কিডনি রোগী কি ড্রাগন ফল খেতে পারবে জানুন বিস্তারিত
কিডনি রোগী কি ড্রাগন ফল খেতে পারবে এবং ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও
অপকারিতা সম্পর্কে যত তথ্য আছে সকল তথ্য এখন আমি আমার এই আর্টিকেলের মধ্যে
বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আপনি যদি ড্রাগন ফল খাওয়ার সঠিক সময় ও নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে
আমার এই আর্টিকেলটি আপনি ভালোভাবে পড়বেন। চলুন তাহলে ড্রাগন ফল সম্পর্কিত
সকল তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
পেজ সুচিপত্রঃ কিডনি রোগী কি ড্রাগন ফল খেতে পারবে
- কিডনি রোগী কি ড্রাগন ফল খেতে পারবে
- ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
-
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা
- বাচ্চাদের ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা
- ড্রাগন ফল খাওয়ার সঠিক সময়
- ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম
- কেন এই ফলের নাম ড্রাগন
- ড্রাগন ফলের ইংরেজি ও ড্রাগন ফলের বৈজ্ঞানিক নাম
- ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে
- ড্রাগন ফল খেলে কি রক্ত বাড়ে
- ড্রাগন ফল খেলে কি ওজন বাড়ে
- ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা
- ড্রাগন ফল সম্পর্কিত কিছু আলোচিত প্রশ্নের উত্তর
- লেখকের মন্তব্যঃ কিডনি রোগী কি ড্রাগন ফল খেতে পারবে
কিডনি রোগী কি ড্রাগন ফল খেতে পারবে
আপনারা অনেকেই আছেন যারা জানতে চেয়েছেন যে কিডনি রোগী কি ড্রাগন ফল খেতে পারবে
এই বিষয়ে। সাধারণত ড্রাগন ফল অনেক পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি ফল। এই ফল খাওয়া হলে
এটা শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করবে। কারণ ড্রাগন ফলের মধ্যে
প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, ভিটামিন সি ও পানি থাকে।
যেগুলো শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করার পাশাপাশি শরীরকে চরফরে রাখতে এবং
হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ড্রাগন ফল মূলত যারা কিডনির রোগী তাদের জন্য
ক্ষতিকর না। যদি তারা অল্প পরিমাণে এবং সঠিক নিয়ম মেনে খেতে পারে তাহলে, এটা
থেকে তাদের শরীরের উপকার পাওয়া যাবে। কিন্তু যাদের কিডনি রোগ অর্থাৎ কিডনির
অসুখ অনেক বেশি তাদের জন্য কিছুটা সমস্যা হতে পারে।
এছাড়াও কিডনির অসুখের জন্য ডাক্তার যদি খাবার মেনে বেছে খেতে বলে বা খাবারের
মেনু মেনে চলতে বলে। তাহলে অবশ্যই ড্রাগন ফল খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ
নিতে হবে। যদি কিডনির সমস্যা বেশি থাকে, তাহলে এটা কিডনির রোগীদের জন্য ক্ষতিকর
হতে পারে। কারণ ড্রাগন ফলের মধ্যে পটাশিয়াম থাকে আর এটা যদি কিডনির রোগী
অতিরিক্ত খাই, তাহলে সেটা শরীরের মধ্যে অতিরিক্ত পটাশিয়াম জমিয়ে দিতে পারে।
যেটা কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। তাই ড্রাগন ফল যাদের কিডনির অসুখ আছে তারা
খাওয়ার আগে অবশ্যই সেটা অল্প পরিমাণে এবং সঠিক নিয়ম মেনে খাবেন। তবে সব থেকে
নিরাপদ হবে যদি আপনি এটি খাওয়ার পূর্বে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খান। আশা
করছি উক্ত আলোচনা থেকে কিডনি রোগীরা ড্রাগন ফল খেতে পারবে কিনা সে সম্পর্কে
জানতে পেরেছেন।
ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
এখন আমি আপনাদেরকে ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে
জানাবো। তাই দেরি না করে চলুন এই বিষয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া
যাক। ড্রাগন ফল যদি সঠিক নিয়ম এবং পরিমাণ অনুযায়ী খেতে পারা যায়।
তাহলে এটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার বয়ে আনবেন। কারণ ড্রাগন ফলের
মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক ভিটামিন, মিনারেল, এন্টিঅক্সিডেন্ট
ও ফাইবার থাকে।
যেগুলো শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে এবং শরীরকে সতেজ ও চাঙ্গা রাখতে
সাহায্য করে। শুধুই যে এর উপকারিতা আছে তা কিন্তু নয় ড্রাগন ফলের
