টুনা মাছ চেনার উপায় এবং টুনা মাছের প্রকারভেদ
টুনা মাছ চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে চান? এই মাছ শুধু স্বাদেই না বরং টুনা
মাছের পুষ্টিগুণ শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কারণ এর মধ্যে রয়েছে প্রোটিন,
ভিটামিন ও ওমেগা ৩ যেটা হৃদয় ও মস্তিষ্কের জন্য কার্যকারী।
আমার এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে আপনি টুনা মাছের প্রকারভেদ সম্পর্কেও
জানতে পারবেন। তাই দেরি না করে চলুন টুনা মাছ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
পেজ সূচিপত্রঃ টুনা মাছ চেনার উপায়
- টুনা মাছ চেনার উপায়
- টুনা মাছের প্রকারভেদ
- ক্যানড টুনা চেনার উপায়
- তাজা টুনা মাছ চেনার উপায়
- টুনা মাছের পুষ্টিগুণ
- টুনা মাছের মৌসুম ও উৎস
- টুনা মাছ খাওয়ার উপকারিতা
- টুনা মাছ সংরক্ষণের উপায়
- টুনা মাছের স্বাদ কেমন
- টুনা মাছের দাম কত
- FAQ/টুনা মাছ সম্পর্কে আলোচিত প্রশ্ন ও উত্তর
- লেখকের মন্তব্যঃ টুনা মাছ চেনার উপায়
টুনা মাছ চেনার উপায়
আপনারা অনেকেই টুনা মাছ চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তাই এখন আমি
আপনাদেরকে এই মাছ চেনার জন্য কিছু উপায় সম্পর্কে জানাবো। যেগুলো জানার পর আপনি
খুব সহজেই এই মাছ চিনতে পারবেন। এই মাছ খেতে অনেক সুস্বাদু এবং এর মধ্যে প্রচুর
পুষ্টি উপাদানও রয়েছে।
যেগুলো আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে এবং শরীর ও
স্বাস্থ্যকে সতেজ ও শক্তিশালী করে তোলে। চলুন কিভাবে আপনি এই মাছ চিনবেন, সেই
উপায় গুলো জেনে নেওয়া যাক। টুনা মাছকে মূলত চেনা যায় এর দেহের গঠন এবং তার
গায়ের রঙ দেখে।
আপনি খুব সহজেই টুনা মাছের গায়ের রং এবং তার দেহের গঠন দেখে চিনতে পারবেন। এর
দেহ হয় অনেক শক্ত ও লম্বা আকৃতির। এই মাছের গায়ের উপরের অংশ হয় গারো নীল রঙের,
আর নিচের অংশ হয় চকচকে রুপালি ও সাদা। এই মাছের মাংস গোলাপি রঙের বা লাল রঙের
হয়ে থাকে।
এক কথায় বলা যায় এই মাছের মাংস অন্য সব মাছের থেকে আলাদা। এছাড়াও এই মাছের
দ্রুত সাঁতার কাটার জন্য রয়েছে তার ধারালো পাখনা এবং তার মসৃণ শরীর। এই বিশেষ
গুণ থাকার কারণে এই মাছ অনেক দ্রুত সাঁতার কাটতে পারে। এছাড়াও এই মাছের এর চোখ
দেখেও আপনি এই মাছকে খুব সহজেই চিনতে পারবে।
কারণ এই মাছের চোখ অন্যান্য সব মাছের তুলনায় অনেক বড় হয়ে থাকে। আপনি যদি এইসব
বৈশিষ্ট্য কোন মাছের মধ্যে দেখতে পান। তাহলে খুব সহজেই বুঝে নিতে হবে, যে এটা
হচ্ছে টুনা মাছ। আশা করছি উপরের আলোচনা থেকে আপনি টুনা মাছ কিভাবে চিনতে হয় সে
সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
টুনা মাছের প্রকারভেদ
আপনারা অনেকেই টুনা মাছের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। টুনা মাছের মধ্যে
বেশ কয়েকটা প্রজাতি আছে যেগুলো তাদের আকার রং ও বৈশিষ্ট্যের কারণে আলাদা করা
