আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা - আমলকি কখন খাওয়া উচিত

আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে চাইলে প্রথমেই আপনাকে এর গুনাগুন সম্পর্কে জানতে হবে। এই আমলকি শরীরের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং ত্বক ও চুলের যত্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটা শরীরের জন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
আমলকির-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
আপনি যদি আমলকি কখন খাওয়া উচিত জানতে চান? তাহলে আমার এই আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়বেন। চলুন তাহলে আর দেরি না করে প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত এবং আমলকির সম্পর্কে সকল তথ্য জেনে নিই।

পেজ সূচিপত্রঃ আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা

আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা

আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমি এখন আপনাদেরকে বিস্তারিত জানাবো। আমলকি চিনে না এমন কোন মানুষ পাওয়া যাবে না। তবে অনেকেই এর উপকারিতা সম্পর্কে জানে আবার অনেকেই জানে না। আমলকি অনেক উপকারী একটি ফল আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য। এই আমলকির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে।
যেটা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি আরো বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে। এতো উপকারিতা থাকার পরেও এটার কিছু অপকারিতাও আছে, যেগুলো আমাদের জানা অনেক জরুরী। তাই চলুন আমলকির উপকারিতা গুলো কি এবং অপকারিতা গুলো কি জেনে নেওয়া যাক।

চুলের জন্য উপকারীঃ যাদের চুল ঘন নয় এবং মজবুত নয় ও চুল পড়ার সমস্যা আছে। তাদের জন্য আমলকি অনেক উপকারী হতে পারে। কারণ আমলকির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। এছাড়াও এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান এর মধ্যে থাকে, যেগুলো চুলের জন্য অনেক ভালো। আপনি আপনার মাথার চুল পড়া কমাতে, চুল ঘন করতে এবং চুল মজবুত করতে চাইলে আমলকি নিয়মিত খেতে পারেন এবং আমলকির তেল চুলে ব্যবহার করতে পারেন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম তাদের জন্য আমলকি অনেক ভালো উপকারী একটি ফল। এই ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে থাকে। নিয়মিত আমলকি খেতে পারলে এটা শরীরকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করবে এবং সহজে সর্দি, কাশি, জ্বর ও ঠান্ডা লাগবে না।

ত্বক উজ্জ্বল করেঃ যাদের কম বয়সে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে গেছে বা ত্বকে বলিরেখা পড়েছে। তাদের ত্বকে বয়সের ছাপ কমাতে এবং ত্বকের বলিরেখা দূর করতে আমলকি ভালো কাজ করে। আমলকি যদি সঠিক নিয়ম মেনে নিয়মিত খাওয়া যায়। তাহলে এই আমলকির মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে এবং ত্বকের সতেজতা বাড়িয়ে তোলে। যার কারণে ত্বকে হওয়া বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর হয় এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও ত্বকে বয়সের ছাপ কমে।

হজমশক্তি বাড়ায়ঃ যাদের গ্যাসের সমস্যা, হজম জনিত সমস্যা অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য আছে। তারা নিয়মিত আমলকি খেতে পারেন। কারণ আমলকির মধ্যে এমন কিছু প্রাকৃতিক গুনাগুন আছে, যেগুলো পেটের হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। ফলে পেটের গ্যাস দূর হয়ে যায়, পেটের সমস্যা থাকলে ভালো হয়ে যায়। আর হজম ভালো হওয়ার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যায়। তাই হজমশক্তি ভালো করার জন্য নিয়মিত আমলকি খাওয়া উচিত।

ডায়াবেটিসে উপকারীঃ যাদের ডায়াবেটিসের রোগ আছে এবং ডায়াবেটিস থাকে অনিয়ন্ত্রণে তাদের জন্য আমলকি অনেক কার্যকরী ও ভালো একটি ফল। আমলকির মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক গুনাগুন গুলো ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের মধ্যে থাকা চিনির মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে। যার কারণে ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে সেটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী। তাই নিয়মিত ডায়াবেটিস রোগীদের এই ফলটি খাওয়া উচিত।

