্রদাহ কমাতে ব্যবহার করা হয়। কর্পূর তেল মাথার খোসকি কমানোর জন্য এবং মাথায় রক্ত চলাচল বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও এটি ঘরের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। কারণ কর্পূরের সুগন্ধ অনেক সুন্দর এবং এটা মনকে শান্ত করে মানসিক টেনশন দূর করে।

অনেকেই এটা পোকামাকড় তাড়ানোর জন্য ব্যবহার করে থাকে। এই কর্পূর ব্যবহার করে অনেক ক্রিম, তেল এবং সাবান তৈরি করা হয় যেটা ভালো উপকারী। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার করলে সমস্যা হতে পারে। সতর্ক থাকতে হবে কর্পূর যেন ছোট বাচ্চাদের আশেপাশে না থাকে এবং এটি যেন খাওয়া না হয়। আশাকরছি আলোচনা থেকে আপনি কর্পূর কি কাজে ব্যবহার করা হয় জানতে পেরেছেন।

ন্যাপথলিন কিভাবে ব্যবহার করতে হয়

এখন আমি আপনাদেরকে ন্যাপথলিন কিভাবে ব্যবহার করতে হয় জানাবো। তাই দেরি না করে চলুন এর ব্যবহার জেনে নেওয়া যাক। ন্যাপথলিন আপনি আপনার জামা কাপড়ের মধ্যে কাগজে মোড়ে রেখে দিবেন। এতে করে আপনার জামাকাপড় থাকবে ভালো এবং পোকামাকড়ের কোন ঝুঁকি থাকবে না।আপনি আপনার বাক্স বা আলমারিতে অথবা বইয়ের তাকে অল্প কিছু ন্যাপথলিন ট্যাবলেট রেখে দিবেন। এতে করে আপনার আলমারি থেকে পোকামাকড় দূরে থাকবে।

যেটা আপনার আলমারিতে থাকা দরকারী জিনিসপত্র গুলোকে ভালো রাখবে। এছাড়াও এটা আপনি বাথরুম বা ড্রেনের দুর্গন্ধ কমানোর জন্য এবং পোকামাকড় তাড়ানোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে ন্যাপথলিন যেন একদম শরীরের আশেপাশে অথবা খাবারের আশেপাশে না থাকে। এটা শরীরের সংস্পর্শে আসলে বা খাবারের আশেপাশে থাকলে। এর গন্ধ শরীর ও স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এটা কেবলমাত্র জিনিসপত্রকে পোকামাকড়ের থেকে বাঁচানোর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

কর্পূর কি চুলের জন্য ভালো

আপনারা অনেকে কর্পূর কি চুলের জন্য ভালো জানতে চেয়েছেন। কর্পূর আপনি যদি সীমিত পরিমাণে আপনার চুলে বা মাথায় ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে এটা আপনার চুলের জন্য উপকারী হবে। কারণ কর্পূর আপনি সীমিত পরিমানে ব্যবহার করলে। এতে থাকা অ্যান্টিফাঙ্গাল আপনার মাথার খুশকি দূর করতে সাহায্য করবে। সেই সাথে এটা আপনার মাথার চুলকানি, লালচে ভাব ও ইনফেকশন থাকলে সেটা দূর করে দিবে। কর্পূর তেল দিয়ে যদি চুলে বা মাথার ত্বকে ভালোভাবে মালিশ করা হয়।

তাহলে এটা চুলের গোড়ায় এবং মাথার ত্বকে ভালোভাবে রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে। যার কারণে চুলের গোড়া মজবুত হবে এবং অতিরিক্ত চুল পড়া কমবে। কর্পূরের মধ্যে এমন কিছু উপাদান আছে, যেগুলো চুলের সতেজতা ধরে রাখে এবং মাথায় একটা শীতল অনুভূতি তৈরি করে। যা মানসিক চাপ কমিয়ে মানসিক প্রশান্তিতে রূপ দিয়ে থাকে। সতর্ক থাকতে হবে অতিরিক্ত ব্যবহার না করে সীমিত পরিমাণে ব্যবহার করা। অতিরিক্ত ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

FAQ/আলোচিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

প্রতিদিন ঘরে কর্পূর জালালে কী হয়?