যায়। চলুন তাহলে আর দেরি না করে টুনা মাছের প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে
নেওয়া যাক।
ব্লুফিন টুনাঃ এই মাছটি আকার সবচেয়ে বড় হয় এবং এই মাছের দামও অনেক বেশি। এই
মাছের শরীর অন্যান্য মাছের তুলনায় অনেক ভারী এবং এই মাছের মাংস হয় গাঢ় লাল
রঙের এবং চর্বি থাকে বেশি। এই মাছ সুশি ও সাসিমিতে অনেক জনপ্রিয়। এই মাছের
মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফ্যাটি এসিড ও ওমেগা থ্রি থাকে।
ইয়েলোফিন টুনাঃ এই মাছের শরীরের পাশে ও পাখনায় হলুদ একটা ভাব থাকে। এর শরীরের
আকার মাঝারি থেকে বড় হয়ে থাকে। এই মাছের মাংস হালকা গোলাপি অথবা লাল রংয়ের
হয়ে থাকে। এই মাছের মাংসের স্বাদ নরম এবং হালকা ও অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে। এই
মাছটি মূলত বেশি ব্যবহার করা হয় ফ্রাই, গ্রিল ও ক্যানজাত খাবারের মধ্যে।
আলবাকোর টুনাঃ এই মাছটা অনেকেই সাদা টুনা নামেও চিনে থাকে। এই মাছের মাংস হালকা
সাদা অথবা গোলাপি রঙের হয়ে থাকে। এই মাছটার আকার অন্যান্য মাছের থেকে ছোট হয়
এবং এর স্বাদ হয় মোলায়েম। এই মাছটা সবথেকে ক্যানজাত টুনা হিসেবে ফেমাস।
স্কিপজ্যাক টুনাঃ এই মাছের ওজন আকারে ছোট হাওয়াই এটা প্রায় ৫ থেকে ৭ কেজির
মতো হয়ে থাকে। এই মাছের শরীরে ডোরা কাটা দাগ থাকে। এই মাছের মাংসের রং গারো
লাল এবং এই মাছের স্বাদ অনেক তীব্র হয়। বিশ্বের মধ্যে প্রায় ৭২পার্সেন্ট
ক্যানজাত টুনা মাছ এই প্রজাতি থেকে তৈরি হয়ে থাকে।
বিগআই টুনাঃ এই মাছের চোখগুলো অনেক বড় আকৃতির হয়ে থাকে এবং এই মাছের মাংস হয়
গাঢ় লাল রংয়ের এবং এর মাংসটি হয় অনেক ঘন এবং অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর। এই মাছ
সমুদ্রের গভীরে পাওয়া যায়। এমনকি এই মাছের স্বাদে বুলুফিনের মতোই। এই মাছ
খেলে হূদরোগের ঝুঁকি কমে কারণ এ মাছের মধ্যে প্রোটিন ও ওমেগা থ্রি ভালো পরিমাণে
থাকে।
ক্যানড টুনা চেনার উপায়
আপনারা অনেকেই ক্যানড টুনা চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তাই এখন আমি
আপনাদেরকে ক্যানড টুনা চেনার উপায়গুলো জানাবো তাই দেরি না করে চলুন জেনে
নেওয়া যাক।
লেবেলঃ প্রথমে আপনাকে এর লেভেল দেখতে হবে। ক্যানড এর গায়ে স্পষ্টভাবে লেখা
থাকবে টুনা অথবা নির্দিষ্ট কোন প্রজাতির নাম যেমনঃ স্কিপজ্যাক, ইয়েলোফিন। এই
প্যাকেজিং এর গায়ে যদি ইন অয়েল লিখা থাকে, তাহলে বুঝতে হবে এটা তেলে
সংরক্ষিত। আর যদি লিখা থাকে ইন ব্রাইন বা ওয়াটার, তাহলে বুঝে নিতে হবে এটা
নোনা পানিতে সংরক্ষিত। এর গায়ে Chunk,Solid এই লেখাগুলো মূলত সে মাছের আকার
কত বড় সেটা বুঝায়।
রং ও টেক্সচারঃ যেটা আসল ক্যানড টুনা মাছ হবে সেটার মাংস সাধারণত হালকা
গোলাপি অথবা সাদা অথবা লাল রঙের হয়ে থাকে। এই মাছের মাংস অনেক শক্ত এবং