হার্টের জন্য উপকারীঃ আমলকি রক্তের মধ্যে খারাপ কলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে থাকে। তার পাশাপাশি এটা রক্তকে পরিষ্কার করে। যার কারণে শরীরের মধ্যে রক্ত ভালোভাবে চলাচল করতে পারে। বিশেষ করে হৃদপিন্ডে ভালোভাবে রক্ত চলাচল করে। যার কারণে হার্ট অ্যাটাকের বা হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকে কমে যায়। যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের আমলকি নিয়মিত খাওয়া উচিত।

চোখের জন্য উপকারীঃ যাদের চোখের সমস্যা বেশি এবং দৃষ্টিশক্তি কম তারদের জন্য এই ফলটি অনেক উপকারী। কারণ এই ফলের মধ্যে ভালো পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। আর ভিটামিন এ থাকার কারণে এটা রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। সেই সাথে চোখের বিভিন্ন সমস্যা থাকলে সেটা ভালো করে এবং দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই যাদের চোখের সমস্যা বা দৃষ্টিশক্তি দুর্বল তারা নিয়মিত আমলকি খেতে পারেন।

কিডনির ও লিভারের জন্য উপকারীঃ আমলকির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে। এর মধ্যে এমন কিছু উপাদান আছে, যেগুলো শরীর থেকে খারাপ টক্সিন বার করে দিতে সাহায্য করে। যার কারণে লিভারের ওপর ও কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ কমে। ফলে লিভার ও কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং কিডনি ও লিভারের স্বাস্থ্য থাকে ভালো। লিভার ও কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে নিয়মিত আমলকি খাওয়া উচিত।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ যারা ওজনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান বা ডায়েট করতে চান। তাদের জন্য আমলকি একটি কার্যকরী উপায় হতে পারে। আমলকির মধ্যে ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম থাকে এবং এটার মধ্যে ফাইবার ভালো থাকে। এটা শরীরের মধ্যে মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। মেটাবলিজম শরীরের মধ্যে থাকা ক্যালরী পোড়াতে সাহায্য করে। ফলে অতিরিক্ত চর্বি থাকলে সেটা আস্তে আস্তে গলে যায় বা কমে যায়, যার কারণে ওজন থাকে নিয়ন্ত্রণ।

হাড়ের জন্য উপকারীঃ আমলকি এটি প্রাকৃতিক ফল এর মধ্যে প্রাকৃতিক অনেক গুনাগুন আছে এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ক্যালসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এই উপাদান গুলো হাড়ের সঠিক গঠন করতে সাহায্য করে। ফলে হার হয় মজবুত ও শক্তিশালী। হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য এবং শক্ত করার জন্য নিয়মিত আমলকি খাওয়া ভালো।

রক্তশূন্যতা দূর করেঃ যাদের শরীরের রক্তের ঘাটতি আছে তাদের জন্য আমলকি একটি উপকারী ফল। কারণ আমলকির মধ্যে আয়রন থাকে, যেটা শরীরের মধ্যে রক্ত উৎপন্ন করতে সাহায্য করে। রক্তের ঘাটতি বিশেষ করে মহিলাদের বেশি দেখা দেয়। তাই নিয়মিত যদি আমলকি খাওয়া যায়, তাহলে এটা শরীরের রক্তের ঘাটতি পূরণ করে রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করবে।

মানসিক চাপ কমায়ঃ আমলকির মধ্যে এমন কিছু প্রাকৃতিক গুনাগুন আছে যেগুলো মস্তিষ্কের উপর চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্ককে শান্ত করে। যাদের মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, স্ট্রেস, মন খারাপ, ঘুমের সমস্যা আছে তাদের জন্য এই আমলকি ফল অনেক উপকারী। এই ফল এইসব মানসিক চাপ দূর করে মনকে করে শান্ত। সেই সাথে ঘুমের মানও হয় ভালো।

আমলকির অপকারিতা

পেটের সমস্যাঃ আমলকির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। যদি প্রচুর পরিমাণে আমলকি খাওয়া হয়, তাহলে সেটা পেটের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করতে পারে। যেমন পেট ব্যথা, পেটে গ্যাস, বমি, অম্বল, ডায়রিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্যর মত সমস্যাও হতে পারে। তাই অতিরিক্ত না খেয়ে পরিমাণ অনুযায়ী খেতে হবে।

