আসল মুলতানি মাটি চেনার উপায় জানুন এখনই

আসল মুলতানি মাটি চেনার উপায় এবং মুলতানি মাটি দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় সম্পর্কে এখন আমি আমার আর্টিকেলের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আসল-মুলতানি-মাটি-চেনার-উপায়
আপনি যদি মুলতানি মাটির উপকারিতা জানতে চান? তাহলে আমার আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়বেন। চলুন তাহলে দেরি না করে মুলতানি মাটি সম্পর্কে সকল তথ্য জেনে নিই।

পেজ সুচিপত্রঃ আসল মুলতানি মাটি চেনার উপায়

আসল মুলতানি মাটি চেনার উপায়

আপনারা অনেকে আছেন যারা আসল মুলতানি মাটি চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। মুলতানি মাটি সুন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অনেক জনপ্রিয় একটি প্রাকৃতিক উপাদান। তবে বর্তমান সময়ে বাজারে অনেক নকল মুলতানি মাটি পাওয়া যাচ্ছে। এই নকল মুলতানি মাটিগুলোতে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ও রাসায়নিক পদার্থ মেশানো থাকে।
তাই আসল মুলতানি মাটি যদি না হয় তাহলে এটা ব্যবহার করে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে না বরং এটা ত্বকের ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। তাই অবশ্যই মুলতানি মাটি কেনার সময় এটি আসল কিনা সে সম্পর্কে জানতে হবে। এখন আমি আপনাকে কিছু সহজ উপায় সম্পর্কে জানাবো। যে উপায়গুলো ব্যবহার করে আপনি খুব সহজে আসল মুলতানি মাটি চিনতে পারবেন। উপায় গুলো হচ্ছে
  • মুলতানি মাটি আসল কিনা সেটা জানার জন্য প্রথমে আপনাকে এই মাটির রং দেখতে হবে। যেটা আসল মুলতানি মাটি সেই মাটির রং মূলত হালকা বাদামী রঙের হয়ে থাকে। এছাড়াও এটি হালকা হলদে বা ফ্যাকাসে রংয়ের হয়ে থাকে। অবশ্যই ভালোভাবে খেয়াল করতে হবে। যদি এই মাটি সাধারণ রঙের থেকে বেশি বেশি রং মনে হয় অথবা অনেক বেশি চকচক করে। তাহলে বুঝতে হবে এটা ভেজাল যুক্ত মুলতানি মাটি। আর ভেজাল যুক্ত এই মাটি মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়।
  • আপনি আরও একটি উপায়ে এই মাটি আসল কিনা জানতে পারবেন। সেই উপায়টি হচ্ছে এটা হাতে স্পর্শ বা নেড়ে আপনি যাচাই করতে পারবেন, এই মাটি আসল নাকি ভেজাল যুক্ত। এই মাটি হাতে নাড়ার পর যদি গুড়া ধরনের মসৃণ মাটির মতো মনে হয়। তাহলে বুঝতে হবে এটি আসল মুলতানি মাটি। এছাড়াও মাটি যেমন পানির সাথে মিসলে পেস্ট হয়ে যায়। সেই রকম ভাবেই আসল মুলতানি মাটিও পানির সাথে মিশে একদম মাটির মত পেস্ট হয়ে যায়।
  • আসল যেটা মুলতানি মাটি হবে এই মাটির গন্ধ একদম সাধারণ মাটির মতো হবে। যদি এই মাটির গন্ধ অস্বাভাবিক হয় অর্থাৎ এই মাটির গন্ধ যদি সুগন্ধের মত ছড়াই বা ক্যামিকেল জাতীয় গন্ধ পাওয়া যায় তাহলে বুঝে নিতে হবে এটা নকল মাটি। আর এই নকল মাটি মোটেও ব্যবহার করা যাবে না তা না হলে এটা ত্বকের ক্ষতি করবে। তাই মুলতানি মাটি কিনার সময় অবশ্যই তার গন্ধ চেক করে কিনবেন।
  • যদি মুলতানি মাটি পানির সাথে মেশানোর পর মাটি যেভাবে পেস্ট হয় সেই রকম হয় এবং এই মাটি যদি পানির সাথে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে কিছুক্ষণের জন্য রেখে দেওয়া হয়, তাহলে এটা যদি মাটির মতো শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে এটা আসল মুলতানি মাটি। এছাড়াও এটি ভালোভাবে পেস্ট করে মুখে লাগানোর পর যদি মুখে ঠান্ডা একটা অনুভূতি পাওয়া যায় এবং শুকানোর পর ত্বক যদি টানটান হয়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে এটা আসল মাটি। আর নকল মাটি হলে এটা ত্বকে লাগানোর পর ত্বকে জ্বালাপোড়া শুরু করবে এবং অস্বস্তি একটা ভাব তৈরি করবে।
উপরে আমি যে উপায়গুলো আপনাকে বললাম। এই উপায় গুলো সঠিকভাবে মেনে আপনি যদি মুলতানি মাটি কিনতে পারেন, তাহলে অবশ্যই আপনি আসল মাটি পাবেন। তবে সবথেকে ভালো হয়। আপনি যদি আপনার কোন পরিচিত ব্যক্তির দোকান থেকে এই মাটি সংগ্রহ করেন। কারণ পরিচিত ব্যক্তির দোকান থেকে সংগ্রহ করলে আসল মুলতানি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এই মাটি কেনার সময় অবশ্যই সতর্ক ও ভালোভাবে লেভেল দেখে ও জেনে শুনে কিনবেন।