আঁশযুক্ত হয়ে থাকে। এটা ভেঙে গেলে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
গন্ধঃ এই মাছের গন্ধ হালকা পরিমানে থাকবে। তবে অতিরিক্ত যদি খারাপ বা বাজে
গন্ধ পাওয়া যায়, তাহলে বুঝতে হবে এটা ভালো মাছ নয়। তাই মাছের গন্ধ নিয়ে
দেখে এই মাছ নির্বাচন বা কিনতে হবে।
পুষ্টিগুণের তথ্যঃ ক্যানডের গায়ে এই মাছের পুষ্টি গুনাগুনের উল্লেখ থাকবে।
অবশ্যই খেয়াল করতে হবে সেখানে প্রোটিন ফ্যাট ক্যালরি তথ্য আছে কিনা এবং
সেখানে চেক করতে হবে উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন ও ওমেগা থ্রি এর তথ্য উল্লেখ আছে
কিনা। কারণ আসল ক্যানড টুনাতে উচ্চ ওমেগা থ্রি ও প্রোটিনের তথ্য উল্লেখ
থাকবে।
মেয়াদঃ অবশ্যই এটি কেনার সময় এর মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ভালোভাবে দেখে
শুনে ক্রয় করতে হবে। এক্সপায়ার ডেট থাকলে সেটা নেওয়া যাবে না যেগুলোর
মেয়াদ অনেকদিন আছে সেগুলো বেছে নিতে হবে। আশা করছি উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনি
ক্যানড টুনা চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
তাজা টুনা মাছ চেনার উপায়
এখন আমি আপনাদেরকে তাজা টুনা মাছ কিভাবে চিনবেন সে সম্পর্কে জানাবো। তাই দেরি না
করে চলুন কিভাবে আপনি তাজা টুনা মাছ চিনতে পারবেন সে উপায় গুলো জেনে নিই।
চোখের দিকে তাকানঃ প্রথমেই এই মাছ তাজা কিনা সেটা চেনার জন্য আপনাকে তার
চোখের দিকে তাকাতে হবে। যদি এই মাছ তাজা হয়, তাহলে তার চোখ পরিষ্কার,
উজ্জ্বল ও স্বাভাবিক গোলাকার হয়ে থাকবে। আর যদি বাসি মাছ হয়, তাহলে তার
চোখ ফ্যাকাসে ঘোলা এবং ভিতরে ঢুকে থাকবে।
রং লক্ষ্য করুনঃ তাজা কিনা সেটা চেনার জন্য আপনাকে তার গায়ের দিকে এবং
রঙের দিকে নজর দিতে হবে। তাজা টুনা মাছের শরীর মসৃণ, চকচকে ও উজ্জ্বল রঙের
হবে। এই মাছের উপরের অংশ গাঢ় নীল এবং নিচের অংশে রুপালি সাদা ভাব থাকবে।
যদি তাজা না হয় তাহলে এর ত্বক শুকিয়ে থাকবে এবং নিস্তেজ ও কালচে দেখাবে।
মাংস রংঃ তাজা অবস্থায় এই মাছের মাংস একদম গারো লালচে অথবা গোলাপি রঙের
হবে। এই মাছের মাংস শক্ত হবে এবং মাংসে চাপ দিলে আবার আগের মত হয়ে যাবে।
যদি তাজা না হয়, তাহলে এ মাংসর রং কালো দেখাবে বা বাদামি দেখাবে এবং চাপ
দিলে মাংস বসে যাবে।
মাছের গন্ধঃ আপনি চাইলে এই মাছের গন্ধ নিয়েও তাজা কিনা সেটা বুঝতে পারবেন।
টুনা মাছ তাজা হলে। এই মাছ থেকে সাগরের মত স্বাভাবিক গন্ধ পাওয়া যাবে। আর
যদি এই মাছ টাটকা না হয়, তাহলে এটা থেকে খারাপ গন্ধ বা পচা গন্ধ বার হবে।
পাখনা ও গিলসঃ টুনা মাছ যদি তাজা হয়, তাহলে এর গিলস হবে উজ্জ্বল লাল
রংয়ের যেটা দেখতে একদম রক্তের মতো টাটকা লাগবে। আর তাজা না হলে গিলস
বাদামি অথবা কালো রঙের হয়ে থাকবে। এর পাখনা গুলো শক্ত না হয়ে যদি নরম বা
ঢিলে হয়ে থাকে। তাহলে বুঝতে হবে এটা তাজা মাছ নয়।
হাত দিয়ে দেখুনঃ টুনা মাছ হাত দিয়ে ধরলে এই মাছ টাটকা কিনা সেটা বোঝা