অ্যাসিডিটি বাড়াতে পারেঃ আমলকির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার কারণে। এটা যদি অতিরিক্ত খাওয়া হয়, তাহলে পেটের মধ্যে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি হতে পারে। যেটা মোটেও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। তাই উচিত হবে পরিমাণ অনুযায়ী খাওয়া।

কিডনিতে পাথরঃ আমলকি যদি বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়। তাহলে এটা কিডনির মধ্যে পাথর তৈরি করতে পারে। কারণ আমলকির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অক্সালেট থাকে। আর অতিরিক্ত খেলে এটা কিডনির ওপর চাপ ফেলে এবং কিডনিতে পাথর তৈরি করে। বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই কিডনির সমস্যা আছে তাদের জন্য অতিরিক্ত খাওয়া ক্ষতিকর।

রক্ত পাতলা করতে পারেঃ আমলকি রক্তকে পাতলা করতে কাজ করে থাকে। যাদের রক্ত জনিত সমস্যা আছে এবং তারা যদি রক্ত পাতলা করার কোন ওষুধ খায় পাশাপাশি তারা যদি আমলকি খায়। তাহলে এটা অতিরিক্ত রক্তকে পাতলা করে দিতে পারে। যেটা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তৈরি করতে পারে। তাই রক্ত পাতলা করার ওষুধ চলাকালে আমলকি খাওয়া উচিত নয়।

ডায়াবেটিস কমাতে পারেঃ আমলকির মধ্যে এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান আছে। যেগুলো রক্তের মধ্যে থাকা চিনির মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে। যার কারণে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বা কম থাকে। যদি ডায়াবেটিসের ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি আমলকি খাওয়া হয়, তাহলে এটা অতিরিক্ত ডায়াবেটিস কে কমিয়ে দিতে পারে। যার কারণে মাথা ঘোরা বমি ভাব এবং শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

গর্ভবতী মহিলার জন্য ক্ষতিকরঃ গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়া উপকারী হলেও এটা পরিমাণ অনুযায়ী যদি না খাওয়া হয় অর্থাৎ অতিরিক্ত খাওয়া হলে এটা গর্ভবতী মায়ের পেটে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করতে পারে। এটা যদি অতিরিক্ত খাওয়া হয় তাহলে পেটে অসুস্তি পেটে জ্বালাপোড়া এবং গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা হতে পারে তাই অতিরিক্ত না খেয়ে সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।

ঠান্ডা কাশি বাড়াতে পারেঃ , ঠান্ডা কাশি দূর করার জন্য আমলকি উপকারী হলেও এটা যদি কাঁচা অবস্থায় অতিরিক্ত খাওয়া হয় তাহলে এটা ঠান্ডা ও কাশি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এটি থেকে উপকার পেতে হলে অবশ্যই এটা সঠিক পরিমাণে খেতে হবে এবং নিয়ম মেনে।

আমলকি কখন খাওয়া উচিত

এখন আমি আপনাদেরকে আমলকি কখন খাওয়া উচিত এই বিষয়ে জানাবো। কারন আপনি যদি এই ফলটি সঠিক সময়ে খেতে পারেন, তাহলে এটা থেকে আপনি সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন এবং এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না। চলুন তাহলে কখন এই ফলটি খাওয়া উচিত জেনে নেওয়া যাক। আপনি যদি আপনার শরীরকে সারাদিন সতেজ রাখতে চান? তাহলে অবশ্যই আপনি এটা সকালবেলায় খালি পেটে খাবেন।

সকালবেলায় যদি আপনি এটা খালি পেটে খান, তাহলে এটা আপনার শরীর থেকে খারাপ টক্সিন দূর করবে, আপনার হজম শক্তি বাড়াবে এবং সারাদিন শরীরকে সতেজ রাখবে। এটি খাওয়ার আরও একটি ভালো সময় হচ্ছে খাবারের পর। খাবারের পর আপনি যদি আমলকি ফল খেতে পারেন, তাহলে এটা আপনার হজমের সাহায্য করবে এবং পেটের গ্যাস পেটের জ্বালাপোড়া কমাবে। এছাড়াও আপনি এই ফলটি রাতে অল্প পরিমানে ঘুমানোর আগে খেতে পারেন।