মুলতানি মাটি দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়

আপনারা অনেকে মুলতানি মাটি দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। মুলতানি মাটি মূলত ফর্সা বা ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আপনি যদি সঠিক নিয়ম মেনে এই মুলতানি মাটি আপনার ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে আপনার ত্বক মসৃণ, উজ্জ্বল হবে ত্বকের দাগ দূর হবে। সেই সাথে ত্বক হবে টানটান ও সতেজ। চলুন কিভাবে আপনি এই মাটি ব্যবহার করে ফর্সা হবেন সেই উপায়গুলো জেনে নিই। 

ফর্সা হওয়ার জন্য এই মাটির সাথে গোলাপজল ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট করতে হবে।  এরপর সেই পেস্ট মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ধুয়ে নিতে হবে। এতে করে মুখের ত্বক হবে ফর্সা। এছাড়াও আপনি এই মাটির সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে আপনার ত্বকে লাগাতে পারেন। এতে আপনার ত্বক আস্তে আস্তে সুন্দর হবে এবং ত্বক প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে।

আপনি যদি মুলতানি মাটির সাথে এক চামচ টক দই, এক চিমটি হলুদ ও দুই চামচ মুলতানি মাটি একসাথে মিক্স করে মুখে লাগান। তাহলে এটা আপনার ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করবে এবং ত্বকের সমস্যা দূর করে ত্বককে রাখবে ভালো। আপনাকে আমি যে উপায়গুলো বললাম এই উপায় গুলো মেনে আপনি যদি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে আপনার ত্বক কিছুদিনের মধ্যেই ফর্সা হয়ে যাবে।

মুলতানি মাটির উপকারিতা

মুলতানি মাটির উপকারিতা সম্পর্কে এখন আমি আপনাদেরকে জানাবো। মুলতানি মাটি যুগ যুগ ধরেই ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য এবং চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এই মুলতানি মাটি আপনি যদি সঠিক নিয়মে ব্যবহার করতে পারেন।

তাহলে এটা থেকে আপনি অনেক উপকারিতা পাবেন। অনেক মানুষ তাদের ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করার জন্য এই মুলতানি মাটি ব্যবহার করে থাকে। এই মুলতানি মাটি ব্যবহার করলে আপনি কি কি উপকারিতা পাবেন চলুন সেই উপকারিতা গুলো জেনে নেওয়া যাক।
  • আপনি যদি মুলতানি মাটি ব্যবহার করেন, তাহলে এটা আপনার ত্বককে ফর্সা ও উজ্জ্বল করবে। কারণ মুলতানি মাটির মধ্যে এমন কিছু প্রাকৃতিক গুণ আছে যেগুলো ত্বকের ময়লা দূর করে এবং ত্বকের তেল ও ত্বকের মৃত কোষ গুলোকে সরাতে সাহায্য করে। যার কারণে ত্বক হয় উজ্জ্বল ও ফর্সা। এছাড়াও এই মুলতানি মাটি নিয়মিত ব্যবহার করা হলে, এটা ত্বকের ব্রণ ও পিম্পল কমাতেও সাহায্য করে। যাদের মুখে ব্রণের সমস্যা আছে তাদের জন্য এই মাটি অনেক উপকারী।
  • কারণ এই মাটির মধ্যে এন্টিসেপটিক গুনাগুন আছে, যেটা মূলত মুখের ব্রণ কমিয়ে থাকে। আপনার ত্বক যদি অনেক বেশি তেল তেল হয়ে থাকে, এই তেল কমাতেও সাহায্য করে মুলতানি মাটি। মুখের ত্বক তেল তেল থাকার কারণে ত্বকে অনেক সমস্যা তৈরি হয় এবং ত্বকে ব্রণ বার হয়। তাই ত্বকের এই তেল কমানোর জন্য মুলতানি মাটি অনেক ভালো কাজ করে থাকে, যার কারণে ত্বক থাকে তেল মুক্ত। যাদের ত্বকে অনেক দাগ আছে বা ছোট ছোট খাল আছে, তাদের জন্যেও এই মাটি অনেক উপকারী।
  • এই মাটি আপনি যদি লেবুর রস অথবা টমেটো রস দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে মুখে মাখতে পারেন। তাহলে এটা আপনার মুখের দাগ ও খাল দূর করবে এবং ত্বককে করবে সতেজ। এই মুলতানি মাটির সাথে গোলাপজল অথবা টক দই মিশিয়ে যদি আপনি মুখে মাখতে পারেন, তাহলে এটা থেকে আপনি ভালো উপকার পাবেন। এই মাটি মুখে লাগিয়ে শুকানোর পর ত্বক অনেক টান ধরে। এর কারণে ত্বকের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।
  • যার কারণে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং ত্বক থাকে টাইট। যাদের ত্বকে রোদে পোড়া দাগ আছে, তাদের এই দাগ দূর করার জন্য এই মাটির সাথে টমেটোর রস, শসার রস অথবা লেবুর রস মিশিয়ে যদি মুখে লাগানো যায়। তাহলে এটা রোদে পোড়া দাগ দূর করে দিবে। শুধুই যে এটা ত্বকের উপকার করে তা কিন্তু নয় এটা ত্বকের পাশাপাশি চুলের জন্যেও অনেক উপকারী।
  • মুলতানি মাটি যদি চুলে ব্যবহার করা হয়, তাহলে এটা মাথার ত্বককে পরিষ্কার রাখে এবং চুলের গোড়াতে প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দেয়। যার কারণে চুলের গোড়া হয় শক্ত ও চুল পড়া কমে, মাথার খুশকি কমে, চুল হয় নরম ও মসৃণ এবং মাথায় নতুন চুল গজায়। এটি ত্বককে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে গরমের দিনে এটি ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের জ্বালাপোড়া কমে এবং আরাম অনুভব করা যায়।
আশা করছি উপরের আলোচনা থেকে আপনি এই মাটির উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। অবশ্যই এই মাটিটি ব্যবহার করতে হবে সঠিক নিয়ম মেনে তাহলে এর থেকে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।