যাবে এই মাছ যদি টাটকা হয় তাহলে এর শরীর শক্ত হবে এবং টানটান ও মসৃণ
লাগবে। কিন্তু তাজা না হলে এই মাছ হাতে নেওয়ার পর নরম মনে হবে এবং আঠালো
ভাব থাকবে।
টুনা মাছের পুষ্টিগুণ
এখন আমি আপনাদেরকে টুনা মাছের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত
জানাবো। তাই দেরি না করে চলুন এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত
জেনে নিই।
টুনা মাছের মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণের নাম ও পরিমাণ গুলো হচ্ছে
পুষ্টি উপাদানের নাম | পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ | পুষ্টি উপাদানের উপকারিতা |
---|---|---|
ক্যালরি | ১৩০ ক্যালোরি | শরীরের শক্তি যোগাই |
প্রোটিন | ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম | পেশি গঠন করে ও মেরামত করে |
ফ্যাট | ২গ্রাম | শরীরের শক্তি ও কোষকে সুরক্ষিত রাখে |
ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিড | ১.৫ গ্রাম | হূদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটায় |
কোলেস্টেরল | ৫০ মিলিগ্রাম | কোষ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে |
ভিটামিন এ | ২০ মাইক্রো গ্রাম | দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে |
ভিটামিন ডি | ৭ মাইক্রোগ্রাম | হাড়কে শক্ত করে |
ভিটামিন ই | ১মিলিগ্রাম | ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় |
ভিটামিন কে | সামান্য পরিমাণে | রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে |
ভিটামিন বি১ | ০.১ মিলিগ্রাম | স্নায়ু ও মেটাবলিজম উন্নত করে |
ভিটামিন বি২ | ০.২ মিলিগ্রাম | শরীরের মধ্যে শক্তি উৎপাদন করে |
ভিটামিন বি৩ | ১৫ মিলিগ্রাম | শরীরে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে |
ভিটামিন বি৬ | ১ মিলিগ্রাম | মস্তিষ্কের জন্য ভালো |
ভিটামিন বি১২ | ১০ মাইক্রোগ্রাম | মস্তিষ্কের জন্য ভালো |
ফোলেট | ১১ মাইক্রোগ্রাম | রক্ত তৈরি করে |
সোডিয়াম | ৫০মিলিগ্রাম | শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করে |
পটাশিয়াম | ২৯০ মিলিগ্রাম | পেশির কার্যকারিতা বাড়ায় |
ক্যালসিয়াম | ১৪ | হাড়ের ও দাঁতের সঠিক গঠন করে |
আয়রন | ১.৫ মিলিগ্রাম | রক্তের মধ্যে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে |
ম্যাগনেসিয়াম | ৩৫ মিলিগ্রাম | স্নায়ু ও পেশীর জন্য ভালো |
ফসফরাস | ২১০ থেকে ২২০মিলিগ্রাম | হাড়ের দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো করে |
জিংক | ১ মিলিগ্রাম | রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় |
সেলেনিয়াম | ৪০ মাইক্রোগ্রাম | অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে |
কপার | ০.২ মিলিগ্রাম | রক্ত ভালো করে এবং রোগ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করে |