উপকারিতা থাকার পাশাপাশি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। তাই চলুন এই ফলের
উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই জেনে নেওয়া যাক।
ড্রাগন ফলের উপকারিতা
শরীরের শক্তি বাড়ায়ঃ যাদের শরীর অনেক দুর্বল তাদের জন্য ড্রাগন ফল অনেক উপকারী। কারণ ড্রাগন ফলের মধ্যে ভালো পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেল থাকে। এই উপাদানগুলো মূলত শরীরকে ভেতর থেকে শক্তি দেয় এবং শরীরকে সতেজ ও টাটকা করে তোলে। তাই শরীর দুর্বল থাকলে সেই দুর্বলতা কাটাতে ড্রাগন ফল অনেক ভালো কাজ করে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ ড্রাগন ফলের মধ্যে প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি থাকে এই উপাদানগুলো শরীরকে বিভিন্ন ধরনের খারাপ ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থাকে রক্ষা করে। যার কারণে শরীর সহজে অসুস্থ হয় না এবং শরীর থাকে সুস্থ ও সবল।
হজম শক্তি বাড়ায়ঃ ড্রাগন ফল পেটের বিভিন্ন সমস্যা থাকলে সেটা ভালো করতে সাহায্য করে। ড্রাগন ফলের মধ্যে ফাইবার থাকে এই ফাইবার হজমের সমস্যা থাকলে হজমের সমস্যা ভালো করে। এছাড়াও ভালোভাবে হজম প্রক্রিয়া কাজ না করার কারণে পেটে যে গ্যাস পেট জ্বালাপোড়া করা এবং পেট ফোলা ভাব হওয়া ভালো করে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতেও ড্রাগন ফল অনেক উপকারী।
হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ ড্রাগন ফল শরীরের মধ্যে ভালো ফ্যাটের পরিমাণ বাড়ায় এবং খারাপ ফ্যাট অর্থাৎ চর্বির পরিমাণ কমায়। যার কারণে শরীরের রক্তের মধ্যে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদপিন্ডের বিভিন্ন ধরনের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে সেটার ঝুঁকি কমে যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ ড্রাগন ফলের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক ফাইবার শরীরের রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখে। যার কারণে এটা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী। তবে অতিরিক্ত না এটা থেকে ডায়াবেটিস রোগীরা উপকার পেতে চাইলে অবশ্যই সেটা সীমিত পরিমানে খেতে হবে।
ওজন কমাতেঃ ড্রাগন ফলের মধ্যে ক্যালোরির পরিমাণ অনেক কম থাকে। কিন্তু এর মধ্যে প্রাকৃতিক ফাইবার অনেক বেশি থাকে। এটা যদি খাওয়া হয় তাহলে এই ফাইবার পেটকে তাড়াতাড়ি ভরীয়ে দেয় এবং খিদাও কম লাগে। যার কারণে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যায় এবং ওজন কমতে শুরু করে। যাদের অতিরিক্ত ওজন তারা যদি ওজন কমাতে চান, তাহলে এই ফলটি অনেক উপকারী।
ত্বক ও চুল সুন্দর করেঃ ড্রাগন ফল ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে ও চুলের গোড়াকে শক্ত করে। চুল পড়া বন্ধ করে সেই সাথে চুল দেখতেও অনেক ঝলমলে হয়ে ওঠে। কারণ ড্রাগন ফলের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মূলত ত্বক ও চুলের জন্য অনেক উপকারী।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ ড্রাগন ফলের মধ্যে এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান আছে। যেগুলো শরীরের মধ্যে ক্যান্সার উৎপন্নকারী কোষগুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। যার কারণে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকলে সেই ঝুঁকি এই ড্রাগন ফল খুব সহজেই কমিয়ে দিয়ে থাকে। তাই নিয়মিত ড্রাগন ফল খাওয়া ভালো।
হাড়ের ও দাঁতের জন্যঃ ড্রাগন ফলের মধ্যে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকে। এই উপাদানগুলো মূলত দাঁতের ক্ষয় রোধ করে এবং দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। সেই সাথে এটা হাড় গঠন করতে সাহায্য করে এবং হাড়কে মজবুত করে। এক কথায় বলা যায় যে ড্রাগন ফল দাঁতের ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য অনেক উপকারী।