FAQ মুলতানি মাটি সম্পর্কে আলোচিত কিছু প্রশ্নের উত্তর

এখন আমি আপনাদেরকে মুলতানি মাটি সম্পর্কে আলোচিত কিছু প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে জানাবো। তাই দেরি না করে চলুন সেই আলোচিত প্রশ্নের উত্তর গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া নিই।

মুলতানি মাটি চুলে কিভাবে ব্যবহার করতে হয়?

উত্তরঃ মুলতানি মাটি চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য অনেক উপকারী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এই মাটিটি আপনি অনেক রকম ভাবে আপনার চুলে ব্যবহার করতে পারেন। আপনার চুলকে পরিষ্কার রাখতে চাইলে দুই থেকে তিন চামচ মুলতানি মাটির সাথে পানি মিশিয়ে ভালোভাবে চুলের গোড়ায় ও মাথার ত্বকে লাগাতে হবে। এছাড়াও মাথার খুব খুশকি দূর করার জন্য আপনি এই মাটির সাথে লেবুর রস, এলোভেরা, টক দই, কাঁচা দুধ অথবা মধুর সাথে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করতে পারেন।

মুলতানি মাটি খাওয়া ভালো নাকি খারাপ?

উত্তরঃ অনেকে প্রশ্ন করেছেন মুলতানি মাটি খাওয়া ভালো নাকি খারাপ। মুলতানি মাটি আসলে ত্বকের যত্ন ও চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি একটি প্রাকৃতিক উপাদান বিশেষ করে মানুষ রূপচর্চার জন্য এটি ব্যবহার করে থাকে। এটি কখনোই খাওয়া উচিত নয়। কারণ মুলতানি মাটি বিভিন্ন খনিজ উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। এছাড়াও এর মধ্যে অনেক ক্ষতিকর উপাদান থাকে যেগুলো মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মোটে ভালো নয়। তাই এটি খাওয়া যাবেনা।

মুলতানি মাটি দিয়ে ওপেন পোরস দূর করার উপায় কি?

উত্তরঃ ওপেন পোরস মানে হচ্ছে তৈলাক্ত ত্বক। ত্বক যদি অতিরিক্ত তৈলাক্ত হয় তাহলে ত্বকের এই তেল দূর করার জন্য আপনি মুলতানি মাটির সাথে গোলাপজল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও আপনি এই মাটির সাথে শসার রস, টমেটোর রস, লেবুর রস অথবা ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এইভাবে যদি আপনি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন আপনার ত্বকে মাখতে পারেন। তাহলে আপনার ত্বকের ওপেন পোরস দূর হয়ে যাবে।

মুলতানি মাটি কোনটি খাওয়া ভালো?

উত্তরঃ আপনারা জানতে চেয়েছেন মুলতানি মাটি কোনটি খাওয়া ভালো। আসলে মুলতানি মাটি কোনটি খাওয়া ভালো নয়। কারণ মুলতানি মাটি বিভিন্ন খনিজ উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়। এর মধ্যে এমন কিছু ক্ষতিকর উপাদান আছে যেগুলো মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী নয়। এটা শুধুমাত্র ব্যহিক রূপচর্চার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটা যদি কোন মানুষ খেয়ে থাকে তাহলে তার বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে যেমন পেটের সমস্যা কোষ্ঠকাঠিন্য এমনকি এটা পেটের মধ্যে বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে। এক কথায় বলা যায় মুলতানি মাটি খাওয়া উচিত নয়।

মুলতানি মাটি খেলে কি মাসিক হয়?

উত্তরঃ অনেকেই মুলতানি মাটি খেলে মাসিক হয় কিনা জানতে চাই। আসল কথা হচ্ছে মুলতানি মাটি খাওয়াই যাবে না। কারণ এটি খাওয়া মোটেও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয় বরঞ্চ এটা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বিপদজনক। তাই মুলতানি মাটি খেলে কি মাসিক হয় এই প্রশ্নটাই মূলত ভিত্তিহীন। কারণ যেখানে এই মুলতানি মাটি খাওয়াই উচিত নয়। সেখানে এই মাটি খেলে মাসিক হয় এই প্রশ্নের কোন যুক্তি থাকে না। তাই বলা যায় মুলতানি মাটি খেলে মাসিক হয় না বরং এটি খাওয়া ক্ষতিকর।