উত্তরঃ প্রতিদিন যদি ঘরে কর্পূর জ্বালানো হয়, তাহলে এর ধোয়া ঘরের জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া নষ্ট করে এবং ঘরের পরিবেশ পরিষ্কার রাখে। এছাড়াও এটা ঘর থেকে মশা, মাছি, পোকামাকড় দূর করে এবং ঘরে পরিবেশ ঠান্ডা রাখে। যার কারণে শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা থাকলে কমে যায়। এর গন্ধ মানুষের চাপ কমায় এবং মনকে প্রফুল্ল ও সতেজ রাখে। বাড়ির যে রান্না বা অন্যান্য কারণে বাজে গন্ধ তৈরি হয় সে গন্ধ কমাতে সাহায্য করে।

কর্পূর জল খাওয়া কি উপকারী?

উত্তরঃ কর্পূর এমনি ব্যবহারের জন্য উপকারী। তবে এটা খাওয়া মোটে উপকারী নয় এটা যদি খাওয়া হয় তাহলে স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে এমনকি বিষক্রিয়া হতে পারে। এক কথায় কর্পূর জল খাওয়া উপকারী নয় বরং এটা ক্ষতিকর ও বিপদজনক।

কর্পূর মুখে দিলে কি হয়?

উত্তরঃ কর্পূর একটি বিষাক্ত পদার্থ এটা কখনোই মুখে দেওয়া বা খাওয়া নিরাপদ না। এটি মুখে দিলে বমি, পেট ব্যথা, মাথা ঘোরা, শরীর দুর্বল, শ্বাসকষ্ট হওয়া, খিচুনি, লিভার ও কিডনির ক্ষতি হতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে, তাই এটি মোটেও মুখে দেওয়া যাবে না।

কর্পূর কি প্রতিদিন মুখে লাগানো যায়?

উত্তরঃ কর্পূর মুখের ত্বকে যদি সীমিত পরিমাণে ব্যবহার করা হয় তাহলে এটা ত্বকের স্বাস্থ্যর ভালো রাখতে সাহায্য করবে। তবে অতিরিক্ত অর্থাৎ প্রতিদিন যদি এটা মুখে লাগানো হয় তাহলে এটা ত্বকে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে যেমন ত্বকের এলার্জি তৈরি করতে পারে যার কারণে তোকে জ্বালাপোড়ার মত সমস্যা হতে পারে। তাই কর্পূর প্রতিদিন মুখে লাগানো উচিত নয়।
ঠান্ডার জন্য কর্পূর কিভাবে ব্যবহার করব?

উত্তরঃ ঠান্ডা বা সর্দি, কাশি কমানোর জন্য সতর্কভাবে এই কর্পূর ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনি এক বালটি গরম পানিতে এক থেকে দুইটা কর্পূর দিবেন। এরপর এটাকে ঢাকনা দিয়ে পাঁচ থেকে দশ মিনিট রাখার পর সেই ধোঁয়াতে নিঃশ্বাস নিবেন। সতর্ক থাকতে হবে, এটা খুব বেশি যেন ব্যবহার করা না হয়। এছাড়াও আপনি নারকেল তেলের সাথে অল্প একটু কর্পূর মিশিয়ে বুকে, ঘাড়ে ও পিঠে হালকা করে মালিশ করবেন এতে আপনার ঠান্ডা কমবে।

লেখলের মন্তব্যঃ কর্পূর আর ন্যাপথলিন কি এক

কর্পূর আর ন্যাপথলিন কি এক এই সম্পর্কে আমি আমার আর্টিকেলের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সেই সাথে আপনাদেরকে কর্পূর কি চুলের জন্য ভালো, ন্যাপথলিনের সংকেত কি, ন্যাপথলিন এর উপকারিতা এবং কর্পূর এর উপকারিতা সম্পর্কে জানিয়েছি। আশা করছি আমার আর্টিকেলটি থেকে আপনি কর্পূর ওর ন্যাপথলিন সম্পর্কে সমস্ত তথ্য জানতে পেরেছেন।

আপনি যদি আমার আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হন। তাহলে এটা আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দেবেন। এ ছাড়াও আপনার যদি আমার এই আর্টিকেলটি নিয়ে কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে অথবা আপনি যদি নতুন কোন বিষয়ে জানতে চান? তাহলে আমাদের নিচে থাকা কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অপরাজিতা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url