টুনা মাছের মৌসুম ও উৎস
এখন আমি আপনাদেরকে টুনা মাছের মৌসুম ও উৎস সম্পর্কে জানাবো। টুনা মাছ একটি
সামুদ্রিক মাছ হওয়ার কারণে এটা সারা বছরই ধরা যায়। তবে কিছু কিছু সময় এই মাছ
ধরার পরিমাণ কিছুটা কম বা বেশি হয়ে থাকে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকাল বা বর্ষাকালে এই
টুনা মাছ অনেক বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।
অন্যান্য সময়ে অনেক কম পাওয়া যায়। এর কারণ হচ্ছে এই মাছের প্রজননের সময় এবং
সমুদ্রের আবহাওয়ার পরিবর্তন অনুযায়ী এই মাছের চলাফেরাও বদলে যায়। তাই বলা যায়
এই মাছ সব সময় পাওয়া যায় বা ধরা যায়। কিন্তু মৌসুম অনুযায়ী এটা কম বা বেশি
হয়ে থাকে।
- ব্লুফিন টুনাঃ এই মাসটি গ্রীষ্মকালে অর্থাৎ মেয়ে এবং আগস্ট মাছের দিকে উত্তর আটলান্টিক ও ভূমন্ত সাগরের দিকে বেশি পাওয়া যায়।
- ইয়েলোফিন টুনাঃ এই মাছ সারা বছর ধরেই পাওয়া যায় তবে গ্রীষ্মকাল ও বর্ষার মৌসুমে এই মাছ বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।
- আলবাকোর টুনাঃ এই মাছটিও সারাবছর অল্প পরিমাণে পাওয়া যায় কিন্তু শরৎ ও বসন্তকালে সাগরে এই মাছ অনেক ভালো পরিমাণে পাওয়া যায় বা ধরা হয়।
- স্কিপজ্যাক টুনাঃ এটা সারা বছর পাওয়া গেল বর্ষাকালে ও শরৎকালে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।
- বিগ আই টুনাঃ এই মাছটি গ্রীষ্মকালে গভীর সমুদ্র থেকে ভালো পরিমাণে পাওয়া যায়। এই মাছটি মূলত গভীর সমুদ্র ছাড়া খুব পাওয়া যায় না। তাই এই মাছকে ধরার জন্য গভীর সমুদ্রে যাওয়া লাগে।
আশা করছি উপরের আলোচনা থেকে আপনি টুনা মাছের মৌসুম এবং তার উৎস সম্পর্কে
বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
টুনা মাছ খাওয়ার উপকারিতা
এখন আমি আপনাদেরকে টুনা মাছ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। তাই
দেরি না করে চলুন এই মাছ খেলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে জেনে
নেওয়া যাক। যদি আমরা সঠিক নিয়ম মেনে খেতে পারি, তাহলে এটা আমাদের
স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হিসেবে কাজ করবে।
কারণ এই মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। যেটা আমাদের শরীরের পেশিকে
শক্ত করে এবং শরীরের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। টুনা মাছের মধ্যে থাকা
ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিড আমাদের হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখে। এটা শরীরের
খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমায় এবং কোলেস্টেরল মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
এমনকি এটা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে বাড়াতেও সাহায্য করে।
এগুলোর পাশাপাশি টুনা মাছের মধ্যে থাকা ভিটামিন বি১২, ক্যালসিয়াম,