মুলতানি মাটি ব্যবহারের নিয়ম

এখন আমি আপনাদেরকে মুলতানি মাটি ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জানাবো। কারন আপনি যদি এটির সঠিক ব্যবহার না জানেন, তাহলে এটা থেকে ভালো উপকার পাবেন না। তাই ভালো উপকার পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে এটি ব্যবহারের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। চলুন সেই নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

মুলতানি মাটি মূলত ত্বকের যত্ন এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অনেকেই এই মাটি অনেক রকম ভাবে ব্যবহার করে এর থেকে উপকার নিয়ে থাকে। এটা মূলত ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার জন্য বিভিন্ন রকম উপায়ে ব্যবহার করা যায়। যেমন আপনি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য এই মাটির ব্যবহার করতে পারেন।

প্রথমে দুই চামচ মুলতানি মাটি নিতে হবে, এর সাথে গোলাপজল মিশিয়ে ভালোভাবে পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগাতে হবে। এটি মুখে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাখার পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এইভাবে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এটি ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বেড়ে যাবে। আপনার ত্বক যদি তেল তেলে হয়, তাহলে এই মুলতানি মাটিতে আপনি লেবুর রস ও গোলাপজল মিশিয়ে লাগাতে পারেন। এতে করে আপনার ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর হয়ে যাবে।

এছাড়াও এই মাটি মুখের ব্রণ কমাতেও সাহায্য করে। মুখের ব্রণ দূর করার জন্য আপনি এক চামচ মুলতানি মাটি, এক চামচ চন্দনের গুঁড়ার সাথে লেবুর রস ও গোলাপজল মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার মুখের ব্রণ খুব সহজেই দূর হয়ে যাবে এবং মুখ থাকবে ফ্রেশ। চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য আপনি মুলতানি মাটির সাথে টক দই অথবা অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগাতে পারেন।

এতে করে আপনার চুলের গোড়া শক্ত হবে এবং চুল পড়া কমবে সেই সাথে চুল থাকবে ভালো। আপনি মুলতানি মাটি গরমের সময় পুদিনা পাতার রসের সাথে মিশিয়ে যদি মুখে লাগাতে পারেন, তাহলে এটা আপনার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো, ত্বক ঠান্ডা ও সতেজ রাখতে সাহায্য করবে। এই মাটি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিনের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। এর থেকে বেশি ব্যবহার করলে ত্বকের সমস্যা হতে পারে। আশা করছি এই আলোচনা থেকে আপনি মুলতানি মাটি ব্যবহারের নিয়ম জানতে পেরেছেন।

মুলতানি মাটি কি দিয়ে তৈরি

আপনারা অনেকেই মুলতানি মাটি কি দিয়ে তৈরি জানতে চেয়েছেন। মুলতানি মাটি মূলত এক ধরনের অ্যালুমিনিয়াম সিলিকেট খনিজ উপাদান থেকে তৈরি হয়। এই মুলতানি মাটির মধ্যে এই উপাদান ছাড়াও আরো বেশ কিছু খনিজ উপাদান মিশ্রিত থাকে উপাদানগুলো ত্বক ও চুলের জন্য অনেক উপকারী। মুলতানি মাটি মূলত এক ধরনের প্রাকৃতিক নরম কাদামাটি।
মুলতানি মাটির মধ্যে অ্যালুমিনিয়াম সিলিকেট, কাওলিনাইট, আয়রন অক্সাইড, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম সহ বেন্টোনাইট, ডলোমাইট থাকে। এই উপাদান গুলো মূলত মুখের ও চুলের অতিরিক্ত তেল দূর করে এবং ত্বকের যত ময়লা থাকে সে ময়লাগুলোকে টেনে বার করে। চুল ও ত্বকের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা মেটায়।