রক্তের ঘাটতিতেঃ শরীরের মধ্যে যদি রক্তশূন্যতা দেখা দেয় আর এই সময় যদি এই ড্রাগন ফল খাওয়া হয় তাহলে ড্রাগন ফল শরীরের রক্তের ঘাটতি পূরণ করে দেয়। কারণ ড্রাগন ফলে আয়রন থাকে আর এ আয়রন থাকার কারণে এটা শরীরের মধ্যে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় যেটা শরীরের মধ্যে রক্তের ঘাটতি থাকলে সেটা কমাতে সাহায্য করে।
মানসিক চাপ কমাতেঃ যাদের অতিরিক্ত মানসিক চাপ বিভিন্ন দুশ্চিন্তায় ভোগেন এবং ঘুমও ভালো হয় না তাদের জন্য ড্রাগন ফল অনেক উপকারী। ড্রাগন ফলের মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে এটা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে যার কারণে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থাকলে সেটা দূর হয় সেই সাথে ঘুমও ভালো হয় যার কারণে মন থাকে সবসময় হাসিখুশি।
চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতেঃ ড্রাগন ফল চোখের দৃষ্টি শক্তি কম থাকলে সেটাকে বাড়াতে সাহায্য করে। কারণ ড্রাগন ফলের মধ্যে ভিটামিন এ সহ বিটা ক্যারোটিন ভালো পরিমাণে থাকে। এই উপাদান গুলো মূলত রাতকানা রোগ থাকলে সেটাকে প্রতিরোধ করে এবং চোখের দৃষ্টি শক্তি কম থাকলে সেটাকে বাড়াতে সাহায্য করে।
ড্রাগন ফলের অপকারিতা
ডায়রিয়ার সমস্যাঃ যদিও ড্রাগন ফল অনেক উপকারী। তারপরেও এটা যদি সঠিক নিয়ম এবং পরিমাণ অনুযায়ী না খাওয়া হয়, তাহলে এটা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। যদি অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খাওয়া হয়, তাহলে এটা হজমের সমস্যা কমানোর চাইতে বাড়িয়ে দিতে পারে। যার কারণে পেট খারাপ হওয়া এবং ডায়রিয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তাদের কষ্ঠোকাঠিন্য সমস্যাও বাড়তে পারে। তাই পরিমাণে ড্রাগন ফল অল্প খেতে হবে।
এলার্জি সমস্যাঃ যদিও সবার ক্ষেত্রে এলার্জির সমস্যা দেখা দেয় না। তারপরেও কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ড্রাগন ফল এলার্জির সমস্যা তৈরি করতে পারে। যেমন ড্রাগন ফল খাওয়ার পর শরীরে চুলকানি, ফুসকুড়ি, ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, চোখ মুখ ফুলে যাওয়া এবং শ্বাসকষ্ট হওয়ার মত সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই ড্রাগন ফল খাওয়ার পর এই সব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে দ্রুত সেটা খাওয়া বন্ধ করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যঃ ড্রাগন ফল যদি ডায়াবেটিস রোগীরা অতিরিক্ত খায়, তাহলে তাদের ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে। যেটা কখনোই একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ভালো নয়। তাই ড্রাগন ফল ডায়াবেটিস রোগীদের বেশি খাওয়া উচিত নয়। কারণ ড্রাগন ফলের মধ্যে প্রাকৃতিক চিনি থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা অল্প পরিমাণে ড্রাগন ফল খাবে তা না হলে এটা ক্ষতি করবে।
গ্যাসের সমস্যাঃ ড্রাগন ফল যেহেতু ফাইবারযুক্ত একটি প্রাকৃতিক ফল। তাই এটা যদি অতিরিক্ত খাওয়া হয় তাহলে এটা পেটের মধ্যে হজম প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে দিতে পারে যার কারণে পেটের মধ্যে গ্যাসের সমস্যা এবং পেট ফোলা ভাব ও জ্বালাপোড়া করতে পারে। তাই ড্রাগন ফল অতিরিক্ত না খেয়ে সঠিক পরিমাণ অনুযায়ী খাওয়ায় নিরাপদ।
ওজন বাড়াতে পারেঃ ড্রাগন ফল সাধারণত ওজন কমানোর জন্য ভাল কাজ করে। কিন্তু এই ফলের মধ্যে প্রাকৃতিক চিনি থাকার কারণে এটা যদি অতিরিক্ত খাওয়া হয় তাহলে এটা শরীরের মধ্যে ক্যালরির মাত্রা বাড়াতে পারে যার কারণে স্বাভাবিকভাবেই ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কিডনির রোগীদের জন্যঃ যাদের কিডনির অসুখ আছে তারা অতিরিক্ত যদি ড্রাগন ফল খায়। তাহলে শরীরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম জমতে পারে। কারণ ড্রাগন ফলের মধ্যে পটাশিয়াম ভালো থাকে। এই পটাশিয়াম মূলত কিডনির সমস্যা থাকলে শরীর থেকে ভালোভাবে বার হতে পারে না। যার কারণে এটা কিডনির ক্ষতি করার পাশাপাশি শরীরের আরো অনেক ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