সেলেনিয়াম, আয়রন ও ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন ভালোভাবে
করায় এবং হাড়ের ও দাঁতের সঠিক গঠন করে মজবুত রাখে। সেই সাথে শরীরের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে থাকে। এক কথায় বলা যায় এই মাছ আমাদের শরীরের
পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করার পাশাপাশি।
এটা আমাদেরকে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে রক্ষা করে। যারা তাদের ওজন কমাতে চান বা
ডায়েট করতে চান? তাদের জন্যেও এই টুনা মাছ অনেক উপকারী হিসেবে কাজ করে। কারণ
এই মাছের মধ্যে ক্যালোরি পরিমাণ অনেক কম থাকে এবং চর্বিও অনেক কম থাকে। যার
কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটা যদি নিয়মিত পরিমাণ অনুযায়ী খাওয়া যায়,
তাহলে এটা আমাদের শরীরকে সুস্থ শক্তিশালী ও সক্রিয় করে তুলতে সাহায্য করবে।
টুনা মাছ সংরক্ষণের উপায়
আপনারা অনেকেই টুনা মাছ সংরক্ষণের উপায় সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। এখন আমি
আপনাদেরকে এটি সংরক্ষণ করার কিছু উপায় সম্পর্কে জানাবো। চলুন তাহলে আর
দেরি না করে এটি সংরক্ষণের উপায় সম্পর্কে জেনে নিই।
- আপনি যদি টুনা মাছ অল্প কিছুদিনের জন্য সংরক্ষণ করতে চান? তাহলে এই মাছটিকে আপনি ভালোভাবে ধুয়ে তারপর একটি এয়ার টাইট কনটেইনার বা পরিষ্কার প্লাস্টিক র্যাপে ভালোভাবে মুড়িয়ে এটাকে ফ্রিজে ভেতরে ০-৪ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রেখে দিতে হবে। এতে করে বেশ কিছুদিন এই মাছটি টাটকা হয়ে থাকবে।
- আপনি যদি অনেক দিনের জন্য টুনা মাছ সংরক্ষণ করে রাখতে চান? তাহলে প্রথমে এই টুনা মাছ ভালোভাবে কেটে টুকরো টুকরো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়ে গেলে এই মাছের টুকরোগুলোকে পলিথিনের ব্যাগে অথবা ফ্রিজিং ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে বাতাস বার করে দিতে হবে। এরপর ডিপ ফ্রিজে -১৮ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রেখে দিতে হবে। এতে করে দীর্ঘ দিন ধরে এই মাছ সংরক্ষণ বা ভালো থাকবে।
- আপনি চাইলে এই মাছ রান্না করেও সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। এই মাছকে ভালোভাবে কেটে বেছে পরিষ্কার করে তেলে ভেজে বা রান্না করে আপনি ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। এভাবে আপনি অল্প কিছুদিনের জন্য সংরক্ষণ করতে চাইলে নরমাল ফ্রিজে এবং বেশি দিনের জন্য সংরক্ষণ করতে চাইলে ডিপ ফ্রিজে রাখতে পারেন।
- ক্যানড টুনা মাছের প্যাকেজিং খোলার আগে এটা ঘরের তাপমাত্রায় অনেকদিন ধরে সংরক্ষণ করা যায়। তবে এটির প্যাকেজিং একবার খোলার পর সেটা অবশ্যই পরিষ্কার স্টিলের পাত্রে ফ্রিজের মধ্যে রাখতে হবে। এভাবে আপনি এক বা দুই দিন সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন।
