নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জানলে অবাক হবেন

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জানলে অবাক হয়ে যাবেন। অনেকেই ভাবেন যে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়? এই পাতা শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তবে অতিরিক্ত খেলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
নিম-পাতার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
আপনি যদি নিম পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আমার এই আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়বেন। চলুন তাহলে এই নিম পাতার ক্ষতিকর দিক ও উপকারী দিক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।

পেজ সূচিপত্রঃ নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

এখন আমি আপনাদেরকে নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। নিমপাতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এই নিম পাতার মধ্যে অনেক ওষুধিগুণ লুকায়িত আছে এবং যুগ যুগ ধরেই এই নিম পাতা অনেক ধরনের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে। এই নিম পাতার মধ্যে প্রদাহ নাশকগুণ সহ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিভাইরাল, ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিফাঙ্গাল প্রচুর পরিমাণে থাকে।
এই উপাদানগুলো শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। তবে এর ব্যবহারের কিছু নিয়ম আছে এটা যদি সঠিক নিয়মে ব্যবহার না করা হয় বা ভুলভাবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে এটা স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই দেরি না করে চলুন এর উপকারিতা গুলো এবং অপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

নিম পাতার উপকারিতা গুলো হচ্ছে

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিমপাতাঃ নিমপাতা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। যার কারনে শরীরের সহজে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাংগাল সংক্রমনের ঝুঁকি থাকে না। বিশেষ করে আবহাওয়া পরিবর্তন হওয়ার জন্য শরীরের যে রোগ গুলো হয়ে থাকে সেসব রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় যেমন সর্দি, কাশি, জ্বর, ঠান্ডা, মাথা ব্যথা।

নিম পাতা ত্বকের জন্য উপকারীঃ নিম পাতার মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক এন্টিফাঙ্গাল, এন্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল উপাদান। এই উপাদানগুলো ত্বকের স্বাস্থ্যকে ভেতর থেকে ও বাহির থেকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। যাদের ত্বকে চুলকানি, ব্রণ, ফোড়া, ফুসকুড়ি, দাদ, একজিমা, সোরিয়াসিস এর সমস্যা আছে। তাদের এই সমস্যা দূর করতে নিমপাতা অনেক উপকারী। এছাড়াও ত্বকের ক্ষত শুকাতে এবং ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতেও নিম পাতা অনেক কার্যকরী।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এই নিম পাতা অনেক উপকারী। নিম পাতার রস বা নিম পাতার গুড়া যদি খাওয়া হয়। তাহলে এর মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান গুলো রক্তের শর্করার মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরের মধ্যে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কে বাড়িয়ে থাকে। যেটা ডায়াবেটিসকে স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে সাহায্য করে।

চুল ও মাথার ত্বকের জন্য উপকারীঃ নিমপাতা মাথার খুশকি দূর করে এবং মাথার ত্বকের ফাঙ্গাল সংক্রমণ কমিয়ে থাকে। যার কারণে চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে এই নিম পাতা। নিম পাতা চুলে ব্যবহার করলে মাথার উকুন দূর হয় চুল দেখতে ঝলমলে হয়।

রক্ত পরিষ্কার করতে নিম পাতাঃ নিমপাতা রক্তকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। নিম পাতার মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান শরীর থেকে খারাপ টক্সিন বার করে দেয়। যার কারণে রক্ত থাকে পরিষ্কার এবং রক্ত পরিষ্কার থাকলে ত্বক হয় উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর। এমনকি ত্বকের অন্যান্য সমস্যাও দূর হয়ে যায়। এছাড়াও নিমপাতা কৃমি ধ্বংস করতে সাহায্য করে। নিম পাতা খাওয়া হলে নিম পাতার মধ্যে যে প্রাকৃতিক গুনাগুন আছে এই গুনাগুন গুলো পেটের কৃমি দূর করে এবং পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ভালো করে।

মুখ ও দাঁতের জন্য উপকারীঃ নিমের ডাল দিয়ে যদি দাঁত মাজা হয়, তাহলে দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এই নিমের ডাল দাঁত কে মজবুত করে, মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও দাঁতের ক্ষয় রোধ করে। সেই সাথে মুখের দুর্গন্ধ থাকলে সেই দুর্গন্ধ দূর করে। নিমপাতা সঠিক নিয়মে ব্যবহার করলে এটা দাঁতের ব্যথা ও মাড়ির বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