ওষুধের সাথে বিরূপ প্রতিক্রিয়াঃ যারা ডায়াবেটিসের ওষুধ খান এবং রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান তারা যদি ড্রাগন ফল খান তাহলে এই ওষুধগুলোর সাথে ড্রাগন ফল বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। কারণ ড্রাগন ফলের মধ্যে ভিটামিন কে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এই উপাদান গুলো মূলত রক্তকে পাতলা করার জন্য কাজ করে। আর এর সাথে যদি রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান, তাহলে অতিরিক্ত রক্ত পাতলা হয়ে রক্ত ক্ষরণ দেখা দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এখন আমি আপনাদের সাথে
আলোচনা করবো। ড্রাগন ফল যদি গর্ভাবস্থায় খাওয়া হয়, তাহলে এটা গর্ভবতী মা
এবং পেটে থাকা সন্তানের জন্য অনেক উপকার বয়ে আনে। কারণ এই ড্রাগন ফলের মধ্যে
অনেক ভালো পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল ও এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
এই উপাদানগুলো মূলত একজন গর্ভবতী মায়ের শারীরিক সুস্থতা এবং শরীর দুর্বল
থাকলে সেই দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও আরো অনেক উপকার পাওয়া
যায় এই ফলটি যদি গর্ভাবস্থায় খাওয়া হয়। চলুন তাহলে সেই উপকারিতা গুলো
সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
- গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের হজমের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্যর মত সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় যদি ড্রাগন ফল সঠিক নিয়ম মেনে পরিমান অনুযায়ী গর্ভবতী মা খেতে পারে। তাহলে ড্রাগন ফলের মধ্যে থাকা ফাইবার হজমের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে সেটা কমাতে সাহায্য করে।
- গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় অনেক ধরনের ভাইরাসজনিত অসুখ বিসুখ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু ড্রাগন ফল যদি খাওয়া হয়, তাহলে সেটা গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন ধরনের অসুখ বিসুখ থেকে রক্ষা করে। ড্রাগন ফলে থাকা ভিটামিন সি মা এর এবং পেতে থাকা সন্তানের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শরীরে রক্তের বেশি প্রয়োজন হয়। আর এ সময় মূলত তাদের শরীরে রক্তের ঘাটতি দেখা যায়। এই রক্তের ঘাটতি পূরণ করতে ড্রাগন ফল অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ ড্রাগন ফলের মধ্যে আয়রন থাকে, যেটা শরীরের মধ্যে রক্তের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে থাকে। এই ড্রাগন ফল গর্ভবতী নারীর শরীরের মধ্যে অক্সিজেন চলাচল প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে। যেটা একজন গর্ভবতী মায়ের এবং শিশুর জন্য অনেক উপকারী।
- গর্ভে থাকার সন্তানের হাড়ের ও দাঁতের সঠিক গঠন করতে ড্রাগন ফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ড্রাগন ফলে ভালো পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। এই ক্যালসিয়াম শিশুর হাড়কে ও দাঁতকে শক্ত করতে সাহায্য করে এর পাশাপাশি মায়ের হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তাই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত।
-
ড্রাগন ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে আর এই
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরের মধ্যে থাকা
ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যাল কমাতে সাহায্য করে। যার কারণে একজন
মায়ের স্বাস্থ্য হয়ে ওঠে সক্রিয় ও শক্তিশালী। এর পাশাপাশি
এই ড্রাগন ফল মায়ের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর পাশাপাশি চুলের যত্নেও
ভালো কাজ করে থাকে।
গর্ভাবস্থায় যদি সঠিক পরিমাণে এই ড্রাগন ফল খাওয়া হয়। তাহলে
এটা গর্ভবতী মায়ের শারীরিক সমস্যাগুলো দূর করে এবং সন্তানের
সঠিক বিকাশ করতে সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থায় এই ড্রাগন ফল
চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত। এটা গর্ভবতী মায়ের জন্য অনেক
উপকারী একটি ফল।