আপনি যদি রাতে ঘুমানোর আগে এই ফলটি অল্প পরিমাণে খেতে পারেন, তাহলে এটা আপনার ত্বকের ও চুলের স্বাস্থ্যকে ভালো করবে এবং আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে দূর করবে। যদি কারো গ্যাসের সমস্যা বা এসিডিটির সমস্যা থাকে, তাহলে এটা খালি পেটে না খাওয়াই ভালো। আর যাদের কিডনির পাথর হওয়ার ঝুঁকি আছে, তাদের এটি খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। যদি ঠান্ডা, কাশি বেশি থাকে তাহলে এটা অল্প পরিমাণে খেতে হবে।

আমলকির গুনাগুন

আমলকি অনেক উপকারী একটি প্রাকৃতিক ফল। এই ফলটি অনেক আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক তাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকে। এই ফলটির মধ্যে প্রচুর পুষ্টিগুণ ও ঔষধিগুন রয়েছে। এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যেটা কমলালেবুর থেকেও বেশি। এছাড়াও এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার সহ আরো অনেক খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন রয়েছে।

এই পুষ্টি গুনাগুন গুলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কে বাড়াতে সাহায্য করে। পাশাপাশি হজম প্রক্রিয়া ভালো করে, চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, হার্টকে সুস্থ রাখে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখে, কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখে, হার মজবুত করে এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করে। এছাড়াও এই গুনাগুন গুলো চুলকে ঘন ও কালো করতে সাহায্য করে। ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে এবং নখ ও দাঁত শক্ত করে।

FAQ/আমলকি সম্পর্কে আলোচিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

আমলকি সম্পর্কে আলোচিত কিছু প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে এখন আমি আপনাদেরকে জানাবো। তাই দেরি না করে চলুন সে আলোচিত প্রশ্নের উত্তর গুলো সম্পর্কে জেনে নিই।

আমলকি কাদের খাওয়া উচিত নয়?
উত্তরঃ আমলকি সাধারণত সবার খাওয়া উচিত কারণ এটি অনেক উপকারী একটি ফল। তবে কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এটা খাওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে যাদের কিডনির সমস্যা আছে, ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে এবং নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা আছে। এরা যদি আমলকি খায় তাহলে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই এদের আমলকি খাওয়া উচিত নয়, খেলেও সেটা পরিমাণ অনুযায়ী এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।

আমলকি খেলে কি রক্তচাপ কমে?
উত্তরঃ যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে তারা যদি আমলকি সঠিক নিয়ম মেনে খেতে পারে, তাহলে তাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে অর্থাৎ রক্তচাপ কমে। তাই বলা যায় আমলকি খেলে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ তারা নিয়মিত এই ফলটি খেতে পারেন। আর যাদের নিম্ন রক্তচাপ তারা এটি এড়িয়ে চলবেন।

আমলকি খেলে কি কাশি কমে?
উত্তরঃ আমলকি যদি সঠিক নিয়ম মেনে খাওয়া যায়, তাহলে এটা কাশি কমাতে সাহায্য করে। কারণ আমলকির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যেটা গলাকে নরম করে শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখে এবং গলার কফ কমাতে সাহায্য করে। আমলকি সর্দি, কাশি, ঠান্ডা কমানোর জন্য ওষুধ হিসেবে অনেকেই ব্যবহার করে থাকে।

আমলকি খেলে কি গ্যাস্ট্রিক কমে?
উত্তরঃ সঠিক পরিমাণে যদি আমলকি খাওয়া হয় তাহলে এটা পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করে। কারণ এটা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। যার কারণে পেটে গ্যাস হওয়া, পেটে জ্বালাপোড়া করা এবং অস্বস্তি বোধ করা কমিয়ে দেয়। তাই বলা যায় আমলকি খেলে গ্যাস কমে তবে অতিরিক্ত খেলে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আমলকি খেলে কি এলার্জি হয়?
উত্তরঃ আমলকি খেলে কোন এলার্জি হয় না। তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এলার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই ভিটামিন সি ও টক জাতীয় ফলে এলার্জি থাকে। এছাড়াও যাদের ত্বক সংবেদনশীল ও হজমের সমস্যা থাকে তাদেরও এই প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাছাড়া এটি পরিমাণ অনুযায়ী খেলে কোন ধরনের এলার্জি হয় না। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে না খেয়ে সীমিত পরিমানে খাওয়াই নিরাপদ।