আশা করছি উক্ত আলোচনা থেকে আপনি টুনা মাছ কিভাবে সংরক্ষণ করতে হবে সে
সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।
টুনা মাছের স্বাদ কেমন
আপনারা অনেকেই টুনা মাছের স্বাদ কেমন এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। টুনা
মাছের স্বাদ অন্যান্য সব মাছের থেকে আলাদা এবং অনেক সুস্বাদু ও ফেমাস।
টুনা মাছের মাংস সাধারণত গাঢ় লাল রঙের অথবা গোলাপি রঙের হয়ে থাকে। এই
মাংস খেতে হালকা মিষ্টি ভাব লাগে এবং সমুদ্রের একটা ফ্রেশ অনুভূতি পাওয়া
যায়। টুনা মাছের মাংস খেতে অনেক নরম এবং রসালো হয়ে থাকে।
এমনকি কিছু কিছু সময় এর মাংস স্টেক এর মত শক্ত হয়ে থাকে, যার কারণে এটা
খেতে ভালোই লাগে। এই মাছের সব থেকে মজার ব্যাপার হচ্ছে অন্যান্য মাছের
তুলনায় এই মাছের মধ্যে কাটা কম থাকে। যার কারণে এটা সহজেই খাওয়া যাই।
টুনা মাছ এতটাই সুস্বাদু যে এটা আপনি যেভাবে রান্না করেন না কেন খেতে
অনেক স্বাদ ও খুব মজাদার হয়ে থাকে। এছাড়াও এর পুষ্টিকর দিক তো আছেই
যেটা শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে।
টুনা মাছের দাম কত
আপনারা অনেকেই টুনা মাছের দাম কত এই বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। টুনা মাছের
দাম মূলত নির্ভর করে এই মাছের ওজন আকার এবং মৌসুম অনুযায়ী। এছাড়াও
বাজার অনুযায়ী দাম কম বা বেশি হয়ে থাকে। আপনি যদি ব্লুফিন টুনা মাছ
কিনতে চান? তাহলে এটার দাম সাধারণত একটু বেশি হয়ে থাকে।
কারণ এই মাছটি অন্যান্য সব মাছের থেকে বড় হয় এবং খেতে অনেক সুস্বাদু
হয়। আর আপনি যদি আলবাকোর, ইয়েলোফিন অথবা স্কিপজ্যাক টুনা নিতে চান?
তাহলে এর দাম অনেক সস্তায় পাবেন। যেগুলো তাজা টুনা মাছ সেই মাছগুলো
কেজি হিসেবে বেশি দাম হয়ে থাকে। আর আপনি যদি ক্যানড টুনা নিতে চান?
তাহলে এটার দাম কম হবে।
বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি তাজা টুনা মাছের দাম প্রায় ৭০০ থেকে ২০০০
টাকা বা এর থেকেও বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে। আর আপনি যদি ক্যানড টুনা
নিতে চান? তাহলে এটা আপনি দোকান থেকে বা বিভিন্ন সুপারশপগুলো থেকে
প্রতি ক্যান ৩০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। মৌসুম ও সময়
অনুযায়ী এবং স্থান অনুযায়ী এই মাছের দাম কম বা বেশি হতে পারে।
FAQ/টুনা মাছ সম্পর্কে আলোচিত প্রশ্ন ও উত্তর
এখন আমি আপনাদেরকে টুনা মাছ সম্পর্কে কিছু আলোচিত প্রশ্নের উত্তর
জানাবো। তাই দেরি না করে চলুন সে আলোচিত প্রশ্নের উত্তর গুলো
সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
টুনা মাছের অন্য নাম কী?
উত্তরঃ টুনা মাছের নাম মূলত বিভিন্ন প্রজাতি অনুযায়ী এবং অঞ্চলের
ওপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন টুনা, ইয়েলোফিন টুনা,
ব্লুফিন টুনা, সাদা টুনা, স্কিপজ্যাক টুনা, সাগরের টুনা, টুনা ফিস।
টুনা মাছ কি হালাল?