মুলতানি মাটি দিয়ে ব্রণ দূর করার নিয়ম

এখন আমি আপনাদেরকে মুলতানি মাটি দিয়ে ব্রণ দূর করার নিয়ম সম্পর্কে জানাবো। আপনার যদি ত্বকে ব্রণ হয়ে থাকে, তাহলে আমি যে নিয়ম আপনাকে এখন বলবো সে নিয়ম গুলো ভালোভাবে মেনে চলবেন। তাহলে দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই আপনার ত্বক থেকে ব্রণ দূর হয়ে যাবে। চলুন তাহলে কিভাবে আপনি মুলতানি মাটি দিয়ে ব্রণ দূর করবেন সে নিয়ম জেনে নিই।
  • আপনার ত্বক থেকে ব্রণ দূর করার জন্য আপনি প্রথমে ১ থেকে ২ চামচ মুলতানি মাটি তার সাথে গোলাপজল মেশাবেন এবং এক চামচ চন্দনের গুড়া দিবেন। এরপর এই তিনটি উপকরণকে ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট বানাবেন। ভালোভাবে পেস্ট বানানো হলে, এটা আপনি আপনার মুখে ভালোভাবে লাগাবেন। মুখে লাগানোর ২০ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলবেন। এইভাবে আপনি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন করবেন। এই নিয়মে আপনি যদি এই মাটি ব্যবহার করেন, তাহলে দেখবেন আস্তে আস্তে আপনার ব্রণ ভালো হয়ে গেছে।
  • আপনার ত্বকের ব্রণ ভালো করার জন্য আপনি মুলতানি মাটির সাথে লেবুর রস, গ্লিসারিন ও গোলাপজল মিশিয়ে ভালোভাবে সেটাকে পেস্ট বানিয়ে আপনার মুখে লাগাতে পারেন। এটি মুখে লাগানোর পর প্রায় ২০ মিনিট রাখবেন। তারপর এটি শুকিয়ে গেলে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলবেন। এইভাবে আপনি সপ্তাহে এটাও দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করবেন। তাহলে আপনি ভালো ফলাফল পাবেন।
  • ত্বকের ব্রণ দূর করার জন্য আপনি আরও একটি নিয়মে এই মুলতানি মাটি ব্যবহার করতে পারেন। সে নিয়মটি হচ্ছে দুই চামচ মুলতানি মাটি তার মধ্যে এক চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। আপনি চাইলে এতে সামান্য পরিমাণে পানি দিতে পারেন। ভালোভাবে এটা পেস্ট বানানো হয়ে গেলে। এই উপকরণটি আপনি আপনার মুখে অথবা ব্রণের উপর ভালোভাবে লাগাবেন। এই উপকরণটি প্রায় আধা ঘন্টা মুখে লাগিয়ে রাখবেন তারপর মুখ ধুয়ে ফেলবেন। এভাবে আপনি নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের ব্রণ দূর হয়ে যাবে।
  • আপনি আপনার ত্বকের ব্রণ দূর করার জন্য মুলতানি মাটির সাথে এলোভেরার জেল তার সাথে এক চামচ বেসন ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। ভালোভাবে এই তিনটি উপকরণ মিশিয়ে নেওয়ার পর এই পেস্ট মুখে ব্রণের স্থানগুলোতে অথবা পুরো মুখে লাগাতে হবে। ভালোভাবে এই উপকরণটি লাগানোর পর এটি যখন ভালোভাবে শুকিয়ে যাবে তখন আপনি এটি পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন এইভাবে আপনি এই উপকরণটি সপ্তাহে দুইবার অথবা তিনবার ব্যবহার করবেন দেখবেন আপনার মুখের ব্রণ দূর হয়ে গেছে।
উপরে আমি মুলতানি মাটি ব্যবহার করে আপনি কিভাবে ব্রণ দূর করবেন তার নিয়ম সম্পর্কে জানিয়েছি। অবশ্যই আমি যে নিয়মগুলো বলেছি এই নিয়মে আপনি যদি এই মাটি ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে আপনার ত্বকের ব্রণ খুব তাড়াতাড়ি দূর হয়ে যাবে এবং ত্বক উজ্জ্বল হবে। সেই সাথে ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর হবে পাশাপাশি ত্বক হবে সতেজ।

মুলতানি মাটি চুলে ব্যবহারের নিয়ম

মুলতানি মাটি চুলে ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে এখন আমি আপনাদেরকে বিস্তারিত জানাবো। যাতে করে আপনি সঠিক নিয়মে খুব সহজেই আপনার চুলে মুলতানি মাটি ব্যবহার করতে পারেন এবং এর থেকে ভালো উপকার পেতে পারেন। চলুন তাহলে আর দেরি না করে মুলতানি মাটি চুলে কিভাবে ব্যবহার করবেন তার নিয়ম জেনে নেওয়া যাক।

আপনি যদি মুলতানি মাটি সঠিক নিয়মে ব্যবহার করেন। তাহলে এটা আপনার মাথার ত্বকে অতিরিক্ত তেল ও ময়লা দূর করতে সাহায্য করবে। মাথার খুশকি কমবে, অতিরিক্ত চুল পড়া কমবে এবং চুল হবে নরম ও মসৃণ সেই সাথে মাথা থাকবে ঠান্ডা। এই মাটি আপনি আপনার চুলের যত্নে ব্যবহার করার জন্য প্রথমে টক দই তার সাথে লেবুর রস এবং পরিমান মত মুলতানি মাটি ভালোভাবে মিশিয়ে নিবেন।

এই মিশ্রণটি ভালোভাবে মেশানো হলে এটা চুলের গোড়ায় ভালোভাবে লাগাতে হবে। এটা মাথার ত্বকে চুলের গোড়ায় ও চুলে ভালোভাবে লাগানো হলে ৩০ মিনিট রাখার পর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর আপনি হালকা মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন। খেয়াল রাখবেন খুব বেশি শক্তিশালী শ্যাম্পু ব্যবহার না করা। এতে চুল আরো শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।

আপনি চাইলে মুলতানি মাটির সাথে এলোভেরা জেল গোলাপজল মেশাতে পারেন। এই মিশ্রণটি ভালোভাবে মেশানো হলে এটা চুলের ত্বকে ও চুলে ভালোভাবে লাগাতে হবে। লাগানোর ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে আপনি যদি সপ্তাহে দুইবার এই মিশ্রণটি ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে আপনার চুল চুলের স্বাস্থ্য ভালো হবে। চুল হবে বড় ঘন ও চুলের গোড়া হবে শক্ত।

এছাড়াও আপনি এই মুলতানি মাটির সাথে একটি কাঁচা ডিম ভেঙে ভালোভাবে মিক্স করে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ৩০ মিনিট রাখার পর ধুয়ে ফেলতে পারেন। এটাতে চুলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে এবং চুলের স্বাস্থ্য থাকবে ভালো। উপরে আমি যে ব্যবহারের নিয়ম গুলো বললাম এইভাবে আপনি সপ্তাহে দুই দিন যদি ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে আপনার চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং এর থেকে আপনি ভালো ফলাফল পাবেন।