চোখের জন্য উপকারীঃ চোখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা কমাতে নিমপাতা অনেক উপকারী হিসেবে কাজ করে। নিমপাতা যদি সঠিক নিয়মে ব্যবহার করা যায় তাহলে এটা চোখের লালচে ভাব চুলকানি এবং চোখের বিভিন্ন সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে। তাই চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য নিমপাতা নিয়মিত ব্যবহার করা উচিত।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ নিম পাতার মধ্যে এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান আছে। যে উপাদানগুলো শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে এবং হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও নিম পাতার মধ্যে ফাইবার থাকে যার কারণে পেট অনেকক্ষণ ভরে থাকে। ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। ফলে আস্তে আস্তে ওজন কমে যায় এবং ওজন থাকে নিয়ন্ত্রণে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ নিম পাতার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের মধ্যে ক্যান্সার উৎপন্নকারী কোষগুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং শরীরকে ক্যান্সার হওয়া থেকে রক্ষা করে। এই নিমপাতা শরীরের মধ্যে থেকে ফ্রী রেডিক্যাল বার করে দেয় যার কারণে ক্যান্সারের কোষ উৎপন্ন হতে পারে না। তাই বলা যায় ক্যান্সার প্রতিরোধে নিম পাতা অনেক কার্যকরী ওষুধ।

মহিলাদের জন্য উপকারীঃ যেসব মহিলাদের মাসিক হয় না বা অনিয়মিত মাসিক হয় তাদের জন্য নিমপাতা অনেক উপকারী। কারণ নিম পাতা সঠিক নিয়মে ব্যবহার করলে মাসিকের সমস্যা দূর হয় ও নিয়মিত মাসিক হয় এবং জরায়ুর বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এই নিম পাতা প্রসব পরবর্তী যে সমস্যাগুলো বা সংক্রমণ গুলো হয়ে থাকে সেগুলোকে কমাতে ও ভালো করতে অনেক উপকারী হিসেবে কাজ করে।

হৃদরোগের ঝুকি কমায়ঃ নিমপাতা সঠিক নিয়মে নিয়মিত ব্যবহার করলে এটা রক্তের মধ্যে থাকা খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। যার কারণে রক্ত হয় পরিষ্কার এবং শরীরের মধ্যে ভালোভাবে রক্ত সঞ্চালন করতে পারে। যার কারণে হৃদপিন্ডের মধ্যে ভালোভাবে রক্ত চলাচল করে এবং হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।

এলার্জির সমস্যা কমায়ঃ নিমপাতা এলার্জির সমস্যা দূর করতে অনেক কার্যকরী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তারা যদি নিমপাতা পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করে তাহলে নিমের পাতার যে প্রাকৃতিক ওষুধি গুণ আছে সেই ঔষধি গুন গুলো ত্বকের এলার্জিজনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। কারণ নিম পাতার মধ্যে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান থাকে এই উপাদানগুলো ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ ও এলার্জি কমাতে সাহায্য করে।

লিভারের জন্য উপকারীঃ নিমপাতা লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিম পাতার মধ্যে থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিভাইরাল ওষুধিগুণ গুলো লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং প্রদাহ কমায়।  নিয়মিত নিম পাতা ব্যবহার করলে লিভারের সংক্রমণ ও ফোলা ভাব কমে যায় এবং হজম শক্তি ও বিপাক ক্রিয়া উন্নত হয়। যার কারণে লিভারের উপর চাপ কম পড়ে এবং লিভার থাকে সুস্থ।

নিম পাতার অপকারিতা গুলো হচ্ছেঃ

পেটের সমস্যাঃ অতিরিক্ত নিমপাতা ব্যবহার করলে সেটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারের বদলে ক্ষতি করতে পারে। যদি অতিরিক্ত নিমপাতা ব্যবহার করা হয়, তাহলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে। যার কারণে হজমের সমস্যা, পেটে গ্যাস, পেট জ্বালাপোড়া সহ বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা ও লিভারের উপর চাপ তৈরি হতে পারে। যেটা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর। তাই অতিরিক্ত না ব্যবহার করে অল্প পরিমাণে নিম পাতার ব্যবহার করতে হবে।