উত্তরঃ টুনা মাছ হালাল কারণ এই মাছটি সমুদ্রের মাছ। আর সমুদ্রের মাছ
সাধারণত হালাল ধরা হয়। কারণ এই মাছ তার প্রকৃতির নিয়মে সমুদ্রের
পানিতে জন্মায় এবং এটিকে খাওয়ার জন্য কোন জবাবদিহি লাগে না।
টুনা মাছের ওজন কত?
উত্তরঃ টুনা মাছের ওজন মূলত নির্ভর করে তার প্রজাতির উপর। কারণ
এই মাছের এক এক প্রজাতির এক এক রকম ওজন হয়ে থাকে। যেমন আলবাকোর
টুনার ওজন সাধারণত ৫ থেকে ১৪ কেজি হয়ে থাকে, ইয়েলোফিন টুনার ওজন
২০থেকে ২০০কেজি, বিগআই টুনার ওজন ৫০ থেকে ২০০ কেজি, ব্লুফিন টুনার
ওজন ২০০ থেকে ৬০০ কেজি ও স্কিপজ্যাক টুনা ৫ থেকে ৭ কেজি হয়ে
থাকে।
বাংলাদেশের টুনা মাছ পাওয়া যায় কি?
উত্তরঃ বাংলাদেশের যেগুলো সমুদ্র অঞ্চল সেগুলোতে টুনা মাছ পাওয়া
যায়। বিশেষ করে যেসব অঞ্চল বঙ্গোপসাগরের উপকূলে। সেসব অঞ্চলে বেশি
টুনা মাছ পাওয়া যায়। বঙ্গোপসাগরে জেলেরা এই টুনা মাছ ধরে থাকে। এই
টুনা মাছ তাজা পেতে হলে আপনাকে কক্সবাজার, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম ও
চাঁদপুর অঞ্চলে যেতে হবে। বাঙালি যারা জেলেরা আছে তারা তাদের নৌকা ও
বাণিজ্যিক ট্রলারে করে সামুদ্রিক টুনা মাছগুলো ধরে থাকে। তাই বলা
যায় এই মাছ বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ
আসল মুলতানি মাটি চেনার উপায় সম্পর্কে জানুন
টুনা মাছ খেলে কি হয়?
উত্তরঃ টুনা মাছ যদি সঠিক নিয়ম মেনে পরিমাণ অনুযায়ী খাওয়া যায়,
তাহলে এটা শরীরের রক্তের ঘাটতি পূরণ করে। সেই সাথে পুষ্টির যত ঘাটতি
থাকে সে পুষ্টির ঘাটতি ও পূরণ করতে সাহায্য করে। শরীরের মধ্যে রক্ত
সঞ্চালন বাড়ায়। যার কারণে শরীরের মধ্যে সঠিকভাবে রক্ত চলাচল করতে
পারে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। দাঁত ও
হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এছাড়াও আরো অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়।
তবে অবশ্যই সেটা পরিমাণ অনুযায়ী খেতে হবে।
লেখকের মন্তব্যঃ টুনা মাছ চেনার উপায়
আমি আমার আর্টিকেল এর মধ্যে টুনা মাছ চেনার উপায় সহ টুনা মাছের
প্রকারভেদ, ক্যানড টুনা চেনার উপায়,
টুনা মাছের পুষ্টিগুণ, টুনা মাছের মৌসুম ও উৎস, টুনা মাছ খাওয়ার
উপকারিতা এবং এই টুনা মাছ সংরক্ষণের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত
আলোচনা করেছি। আশা করছি আমার আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনি টুনা মাছ
সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে পেরেছেন।
আপনি যদি আমার আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন? তাহলে অবশ্যই
আমার এই আর্টিকেলটি আপনি আপনার পরিচিত মানুষদের কাছে শেয়ার করবেন
এবং তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দেবেন। এছাড়াও আমার আর্টিকেলটি
নিয়ে আপনার যদি কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে অথবা আপনি যদি নতুন কোন
বিষয়ে জানতে চান? তাহলে নিচে থাকা কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে
জানাবেন।
অপরাজিতা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url