মুলতানি মাটি দিয়ে ফেসপ্যাক

আপনারা অনেকে মুলতানি মাটি দিয়ে ফেসপ্যাক বানাতে হয় কিভাবে সেটা জানতে চেয়েছেন। মুলতানি মাটি যুগ যুগ ধরেই রূপচর্চার জন্য ব্যবহার করা হয়ে আসছে। মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক বানিয়ে যদি আপনি ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে এটা আপনার ত্বকের অতিরিক্ত তেলকে দূর করবে।

সেই সাথে ত্বকের ভেতর থেকে ময়লা বার করবে। মুখের ব্রণ কমাবে এবং মুখে গড়ে তুলবে সতেজ ও সুন্দর। যার কারণে অকালে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ার রোদ হবে। এখন আমি আপনাদেরকে মুলতানি মাটি দিয়ে কিভাবে ফেসপ্যাক তৈরি করতে হয় সে সম্পর্কে জানাবো। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
  • আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয়, তাহলে ত্বকের তেল দূর করার জন্য আপনি দুই চামচ মুলতানি মাটি নিবেন। তার সাথে এক চামচ গোলাপ জল, চাইলে টমেটোর রসও দিতে পারেন। এইভাবে তিনটি মিশ্রণ কে মিক্স করে ত্বকে ভালোভাবে লাগাতে হবে। লাগানোর ৩০ মিনিট পর যখন এই মিশ্রণটি শুকিয় যাবে তখন ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে আপনি এই ফেসপ্যাকটি ত্বকের তেল দূর করার জন্য সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন।
  • শুষ্ক ত্বকের জন্য আপনি এই মুলতানি মাটি দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারেন। প্রথমে দুই চামচ থেকে তিন চামচ মুলতানি মাটি নিতে হবে। তার সাথে এক চামচ কাঁচা দুধ ও এক চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট বানাতে হবে। ভালোভাবে পেস্ট বানানো হলে, সেই পেস্ট ত্বকে লাগাতে হবে। ত্বকে লাগানোর ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই ফেসপ্যাকটিও আপনি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন।
  • ত্বকে যদি ব্রণ থাকে সেই ব্রণ দূর করার জন্য আপনি মুলতানি মাটির সাথে লেবুর রস ও অ্যালোভেরার জেল মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারেন। এই তিনটি উপাদান ভালোভাবে মিশানো হলে। সেই মিশ্রণটি ত্বকের ব্রণ অথবা পুরো ত্বকে লাগাতে হবে। তারপর ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখার পর মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে মুখে থাকা ব্রনের জীবাণু কমে যায়, যার কারনে ব্রণ দূর হয়ে যায় এবং ব্রণের দাগ আস্তে আস্তে মিটে যায়। এই ফেসপ্যাকটি আপনি সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করবেন।
  • মুখের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য আপনি মুলতানি মাটি তার সাথে টক দই এবং হলুদের গুঁড়ো অথবা কাঁচা হলুদ ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট বানাবেন। ভালোভাবে পেস্ট বানানো হলে এই উপাদানটি মুখে লাগাতে হবে। মুখে লাগানোর ২৫ থেকে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলবেন। এতে আপনার ত্বকের ভেতরের ময়লা বার হয়ে যাবে এবং ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল হবে ও ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর হয়ে যাবে।
  • ত্বকের রোদে পোড়া দাগ দূর করার জন্য আপনি মুলতানি মাটির সাথে শসার রস ও টমেটোর রস মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানাতে পারেন। এই তিনটি উপাদান একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখতে হবে। তারপর ধুয়ে ফেলতে হবে। এইভাবে সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন ব্যবহার করলে আপনার রোদে পোড়া দাগ খুব সহজেই দূর হয়ে যাবে এবং ত্বক হবে সুন্দর ও উজ্জ্বল।
  • আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য এবং ব্রণ কমানোর জন্য কার্যকরী একটি ফেসপ্যাক হচ্ছে মুলতানি মাটির সাথে চন্দনের গোড়ো, গোলাপজল এবং হালকা লেবুর রস দিয়ে ভালোভাবে মেশাতে হবে। ভালোভাবে মেশানো হলে, এই পেস্ট মুখের ত্বকে ভালোভাবে লাগাতে হবে। এটি যখন শুকিয়ে যাবে, তখন ধুয়ে ফেলতে হবে। এই ফেস প্যাকটি আপনি সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাবেন।

মুলতানি মাটির কাজ

মুলতানি মাটির কাজ সম্পর্কে আপনারা অনেকেই ইতোমধ্যে জানতে পেরেছেন। তার পরেও আমি আপনাদেরকে এটি আর একটু স্পষ্টভাবে জানাবো যে এই মুলতানি মাটির কাজ আসলে কি। মুলতানি মাটি মূলত একটি প্রাকৃতিক খনিজ মাটি। এই মাটি বহুকাল ধরেই ত্বক ও চুলের যত্নে ব্যবহার হয়ে আসছে। এই মাটি মূলত ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে এবং ত্বকের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।