অতিরিক্ত রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারেঃ যাদের রক্তচাপ অনেক কম এবং রক্তের মধ্যে শর্করার মাত্রা অনেক কম থাকে। তারা যদি নিমপাতা বেশি ব্যবহার করে, তাহলে নিম পাতার মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক উপাদানগুলো রক্তের মধ্যে থাকা শর্করার মাত্রাকে আরো কমিয়ে দিবে। যার কারণে অতিরিক্ত রক্তচাপ কমে যেতে পারে। তাই যাদের রক্তচাপ কম তাদের জন্য এই নিম পাতা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষতিকরঃ গর্ভাবস্থায় কোন মহিলা যদি এই নিম পাতার ব্যবহার অতিরিক্ত করে তাহলে তার গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও স্তন ধানে থাকা ছোট শিশুদের জন্যেও এই নিম পাতার ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত এই নিম পাতার ব্যবহার না করাই ভালো।

শিশুদের জন্য ক্ষতিকরঃ ছোট শিশুদের নিম পাতার ব্যবহার করা মোটেও উচিত নয়। কারণ নিম পাতার মধ্যে এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান আছে যেগুলো ছোট শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে ১০ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুদের এই নিম পাতা বা নিম পাতার রস খাওয়া উচিত নয়। এটি যদি কম বয়সি শিশুরা খায় তাহলে তার পেটের সমস্যা, বমি বমি ভাব, এলার্জির প্রতিক্রিয়া এছাড়াও মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি হতে পারে।

এলার্জির সমস্যাঃ নিমপাতা সাধারণত সবার জন্যই উপকারী। তবে কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এই পাতা এলার্জির প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। যেমন এটি ব্যবহারের পর ত্বকে চুলকানি, ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, ত্বকে ফুসকুড়ি বার হওয়া, ত্বক ফুলে যাওয়া, ডায়রিয়া হওয়া ও পেটের বিভিন্ন সমস্যা হওয়া ইত্যাদি। এইসব প্রতিক্রিয়া যদি দেখা যায় তাহলে বুঝে নিতে হবে, এটা এলার্জি জনিত সমস্যা। আর এই সমস্যা দেখা গেলে দ্রুত এটা ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে ক্ষতিকরঃ অতিরিক্ত নিম পাতার ব্যবহার আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে করে থাকেন। তাহলে এটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত নিমপাতা ব্যবহার আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে করেন তাহলে নিম পাতার মধ্যে থাকা উপাদান গুলো আপনার লিভারের ওপর এবং কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। যার কারণে আপনার লিভার ও কিডনির মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই এই পাতার ব্যবহার দীর্ঘ মেয়াদে অতিরিক্ত ব্যবহার না করে সীমিত পরিমানে মাঝে মধ্যে বাদ দিয়ে দিয়ে ব্যবহার করতে হবে।

হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করেঃ নিম পাতার ব্যবহার যদি অতিরিক্ত করা হয় তাহলে এটা হরমোনের স্বাভাবিক মাত্রাকে অস্বাভাবিক করে তুলতে পারে। এছাড়াও নিম পাতা দীর্ঘ মেয়াদে এবং অতিরিক্ত ব্যবহার করলে টেস্টোস্টরন হরমোন কমে যাই এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে যাতে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। তাই এটা অতিরিক্ত ব্যবহার না করে স্বল্প পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত।

খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়

আপনারা অনেকে খালি পেটে নিমপাতার রস খেলে কি হয় জানতে চেয়েছেন। তাই আর দেরি না করে চলুন খালি পেটে নিমপাতার রস খাওয়া হলে কি হয় জেনে নিই। নিম পাতার রস যদি খালি পেটে খাওয়া হয়, তাহলে এটা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হিসেবে কাজ করে। তবে সেটা অবশ্যই পরিমাণ অনুযায়ী ব্যবহার করলে।

এই নিম পাতার রস সকালবেলায় যদি খালি পেটে খাওয়া যায়, তাহলে এই নিমপাতায় থাকা এন্টিভাইরাল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান গুলো শরীরে থাকা ক্ষতিকর উপাদান গুলোকে বার করে দিতে সাহায্য করে এবং শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখে।

খালি পেটে এই নিম পাতার রস খাওয়া হলে, এটা আমাদের হজম শক্তিকে বাড়াতে সাহায্য করে, রক্তকে পরিষ্কার রাখে এবং ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। সঠিক নিয়ম মেনে সঠিক পরিমাণ অনুযায়ী যদি এই নিমপাতার রস খাওয়া হয়, তাহলে এটা ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সেই সাথে এটা পেটের গ্যাস কমাতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