প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত

আপনারা অনেকেই প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত এই বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। তাই এখন আমি আপনাদেরকে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। কারণ প্রতিদিন আপনি যদি সঠিক নিয়মে আমলকি খেতে পারেন। তাহলে এটা থেকে আপনি ভালো উপকার পাবেন। 

চলুন প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাবেন সে সম্পর্কে জেনে নিই। আপনি যদি আমলকি থেকে সঠিক উপকার পেতে চান, তাহলে এটা আপনি দিনে মাঝারি আকারের এক থেকে দুইটা আমলকি খাবেন। আর আপনি যদি আমলকির গুড়া খান, তাহলে সেটা এক থেকে দুই চামচ অর্থাৎ পাঁচ থেকে দশ গ্রামের মত দিনে খেতে পারেন।

আর আপনি যদি আমলকি ভেজানো পানি খেতে চান, তাহলে সেটা এক গ্লাস পানিতে ১টি থেকে ২টা আমলকি ভিজিয়ে সেই পানি খাবেন। এক কথায় হচ্ছে প্রতিদিন আপনার এক থেকে দুইটি আমলকি খাওয়া উচিত। এর থেকে বেশি হলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে।

চুলে ব্যবহারে আমলকির উপকারিতা

এখন আমি চুলে ব্যবহারে আমলকির উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। আমলকি শুধু যে আমাদের সুস্বাস্থ্য বা শরীরের জন্য উপকারী তা কিন্তু নয়। শরীরের পাশাপাশি চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আমলকি এমন একটি প্রাকৃতিক ফল, যেটা আমাদের শরীরের পাশাপাশি আমাদের চুলের যত্নেও ব্যবহার করা হয়। আমলকির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে।
এর পাশাপাশি আয়রন, ক্যালসিয়াম, আন্টিঅক্সিডেন্ট সহ আরো অনেক পুষ্টি গুনাগুন থাকে। এই উপাদান গুলো আমাদের চুলকে ভেতর থেকে পুষ্টি দেয় এবং চুলকে শক্ত করে। আমরা যদি নিয়মিত আমলকি ব্যবহার করতে পারি, তাহলে এটা আমাদের চুল পড়া কমাবে, চুলের গোড়া শক্ত করবে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে। আমলকির মধ্যে থাকা এই প্রাকৃতিক গুনাগুন গুলো মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে।

যার কারনে দ্রুত চুল বড় হয় এবং চুল ঘন হয়। আমলকির মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অকালে চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা দূর করে এবং চুলের কালো রং ধরে রাখে। আপনি যদি আমলকির তেল আপনার চুলে ব্যবহার করেন, তাহলে এটা আপনার মাথার খুশকি ও চুলকানি দূর করবে এবং মাথার ত্বককে রাখবে পরিষ্কার। এক কথায় বলা যায় এই আমলকি আপনার চুলে ব্যবহার করলে, এটা আপনার চুল পড়া বন্ধ, নতুন চুল গজা, চুল ঘন, চুল কালো, খুশকি দূর এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

আমলকি খেলে কি মোটা হওয়া যায়

আপনারা অনেকে আমলকি খেলে কি মোটা হওয়া যায় এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। আসলে আমলকি খেলে মোটা হওয়ার কোন ভয় নেই। কারণ আমলকি মধ্যে ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম থাকে এবং ফাইবারের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। যার কারণে অতিরিক্ত শরীরে চর্বি জমার কোন সম্ভাবনা থাকে না। এছাড়াও আমলকি খেলে শরীরে মেটাবলিজম বাড়ে যেটা শরীরের বিপাকক্রিয়াকে বাড়াতে সাহায্য করে।