এই মাটি আপনি যদি সঠিক নিয়মে ব্যবহার করতে পারেন তাহলে এই মাটি আপনার ত্বকের তেল দূর করবে এবং আপনার ত্বকের ভেতর থেকে ময়লা কে বার করবে যার কারণে আপনার ত্বক থাকবে পরিষ্কার ও ভেতর থেকে হবে উজ্জ্বল। এই মুলতানি মাটি নিয়মিত ব্যবহার করলে এটি আপনার ত্বকের বয়সের ছাপ দূর করবে। চলুন তাহলে মুলতানি মাটির কাজ কি সেটা জেনে নেওয়া যাক।

এই মাটি ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য কাজ করে থাকে। যেমন ত্বকের তেল শুষে নিয়ে মুখকে সতেজ রাখতে কাজ করে, ত্বকে ব্রণ ও ব্রণের দাগ কমাতে কাজ করে, ত্বকের ভেতরের ময়লা বার করতে কাজ করে। যার কারণে ত্বকের কালো দাগ, সাদা দাগ দূর হয়ে যায়। রোদে পুড়ে যাওয়া ত্বক ভালো করতে কাজ করে, ত্বককে টানটান করতে কাজ করে, ত্বকের রং ফর্সা করতে এবং ত্বকের বিভিন্ন খাল বা দাগ ভালো করতে কাজ করে। যাদের ত্বক সংবেদনশীল তাদের ত্বককে ঠান্ডা রাখে।

মুলতানি মাটি চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য কাজ করে। যেমন এই মাটি মাথার ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করে এবং মাথার ত্বকের এবং চুলের গোড়ার ময়লা বার পড়তে কাজ করে থাকে। যার কারণে চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এছাড়াও এটি মাথার খুশকি কমাতে কাজ করে অতিরিক্ত চুল পড়লে চুল পড়া রোধ করতে কাজ করে, চুলকে নরম ঝলমলে সুন্দর করতে কাজ করে এবং মাথার ত্বক ঠান্ডা করে। এছাড়াও এই মাটি ত্বকের ছোটখাটো যে ফুসকুড়ি বার হয় সে প্রদাহ গুলো কমাতে কাজ করে থাকে।

আশা করছি উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনি মুলতানি মাটির কাজ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। মুলতানি মাটি সঠিক নিয়ম মেনে সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন ব্যবহার করলে এ থেকে ভালো ফলাফল আপনি আপনার ত্বকে ও চুলে দেখতে পাবেন। এছাড়াও আপনি চাইলে উপরে গিয়ে আসল মুলতানি মাটি চেনার উপায় সম্পর্কেও জেনে আসতে পারেন।

মুলতানি মাটির অপকারিতা

এখন আমি মুলতানি মাটির অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। যাতে করে আপনারা এটি ব্যবহারের সময় সতর্ক হয়ে ব্যবহার করতে পারেন। মুলতানি মাটি সাধারণত ত্বকের ও চুলের যত্নে ব্যবহার করা হয়ে থাকে এটি অনেক উপকারী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এর এত উপকারিতা থাকার পরেও এর কিছু অপকারিতা আছে, যেগুলো আপনাদের জানা অনেক জরুরী।

চলুন তাহলে এর অপকারিতা গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। যাদের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক তারা যদি এই মুলতানি মাটি অতিরিক্ত ব্যবহার করে। তাহলে তাদের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়, যেটা ত্বকের জন্য মোটেও ভালো নয়। এছাড়াও অনেকের ত্বক সেনসিটিভ বা সংবেদনশীল থাকে এটি ব্যবহারের পর তাদের ত্বক জ্বালাপোড়া করতে পারে। যার কারণে ত্বকে লাল দাগ বা চুলকানির মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তারা যদি এই মুলতানি মাটি তাদের ত্বকে ব্যবহার করে। তাহলে ত্বকে ফুসকুড়ি বার হতে পারে। তাই যাদের শুষ্ক ত্বক, সংবেদনশীল ত্বক, এলার্জিজনিত ত্বক তাদের জন্য মুলতানি মাটি ব্যবহার করা উচিত নয়। অতিরিক্ত মুলতানি মাটি ব্যবহার করলে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে যায়। যার কারণে ত্বক রুক্ষ ও সংবেদনশীল হয়ে যেতে পারে।

মুলতানি মাটির দাম

এখন আমি আপনাদেরকে মুলতানি মাটির দাম সম্পর্কে জানাবো। এখন আমি যে দাম গুলো বলবো সেই দাম মূলত স্থানভেদে কম বা বেশি হতে পারে। চলুন এই মাটির দাম সম্পর্কে জেনে আসি। আপনি যদি অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে মুলতানি মাটি কিনতে চান, তাহলে এই ৮০ গ্রাম প্যাকেটের দাম পড়বে প্রায় ১৬০ টাকা।

কিছু কিছু প্লাটফর্ম আছে যেগুলোতে আপনি ১০০ গ্রাম প্যাকেট ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যেও পেয়ে যাবেন। আপনি যদি অনলাইন প্লাটফর্ম রাজকন্যা থেকে ১০০ গ্রামের মুলতানি মাটির প্যাকেট কিনেন, তাহলে তার দাম পড়বে প্রায় ১২০ টাকা আর আপনি যদি দারাজ থেকে মুলতানি মাটি কিনতে চান, তাহলে দাম পড়বে এক কেজির দাম ২৫০ টাকা।