তবে নিম পাতার রস অনেক উপকারী হলেও। এটা অতিরিক্ত যদি খাওয়া হয়, তাহলে এটা পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে এমনকি ডায়রিয়ার মত সমস্যা হতে পারে। তাই খালি পেটে এই নিম পাতার রস অতিরিক্ত না খেয়ে সঠিক পরিমাণে খেতে হবে। তাহলে এই নিম পাতার রস থেকে ভালো উপকার পাওয়া যাবে। আশা করছি উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনি খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয় সে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম

নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে এখন আমি আপনাদেরকে জানাবো। তাই দেরি না করে চলুন নিম পাতার রস আপনি কিভাবে খাবেন সে নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। নিম পাতার রস থেকে ভালো উপকারিতা পেতে হলে। অবশ্যই এখন আমি আপনাকে যে নিয়ম বলবো সে নিয়মে খেতে হবে। তাহলে এর থেকে আপনি ভালো উপকারিতা পাবেন।

সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে নিমের যে কচি পাতা অর্থাৎ তাজা ও সবুজ নিমপাতা গুলোকে গাছ থেকে পারতে হবে। এরপর প্রায় ১০ থেকে ১৫টি নিমপাতা ভালোভাবে ধুয়ে, সেই পাতাগুলোকে ব্লেন্ডার অথবা পাঠাই বেটে পেস্ট করতে হবে। ভালোভাবে পেস্ট করা হয়ে গেলে সেটাকে ছাকনি দিয়ে ভালোভাবে রস বার করে নিতে হবে। এই নিম পাতার রস সকালবেলায় খালি পেটে খেলে সবথেকে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

অবশ্যই এই পাতার রস দিনে দুই থেকে তিন চামচ খাওয়া উচিত। এর থেকে বেশি খেলে সমস্যা হতে পারে। নিম পাতার রস টানা অনেক দিন ধরে না খেয়ে সাত দিন খাওয়ার পর কিছুদিন বিরতি রেখে আবার খাওয়া ভালো। নিম পাতার রস তিতা হওয়ার কারণে অনেকের এটি খেতে অনেক কষ্ট হয়। এর জন্য আপনি চাইলে এর সাথে গরম পানি অথবা এক চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। আশা করছি নিম পাতার রস কিভাবে খেতে হবে তার নিয়ম জানতে পেরেছেন।

FAQ/নিমপাতা সম্পর্কে আলোচিত প্রশ্ন ও উত্তর

এখন আমি আমার এই আলোচনাতে নিমপাতা সম্পর্কে কিছু আলোচিত প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। তাই দেরি না করে চলুন সেই আলোচিত প্রশ্নের উত্তরগুলো জেনে নিই।

নিম পাতা কি কি রোগের কাজ করে?
উত্তরঃ নিমপাতা অনেক যুগ যুগ ধরেই বিভিন্ন চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে। এই নিম পাতা ব্যবহার করে মানুষ বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছে। নিমপাতা শরীরের বিভিন্ন উপকার করে এবং বিভিন্ন রোগ দূর করতে সাহায্য করে। নিমপাতা যেসব রোগের জন্য কাজ করে সে রোগগুলো হচ্ছেঃ চর্মরোগ, রক্ত পরিষ্কার, দাঁতের ও মুখের রোগ, ভাইরাসজনিত জ্বর ও বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ, লিভারের সমস্যা, চুলের সমস্যা ও ব্যথা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ডায়াবেটিস, পেটের সমস্যা সহ আরো অনেক ধরনের রোগের বিরুদ্ধে এই নিম পাতা অনেক কার্যকরী ও উপকারী হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকে।

নিম পাতা খেলে কি অ্যালার্জি দূর হয়?
উত্তরঃ নিম পাতা যদি সঠিক নিয়মে খাওয়া হয় তাহলে অ্যালার্জি দূর হবে। কিন্তু এটা নির্ভর করে মূলত এলার্জিতে আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার এবং এলার্জির ধরনের ওপর। নিম পাতার মধ্যে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টিফাঙ্গাল ও এন্টিইনফ্লামেটরি উপাদানে ভরপুর থাকে। এই উপাদান গুলো ত্বকের চুলকানি, ফুসকুড়ি ও এলার্জির প্রতিক্রিয়া দূর করতে সাহায্য করে। নিম পাতার রস নিয়মিত খেলে এটা শরীর থেকে খারাপ রক্ত বার করে দেয় এবং রক্ত পরিষ্কার করে। যার কারণে আস্তে আস্তে এলার্জির বিরুদ্ধে শরীরের লড়াই করার ক্ষমতা বাড়ে ফলে এলার্জি দূর হয়।

নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ খেলে কি হয়?
উত্তরঃ নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ যদি সঠিক নিয়ম মেনে এবং পরিমাণ অনুযায়ী নিয়মিত খাওয়া হয়। তাহলে এটা শরীরের ভেতরে খারাপ টক্সিন বার করে দেয় এবং রক্তকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও এটা পেটের হজম শক্তি বাড়ায় এবং পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও ডায়াবেটিস কে রাখে নিয়ন্ত্রণে।

নিম পাতার কচি পাতাগুলো কেন অনেকে খায়?
উত্তরঃ অনেকেই নিম পাতার কচি পাতাগুলো খাই এর কারন হচ্ছে নিম পাতার কচি পাতাগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ ও প্রাকৃতিক উপাদানের ভরপুর থাকে। এই পাতাগুলোতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিভাইরাল উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকে। যার কারণে এই কচি পাতা খেলে রক্ত থাকে পরিষ্কার, ডায়াবেটিস থাকে নিয়ন্ত্রণে, হজম শক্তি বাড়ে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং বিভিন্ন ভাইরাস জনিত সংক্রমণ যেমন জ্বর, সর্দি, কাশি, ঠান্ডা ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করে।

নিম পাতার ইংরেজি নাম কী?
উত্তরঃ নিম পাতার ইংরেজি নাম হচ্ছে Neem Leaves আর নিম পাতার গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Azadirachta indica। আশা করছি নিম পাতার ইংরেজি নাম সম্পর্কে আপনি জানতে পেরেছেন।

চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার

চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আপনারা অনেকেই আছেন যারা জানতে চেয়েছেন। নিমপাতা চর্মরোগ দূর করার জন্য অনেক উপকারী ঔষধিগুন সম্পন্ন একটি প্রাকৃতিক উপাদান। নিম পাতার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিফাঙ্গাল, এন্টিভাইরাল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, এন্টিইনফ্লামেটরি চর্মরোগ দূর করতে সাহায্য করে।

এই উপাদানগুলো ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চুলকানি, ফুসকুড়ি, একজিমা, দাদ, সোরিয়াসিস ও ত্বক লাল হয়ে যাওয়ার সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। চলুন চর্মরোগে আপনি নিমপাতা কিভাবে ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। আপনার যদি চুলকানি ও অ্যালার্জিজনিত সমস্যা থাকে, তাহলে আপনি কিছু নিমপাতা পানিতে সেদ্ধ করে। সেই পানি দিয়ে ত্বককে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলবেন।
এতে করে আপনার শরীরের চুলকানি ও লালচে ভাব কমে যাবে। আপনার ত্বকে যদি ব্রণ ও ফোড়া বার হয়, তাহলে আপনি কচি নিমপাতা ভালোভাবে পেস্ট করে ব্রণের ওপর ও ফোড়ার ওপর ভালোভাবে লাগাবেন। এতে ব্রণ ও ফোড়া দ্রুত শুকিয়ে যাবে এবং দাগ দূর হয়ে যাবে। ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল রাখার জন্য নিম পাতা ভালোভাবে পেস্ট করে নিতে হবে। তার সাথে মধু অথবা কাঁচা হলুদ ভালোভাবে মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে হবে। এতে করে ত্বক থাকবে পরিষ্কার ও ত্বক হবে উজ্জ্বল।

একজিমা ও দাদ কমানোর জন্য নিম পাতার রস লাগাতে হবে। ২০ থেকে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখার পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে একজিমা ও দাদ সহজেই ভালো হয়ে যাবে। আপনি চাইলে নিমপাতা ভালোভাবে সেদ্ধ করে। সেই সেদ্ধ করা পানিতে গোসল করতে পারেন। এতে আপনি আরো ভালো উপকার পাবেন। আশা করছি চর্ম রোগে নিম পাতার ব্যবহার কিভাবে করতে হয় তা জানতে পেরেছেন।

চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার

চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে ইতিমধ্যেই আপনারা উপরের আলোচনা থেকে জেনে গেছেন। তার পরেও আমি আপনাদেরকে আরেকটু স্পষ্টভাবে চুলকানিতে কিভাবে নিমপাতা ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে জানাবো। তাই দেরি না করে চলুন সে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