ফলের দ্রুত হজম হয় এবং শরীরের মধ্যে চর্বি চলতে পারে না। এই আমলকির মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি শরীর থেকে খারাপ টক্সিন বার করে দেয়। যার কারণে এটা চর্বিকে আস্তে আস্তে কমাতে শুরু করে ও ওজন ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এছাড়াও এর মধ্যে ফাইবার থাকার কারণে ক্ষুধা কম লাগে এবং বারবার খাওয়ার প্রবণতা কমে।

হজম প্রক্রিয়া ভালো হওয়ার জন্য এটা পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। যেটা শরীরকে হালকা রাখতে সাহায্য করে। এক কথায় বলা যায় আপনি যদি আমলকি কাঁচা, গুড়া অথবা পানিতে ভিজিয়ে খান। তাহলে এটা আপনার ওজন বাড়াবে না বরং আপনার ওজন কে কমাতে সাহায্য করবে। তবে আপনি যদি আমলকির মিষ্টি আচার বানিয়ে অতিরিক্ত খান। তাহলে এটা আপনার ওজন বাড়াতে পারে।

শুকনো আমলকি খাওয়ার নিয়ম

আপনারা শুকনো আমলকি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। শুকনো আমলকি মূলত কাঁচা আমলকির মতোই উপকারী। শুকনো আমলকি খাওয়া বা ব্যবহার করা অনেক সহজ। তবে আপনাকে আগে জানতে হবে এটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে। আপনি যদি সরাসরি শুকনো আমলকি খেতে চান, তাহলে এটা দিনে আপনি দুই থেকে তিন টুকরো ভালোভাবে চিবিয়ে খেতে পারেন।

আর আপনি যদি পানিতে ভিজিয়ে খান, তাহলে এটা রাতে কয়েক টুকরো এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি খাবেন। এতে করে আপনার শরীর থাকবে ঠান্ডা, হজম শক্তি ভালো হবে এবং চুল ও ত্বক সুস্থ থাকবে। আপনি চাইলে প্রতিদিন শুকনো আমলকির গুড়ো এক থেকে দুই চামচ হালকা কুসুম গরম পানিতে অথবা মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।

এটা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। চায়ের সঙ্গেও শুকনো আমলকির গুড়া মিশিয়ে খেতে পারেন। এভাবে খেলে আপনার ঠান্ডা, সর্দি, কাশি দূর হবে। উপরে আমি শুকনা আমলকি খাওয়ার যে নিয়মগুলো বললাম। অবশ্যই এগুলো পরিমাণ অনুযায়ী খেতে হবে। অতিরিক্ত খেলে উপকারের চাইতে ক্ষতি বেশি হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এখন আমি আপনাদেরকে বিস্তারিত জানাবো। গর্ভাবস্থায় আমলকি যদি সঠিক পরিমাণে খাওয়া যায়, তাহলে এটা একজন গর্ভবতী মায়ের এবং পেটে থাকা সন্তানের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হিসেবে কাজ করে থাকে।

এই ফলটি পুষ্টিগুনে ভরপুর এর মধ্যে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ আরো অনেক ধরনের পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে। যেগুলো একজন গর্ভবতী মায়ের এবং তার সন্তানের জন্য ভালো। চলুন গর্ভাবস্থায় যদি এই ফলটি খাওয়া হয়, তাহলে কি উপকার পাওয়া যাবে জেনে নেওয়া যাক।

গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শরীর অনেক দুর্বল হয় এবং ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সময় যদি আমলকি খাওয়া হয়, তাহলে আমলকিতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গর্ভবতী মায়ের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। যার কারণে সহজে গর্ভবতী মা অসুস্থ হয়ে পড়ে না।

গর্ভে থাকার সন্তানের সঠিক বিকাশের জন্য আমলকি অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কারণ আমলকির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এই উপাদানগুলো গর্ভে থাকা সন্তানের হাড়কে শক্ত করে, রক্ত ও মস্তিষ্কের সঠিক গঠন হতে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের হজম শক্তি অনেক দুর্বল হয়ে যায়। যার কারণে পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। এ সময় আমলকি যদি খাওয়া হয়, তাহলে আমলকিতে থাকা প্রাকৃতিক গুনাগুন হজম শক্তিকে বাড়াতে সাহায্য করে এবং পেটের সমস্যা দূর করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে সেটা ভালো করে।

গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শরীরে রক্তের ঘাটতি বা রক্তশূন্যতা দেখা দিয়ে থাকে। আমলকির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। এই আয়রন থাকার কারণে এটা শরীরের মধ্যে রক্ত উৎপন্ন করে এবং শরীরের রক্তের ঘাটতি থাকলে সেটা পূরণ করতে সাহায্য করে। যেটা গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের জন্য অনেক দরকারি ও উপকারী।

গর্ভবতী মহিলা যদি ডায়াবেটিস রোগী হয় অথবা উচ্চ রক্তচাপ যদি থাকে। তাহলে আমলকি তার জন্য অনেক উপকারী একটি ফল হবে। কারণ আমলকি রক্তের মধ্যে থাকা শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। যার কারণে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যায়। এ সময় আমলকি খাওয়া হলে গর্ভবতী মহিলার ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে এবং শরীরকে ফিট রাখবে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় চুল পড়া এবং ত্বকের সমস্যা হওয়া একটি স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে থাকে। আমলকি নিয়মিত খেলে এটা অতিরিক্ত চুল পড়া কমায় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

এক কথায় বলা যায় সঠিক নিয়ম মেনে পরিমান অনুযায়ী যদি গর্ভাবস্থায় এই ফলটি খাওয়া হয় তাহলে এটা থেকে ভালো উপকার পাওয়া যাবে। তবে সবথেকে নিরাপদ হবে গর্ভাবস্থায় এটি খাওয়ার পূর্বে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া। আশা করছি গর্ভাবস্থায় আমলকি খেলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় এ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

খালি পেটে আমলকি যদি খাওয়া যায় তাহলে এর থেকে ভালো উপকারিতা পাওয়া যায়। সকাল বেলায় খালি পেটে খেলে আমলকির মধ্যে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে সতেজ রাখতে এবং সারাদিন শরীরের শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। 

সকালবেলায় যদি খালি পেটে আমলকি খাওয়া হয়, তাহলে এটা পেটের হজম শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি। এটা পেটের গ্যাস দূর করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। সকালবেলায় আমলকি খাওয়া হলে, এটা শরীর থেকে খারাপ টক্সিন বার করে দেয়। যার কারণে রক্ত থাকে পরিষ্কার। আর রক্ত পরিষ্কার থাকলে তখন ত্বক হয় উজ্জ্বল এবং ত্বকের ব্রণ ও দাগ দূর হয়।

সকালবেলায় খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে ও সহজে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে না। এছাড়াও এটা শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। যার কারণে ওজন থাকে নিয়ন্ত্রণে এবং শরীর থাকে ফিট। এগুলো ছাড়াও শরীরের আরো অনেক উপকারিতা পাওয়া যায় যদি সেটা সকাল বেলায় খাওয়া হয়। তবে অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না পরিমাণে খেতে হবে।

ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে আমলকির ব্যবহার

ক্যান্সার প্রতিরোধে ও নিয়ন্ত্রণে আমলকি অনেক উপকারী ও শক্তিশালী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। আমলকির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এই উপাদান গুলো শরীর থেকে ফ্রি রেডিক্যাল নামের যে ক্ষতিকর উপাদান গুলো থাকে সেগুলোকে বার করে দেয়। কারণ ক্ষতিকর এই ফ্রী রেডিক্যাল গুলো শরীরের ভালো কোষ নষ্ট করে দেয় এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়ে থাকে।

আর এই ঝুঁকি কমানোর জন্য আমলকি অনেক উপকারী। আমলকি শরীরের ভালো কোষ রক্ষা করে এবং ক্যান্সার উৎপন্নকারী কোষগুলোকে বাধা দেয়। অনেক গবেষণায় পাওয়া গেছে আমলকিতে থাকা ফাইটোকেমিক্যালস ক্যান্সার উৎপন্নকারী কোষগুলোর বৃদ্ধি ধির করে দেয় এবং নতুন ভালো কোষ গঠন করতে সাহায্য করে। আমলকি ত্বকের ক্যান্সার, লিভারের ক্যান্সার, পাকস্থলীর ক্যান্সার এবং বুকের ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