সবথেকে ভালো হবে এই মুলতানি মাটি কেনার সময় অবশ্যই আপনি আপনার পরিচিত কোন দোকান থেকে নিবেন। তাহলে আসল মাটি পাওয়ার চান্স একটু বেশি থাকবে। আপনি যদি আপনার স্থানীয় বাজার থেকে মুলতানি মাটির ১০০ গ্রামের একটি প্যাকেট কিনেন, তাহলে এটার দাম বিভিন্ন ব্র্যান্ড অনুযায়ী ১০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে আপনি পেয়ে যাবেন। এই মাটির প্যাকেটের ব্র্যান্ড অনুযায়ী দাম মূলত কম ও বেশি হয়ে থাকে।

FAQ মুলতানি মাটি সম্পর্কে আলোচিত কিছু প্রশ্নের উত্তর

এখন আমি আপনাদেরকে মুলতানি মাটি সম্পর্কে কিছু আলোচিত প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে জানাবো। তাই দেরি না করে চলুন মুলতানি মাটি সম্পর্কে আলোচিত কিছু প্রশ্নের উত্তর গুলো জেনে নেওয়া যাক।

মুলতানি মাটি কত দিন ব্যবহার করা উচিত?

উত্তরঃ মুলতানি মাটি সাধারণত সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করা উচিত। এর থেকে বেশি যদি মুলতানি মাটি ব্যবহার করা হয় তাহলে এটা উপকারের চাইতে ক্ষতি করতে পারে। তাই এই মাটি থেকে ভালো উপকার পেতে হলে এবং নিরাপদ থাকতে হলে অবশ্যই সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিনের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়।

মুলতানি মাটি কি মাথার ত্বকে লাগানো যায়?

উত্তরঃ আপনারা জানতে চেয়েছেন মুলতানি মাটি কি মাথার ত্বকে লাগানো যায় জি হ্যাঁ মুলতানি মাটি মাথার ত্বকে লাগানো যায় এটা লাগালে মাথার ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয় এবং চুলের গোড়া ও ত্বক পরিষ্কার থাকে যার কারণে মাথার ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর হয় এবং চুলের গোড়া শক্ত হয় ও মাথা থাকে ঠান্ডা। এক কথায় বলা যায় মুলতানি মাটি মাথার ত্বকে লাগালে ভালো উপকার পাওয়া যায়।

চুলের জন্য কোন মাটি ভালো?

উত্তরঃ চুলের জন্য মুলতানি মাটি সব থেকে ভালো।  এই মাটি যদি সঠিক নিয়ম মেনে সপ্তাহে দুই দিন চুলে ব্যবহার করা হয়। তাহলে এই মাটি চুলের গোড়ার ময়লা দূর করবে চুলের গোড়া শক্ত করবে চুলকে বড় করতে সাহায্য করবে এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে চুলকে ঝলমলে করে তুলবে।

মুলতানি মাটি দিয়ে কি চুল সোজা করা যায়?

উত্তরঃ মুলতানি মাটি ত্বকের স্বাস্থ্য ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য এবং সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য অনেক উপকারী। মুলতানি মাটি চুলে ব্যবহার করলে চুলের গোড়ার ময়লা দূর হয় এবং মাথার ত্বকের অতিরিক্ত তেল কমে শুষ্ক করে। যার কারণে চুল সাময়িক সময়ের জন্য মসৃণ থাকে। ফলে চুল সহজে আচড়ানো যায় বা সোজা সোজা একটা ভাব পাওয়া যায় তবে এটা স্থায়ীভাবে সোজা হয় না।
মুলতানি মাটি লাগালে মুখ জলে কেন?

উত্তরঃ যাদের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক তারা যদি এই মুলতানি মাটি মুখে মেখে অনেকক্ষণ রাখে তাহলে মুখ জ্বলতে পারে। এছাড়াও মুখে মুলতানি মাটি মাখার পর যদি এটা অনেকক্ষণ রাখা হয় তাহলে এটা শুকিয়ে তোকে টান ধরে যার কারণে ত্বক জলে। এমনকি অনেকে আছে যারা মুলতানি মাটির সাথে লেবুর রস হলুদ ও চন্দন মিশিয়ে যদি মুখে দেয় তাহলে এতে থাকা তীব্র উপাদান গুলো ত ত্বকে জালা তৈরি করতে পারে। এছাড়াও যাদের এলার্জির সমস্যা আছে অথবা ত্বক অনেক সংবেদনশীল তারা যদি মুলতানি মুখে লাগায় তাহলে জ্বালা করে।

লেখকের মন্তব্যঃ আসল মুলতানি মাটি চেনার উপায়

আমি আমার আর্টিকেলের মধ্যে আসল মুলতানি মাটি চেনার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এগুলোর পাশাপাশি আমি আপনাদেরকে মুলতানি মাটি দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়, মুলতানি মাটির উপকারিতা, মুলতানি মাটি ব্যবহারের নিয়ম, মুলতানি মাটি কি দিয়ে তৈরি এবং এই মুলতানি মাটির অপকারিতা সম্পর্কেও জানিয়েছি। আশা করছি আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি মুলতানি মাটি সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে পেরেছেন।

আপনি যদি আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন? তাহলে অবশ্যই আমার এই আর্টিকেলটি আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন। এছাড়াও আমার এই আর্টিকেলটি নিয়ে আপনার যদি কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে অথবা আপনি যদি নতুন কোন বিষয় সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আমাদের নিচে থাকা যোগাযোগ পেজে অথবা কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অপরাজিতা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url