আপনার ত্বকে যদি চুলকানির সমস্যা থাকে, তার জন্য আপনি নিমপাতা সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে চুলকানির স্থানগুলোকে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। দিনে এক থেকে দুইবার করলে চুলকানি ও ত্বকের সংক্রমণ দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও নিম পাতার পেস্ট বানিয়ে সেই পেস্ট চুলকানির স্থানে ভালোভাবে লাগিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে, এরপর ধুয়ে ফেলতে হবে।

আপনি চাইলে চুলকানি দূর করার জন্য নিম পাতার তেল বানিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগাতে পারে। এতে করে আপনার চুলকানি দ্রুত কমে যাবে। নিমপাতা ভালোভাবে সেদ্ধ করে, সেই সেদ্ধ করা পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। এতে করে আপনার পুরো শরীরের ত্বক চুলকানি থেকে রক্ষা পাবে। আশা করছি চুলকানিতে কিভাবে নিম পাতার ব্যবহার করবেন ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।

নিম পাতা খাওয়ার নিয়ম

এখন আমি আপনাদেরকে নিম পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানাবো। যাতে করে আপনারা খুব সহজেই এই পাতা সঠিক নিয়মে খেতে পারেন এবং এর থেকে ভালো উপকার পেতে পারেন। নিমপাতা আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো। এই পাতা অনেক চিকিৎসক আছে যারা তাদের চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকে এবং মানুষকে রোগমুক্ত করে।

তবে এই নিম পাতা খাওয়ার কিছু নিয়ম আছে যেগুলো আমাদের জানা অনেক জরুরী। যদি নিম পাতা ভুল ভাবে বা ভুল নিয়মে খাওয়া হয়, তাহলে এটা থেকে উপকার পাওয়া যাবে না বরং ক্ষতি হবে। ভালোভাবে উপকার পেতে হলে অবশ্যই এই নিম পাতা সকালবেলায় খালি পেটে খাওয়া উচিত। প্রাপ্তবয়স্ক যারা আছে তারা প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ টি নিমপাতা খাবেন।

আর যেসব শিশুদের ১০ বছরের নিচে তাদের না খাওয়াই ভালো। এই পাতা আপনি চাইলে চিবিয়েও খেতে পারেন। আবার এটা চা অথবা খাবারের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন। নিম পাতার রস খেতে তিতা হয়, যার কারণে অনেকেই খেতে পারেন না। এর জন্য আপনি চাইলে এর সাথে লেবু অথবা মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। যারা গর্ভবতী মহিলা ও স্তন দানকারী মহিলা তাদের এই পাতা খাওয়া উচিত নয়।

খেলেও ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে। এছাড়াও যারা নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ খাচ্ছেন ও যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা আছে। তারা নিম পাতা খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। অবশ্যই এটা পরিমাণ অনুযায়ী খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তা না হলে এটা পেটের সমস্যা বমি এবং লিভারের উপর ও কিডনির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

নিম পাতার বড়ি খেলে কি হয়

আপনারা নিম পাতার বড়ি খেলে কি হয় জানতে চেয়েছেন। নিম পাতার বড়ি সাধারণত শুকনো পাতাকে গুড়া করে তৈরি করা হয়। এই পাতার বড়ি খেলে শরীরের অনেক ধরনের উপকার পাওয়া যায়। তবে অতিরিক্ত যদি খাওয়া হয়, তাহলে কিছু সমস্যাও তৈরি হতে পারে। তাই এটি খেলে কি হয় চলুন জেনে নেওয়া যাক। 

নিম পাতার বড়ি যদি সঠিক নিয়ম মেনে পরিমান অনুযায়ী খাওয়া হয়। তাহলে এটা রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে, ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণে রাখে, পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও আরো অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়।

এইসব উপকারিতা পেতে হলে, অবশ্যই আপনাকে পরিমাণ অনুযায়ী নিম পাতার বড়ি খেতে হবে। অতিরিক্ত নিমপাতা খাওয়া হলে এটা পেট ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া এমনকি অতিরিক্ত ক্ষুধা কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও গর্ভবতী নারীদের জন্য এটা খাওয়া মোটেও উচিত নয়। আর যাদের ডায়াবেটিসের ওষুধ চলছে এবং রক্তচাপ অনেক কম তাদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।

নিম পাতা চুলে দেওয়ার নিয়ম

নিম পাতা চুলে দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনারা অনেকেই আছেন যারা জানতে চেয়েছেন। তাই এখন আমি আপনাদেরকে কিভাবে নিম পাতা চুলে দিবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। নিমপাতা যদি সঠিক নিয়ম মেনে ব্যবহার করা হয়, তাহলে এটা চুলের খুশকি, উকুন, চুলকানি, চুল পড়া বন্ধ ও চুলের গোড়া শক্ত করবে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে। চলুন নিম পাতা চুলে দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিই।