নিয়মিত যদি এই আমলকি খাওয়া হয়, তাহলে এটা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, রক্ত পরিষ্কার করে। ফলে শরীর স্বাভাবিকভাবেই ক্যান্সার উৎপন্নকারি কোষগুলোর সঙ্গে লড়াই করে। যেসব ক্যান্সার রোগীদের কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। সেসব রোগীদের শরীরের ক্ষতি কিছুটা হলেও কমাতে সাহায্য করে এই আমলকি এবং তাদেরকে দ্রুত সুস্থ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

FAQ/আমলকি সম্পর্কে আলোচিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

একটি আমলকিতে কত ক্যালরি থাকে?
উত্তরঃ আমলকিতে অনেক কম পরিমাণে ক্যালরি থাকে। যার কারণে এটা ওজন নিয়ন্ত্রণে বেশ সহায়ক হিসেবে কাজ করে থাকে। একটা কাঁচা আমলকিতে প্রায় ৬ থেকে ৭ ক্যালোরি থাকে।
আমলকির-উপকারিতা-ও-অপকারিতা

আমলকির সিজন কখন?
উত্তরঃ আমলকির সিজন মূলত নির্ভর করে সে দেশের অঞ্চলের আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে। আমাদের দেশে মূলত মার্চ মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত বাজারের বা গাছে তাজা আমলকি পাওয়া যায়। এই আমলকি গ্রীষ্মকালের শুরুতে পাকতে শুরু করে। যার কারণে এপ্রিল ও মে মাসে বাজারে ভালো পরিমাণে পাওয়া যায়।

আমলকি বেশি খেলে কি হয়?
উত্তরঃ আমলকি খাওয়ার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হলেও এটা যদি বেশি পরিমাণে খাওয়া হয় তাহলে এটা স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি করতে পারে বিশেষ করে যাদের কিডনির সমস্যা আছে তাদের কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে, পেটে গ্যাস, পেটে জ্বালাপোড়া, পেট ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য। এছাড়াও ডায়াবেটিস অতিরিক্ত কমে যেতে পারে ও রক্তচাপ অতিরিক্ত কমে যেতে পারে। তাই পরিমাণ মতো খাওয়া উচিত।

আমলকির বিচি কি খাওয়া যায়?
উত্তরঃ আমলকির বিচি খাওয়া যায় তবে এটা কাঁচা অবস্থায় খাওয়া একটু কঠিন বা কষ্টকর হতে পারে। অনেকেই এই বিচিকে ভালোভাবে শুকিয়ে গুড়া করে আচার বানিয়ে খেয়ে থাকে। তাই বলা যায় আমলকির বিচি খাওয়া যাবে।
আমলকিতে কি ওমেগা ৩ থাকে?
উত্তরঃ আমলকি প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। এই ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভিটামিন সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফাইবার আয়রন ও ক্যালসিয়াম। আনলকির বিচিতে ওমেগা থ্রি এসিড পাওয়া যায় তবে সেটা খুব বেশি পরিমাণে থাকে না। তাই বলা যায় আমলকিতে ওমেগা থ্রি থাকে তবে সেটা সীমিত পরিমানে।

লেখকের মন্তব্যঃ আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা

আমি আমার আর্টিকেলের মধ্যে আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এর পাশাপাশি আমলকি কখন খাওয়া উচিত, আমলকির গুনাগুন, প্রতিদিন কয়টি আমলকি খাওয়া উচিত এবং গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কেও আপনাদেরকে জানিয়েছি। আশা করছি আমার আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনি আমলকির সকল ভালো খারাপ দিক সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

আপনি যদি আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে আমার এই আর্টিকেলটি আপনি আপনার পরিচিত মানুষদের কাছে শেয়ার করবেন এবং তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন। এছাড়াও আমার এই আর্টিকেলটি নিয়ে আপনার যদি কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে অথবা আপনি যদি নতুন কোন বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আমাদের নিচে থাকা কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অপরাজিতা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url