আপনার মাথায় খুশকি ও মাথার চুলকানি থাকলে আপনি এক মুঠো নিমপাতা পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে মাথার ত্বক এবং চুল ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন। এতে করে আপনার মাথার খুশকি ও মাথার চুলকানি কমে যাবে। আপনার যদি অতিরিক্ত চুল পড়ে এবং চুলের গোড়ায় ইনফেকশন হয়, তাহলে নিম পাতা ভালোভাবে ব্লেন্ড করে সেই নিমপাতার পেস্ট কে মাথার ত্বকে ও চুলের গোড়ায় ভালোভাবে লাগাতে হবে। এটি ৩০মিনিট মাথায় রাখার পর ধুয়ে নিতে হবে।

এতে করে আপনার চুল পড়া কমে যাবে এবং চুলের গোড়ায় ইনফেকশন থাকলে ভালো হয়ে যাবে। চুলকে যদি দ্রুত লম্বা ও ঘন করতে চান? তাহলে আপনি নিম পাতার তেল বানিয়ে চুলে ও মাথার ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন তেলটি দিয়ে মাথায় মালিশ করলে দ্রুত চুল লম্বা হবে ও ঘন হবে। চুলের স্বাস্থ্য ভালো, চুল দেখতে সুন্দর ও মসৃণ করতে চাইলে নিম পাতার সাথে টক দই, অ্যালোভেরা জেল, তার সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ভালোভাবে চুলের গোড়ায় লাগাতে হবে।

নিম পাতার গুড়া খেলে কি হয়

নিম পাতার গুড়া খেলে কি হয় এই সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন। নিম পাতার গুঁড়ো আমাদের শরীরের জন্য অনেক ভালো। এটি যদি সঠিক নিয়ম মেনে নিয়মিত খেতে পারা যায় তাহলে এটার অনেক উপকারিতা আছে। তবে এর জন্য কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

নিম পাতার গুড়া যদি সঠিক নিয়ম মেনে পরিমাণে অল্প খাওয়া হয়, তাহলে এটা আমাদের শরীরের খারাপ রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং শরীর থেকে খারাপ টক্সিন বার করে দেয়। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য নিম পাতার গুঁড়ো অনেক উপকারী। কারণ নিম পাতার গুঁড়োর মধ্যে এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান আছে, যেগুলো রক্তের মধ্যে থাকা চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

এছাড়াও যাদের চর্ম রোগ সমস্যা আছে এবং ত্বক সংবেদনশীল। তাদের জন্য এই পাতার গুঁড়ো অনেক উপকারী। নিয়মিত খেলে ত্বকে ব্রণ, চুলকানি, ফোড়া, একজিমা ইত্যাদি ভালো হয়ে যায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, পেটের কৃমি সহ পেটের বিভিন্ন সমস্যা ভালো হয়, দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এসব উপকারিতা পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে সঠিক নিয়ম মেনে নিম পাতার গুড়া খেতে হবে। অতিরিক্ত খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হবে।

FAQ/নিম পাতা সম্পর্কে আলোচিত প্রশ্ন ও উত্তর

এখন আমি আপনাদেরকে নিম পাতা সম্পর্কে কিছু আলোচিত প্রশ্নের উত্তর জানাবো। তাই দেরি না করে চলুন সেই আলোচিত প্রশ্নের উত্তরগুলো জেনে নিই।

নিম পাতার রস খেলে কি ক্ষতি হয়?
উত্তরঃ নিম পাতার রস সাধারণত স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হলেও এটা যদি অতিরিক্ত খাওয়া হয়। তাহলে এটা স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। যার কারণে পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। যেমন পেট ব্যথা করা, পেটে গ্যাস হওয়া এবং ডায়রিয়া হওয়া। এছাড়াও এটা অতিরিক্ত খাওয়া হলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। লিভারের উপর চাপ ফেলে, অতিরিক্ত রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে এবং এলার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

নিম পাতা দিয়ে গোসল করলে কি হয়?
উত্তরঃ ত্বকের যদি কোন সমস্যা হয় অথবা চর্ম রোগ জনিত কোন সমস্যা থাকলে নিম পাতা দিয়ে গোসল করলে চর্ম রোগ দূর হয়ে যায় এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। নিমপাতা দিয়ে গোসল করলে শরীরে খারাপ ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে না। ফলে ত্বকে চুলকানি ব্রণ ফোড়া এবং এলার্জি জনিত সমস্যা থাকলে সেটা কমে যায়।

চুলের খুশকি কিভাবে দূর করব?
উত্তরঃ চুলে যদি অতিরিক্ত খুশকি থাকে সে খুশকি দূর করার জন্য আপনি নিম পাতা ভালোভাবে পানিতে ফুটিয়ে। সেই ফোটানো পানি দিয়ে মাথার ত্বক এবং চুল ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন। এভাবে সপ্তাহে আপনি দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করবেন। এতে করে আপনার চুলের খুশকি থাকলে খুশকি দূর হয়ে যাবে।

নিম পাতার কি কি গুন রয়েছে?
উত্তরঃ নিমপাতা এটি ওষুধিগুণসম্পন্ন উপাদান। এই পাতা সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এর মধ্যে থাকা গুনাগুন আমাদের শরীরের অনেক উপকার করে। যেমন পেটের কৃমি দূর করে ও হজম শক্তি বাড়ায়, রক্ত পরিষ্কার করে, ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বকের চুলকানি, একজিমা, ব্রণ, দাদ ইত্যাদি দূর করে। চুল পড়া কমায়, মুখের ও দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। কারণ এই পাতার মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিফাংগাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুন রয়েছে।

নিম খেলে কি লিভার পরিষ্কার হয়?
উত্তরঃ আপনি যদি সঠিক নিয়ম মেনে নিম খান তাহলে এটা আপনার লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করবে। নিমের মধ্যে এমন প্রাকৃতিক গুনাগুন আছে, যে গুনাগুন গুলো লিভারের উপর চাপ কমায় এবং লিভারের স্বাস্থ্যকে রাখে ভালো। তাই বলা যায় নিম খেলে লিভার পরিষ্কার থাকে।

প্রতিদিন নিম পাতা খেলে কি হয়

প্রতিদিন নিম পাতা খেলে কি হয় এই সম্পর্কে আপনারা অনেকেই আছেন যারা জানেন না। তাই এখন আমি আপনাদেরকে এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। সাধারণত আপনি যদি অল্প পরিমাণে প্রতিদিন নিমপাতা খান। সেটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হবে। তবে অনেকদিন ধরে এই নিম পাতা খেলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।

তাই এটি কিছুদিন খাওয়ার পর মাঝে কিছুদিন গ্যাপ দিয়ে আবার খাওয়া উচিত। এতে করে স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি হবে না। তাছাড়া প্রতিদিন যদি নিমপাতা অল্প পরিমাণে খাওয়া হয়। তাহলে এটা শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বার করে, রক্ত পরিষ্কার রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। পেটে কৃমি থাকলে কৃমি ধ্বংস করে, পেটের হজম শক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
মুখের দুর্গন্ধ কমায় এবং দাঁতের ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখে। আর প্রতিদিন যদি এই নিমপাতা অনেক বেশি পরিমাণে এবং টানা অনেকদিন যাবত খাওয়া হয়। তাহলে এটা পেটের হজম শক্তি কমিয়ে দিতে পারে, কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়িয়ে দিতে পারে, ডায়াবেটিসকে অনিয়ন্ত্রিত করে দিতে পারে। এমনকি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। তাই উচিত হবে নিমপাতা অল্প পরিমাণে খাওয়া এবং প্রতিদিন না খেয়ে মাঝেমধ্যে ছেড়ে ছেড়ে খাওয়া।

লেখকের মন্তব্যঃ নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমি আমার আর্টিকেল এর মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এর পাশাপাশি আমি খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়, নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম, নিম পাতা খাওয়ার নিয়ম এবং চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানিয়েছি। আশা করছি আমার এই আর্টিকেল থেকে আপনি নিম পাতা সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে পেরেছেন।

আপনি যদি আমার আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনি আপনার পরিচিত মানুষদের কাছে শেয়ার করবেন এবং তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবেন। এছাড়াও আমার আর্টিকেলটি নিয়ে আপনার যদি কোন প্রশ্ন ও মতামত থেকে থাকে অথবা আপনি যদি নতুন কোন বিষয়ে জানতে চান? তাহলে আমাদের নিচে থাকা যোগাযোগ পেজে অথবা কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অপরাজিতা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url