বাচ্চাদের ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা
আপনারা অনেকেই আছেন যারা জানতে চেয়েছেন বাচ্চাদের ড্রাগন ফল খাওয়ার
উপকারিতা সম্পর্কে। ড্রাগন ফল বাচ্চাদের জন্য অনেক উপকারী একটি খাবার। এই
ফলটি বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এই
ফলটির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান আছে। যেমন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,
ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ।
এই উপাদানগুলো শিশুর জন্য অনেক ভালো। এই ফলটি বাচ্চাদের খাওয়ালে কি কি
উপকারিতা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। বাচ্চাদের শরীরকে
হাইড্রেট রাখতে এই ড্রাগন ফল ভালো কাজ করে।বিশেষ করে গরমের দিনে যেসব
বাচ্চারা বেশি খেলাধুলা করে। তাদের শরীরের মধ্যে পানির শূন্যতা দেখা দেয়।
যেহেতু ড্রাগন ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। তাই বাচ্চাদের ড্রাগন
ফল খাওয়ালে, সেটা বাচ্চাদের শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে অর্থাৎ
শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করে থাকে। এছাড়াও বাচ্চাদের হজম শক্তি সাধারণত কম
হয়ে থাকে। যার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দেখা দেয়। এ সমস্যা ভালো
করতে কাজ করে এই ড্রাগন ফল।
কারণ ড্রাগন ফলের মধ্যে ফাইবার আছে। এই ফাইবার মূলত হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত
করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। ড্রাগন ফলের মধ্যে ভিটামিন সি
ভালো পরিমানে থাকে। যার কারণে এটা বাচ্চাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়ায় এবং সহজেই সর্দি কাশি জ্বর হতে পারে না। ড্রাগন ফল শিশুদের হাড় ও
দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ড্রাগন ফলের মধ্যে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে। যেটা শিশুদের উঠতি বয়সে অনেক
প্রয়োজন। তাদের হাড়কে শক্ত করার জন্য এই ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস প্রয়োজন
হয় যেগুলো মূলত ড্রাগন ফল দিয়ে থাকে। এক কথায় বলতে হয় বাচ্চাদের যদি
সঠিক নিয়ম মেনে এবং পরিমাণ অনুযায়ী প্রতিদিন ড্রাগন ফল খাওয়ানো হয়,
তাহলে এটা তাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি তার
শরীরের সঠিক বিকাশ নির্ধারণ করে।
ড্রাগন ফল খাওয়ার সঠিক সময়
ড্রাগন ফল খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে আপনারা অনেকে আছেন যারা
জানতে চেয়েছেন। তাই এখন আমি আপনাদেরকে জানাবো যে এই ফলটি
খাওয়ার সঠিক সময় কোনটি। আপনি যদি ড্রাগন ফল থেকে ভালো উপকার
পেতে চান? তাহলে এটি খাওয়ার সব থেকে সঠিক সময় হচ্ছে সকালে খালি
পেটে বা নাস্তার সাথে খাওয়া এবং বিকাল বেলায় খাওয়া। আপনি যদি এই
সময় এই ফলটি খেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ
জায় ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত
তাহলে এই ফল থেকে আপনি ভালো পরিমানে উপকার পাবেন। আপনার শরীরের
বিভিন্ন সমস্যা দূর হবে এবং শরীর হয়ে উঠবে সতেজ ও
শক্তিশালী। আশা করছি উপরোক্তা আলোচনা থেকে আপনি এই ফলটি
খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনি চাইলে উপরে গিয়ে
কিডনি রোগী কি ড্রাগন ফল খেতে পারবে এই বিষয়ে জেনে আসতে
পারেন। সেখানে আমি সুন্দরভাবে এই বিষয়ে ব্যাখ্যা করেছি।
ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম
ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে এখন আমি আপনাদেরকে জানাবো। কারণ
ড্রাগন ফলের এত উপকারিতা আপনি যদি সঠিক নিয়ম না মেনে খেতে পারেন, তাহলে
পাবেন না। তাই আপনাকে আগে জানতে হবে, এই ফলটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম
সম্পর্কে। প্রথমেই এই ফলটি আপনাকে সঠিক সময় অনুযায়ী খেতে
হবে।
আপনি এই ফলটি সকালে অথবা বিকালে খেতে পারেন। রাতের
বেলায় এটি খাওয়া উচিত নয়। অবশ্যই এই ফলটি খাওয়ার সময় পরিমাণ
মেনে খেতে হবে। যেটার পরিমাণ হতে হবে দিনে সর্বোচ্চ একটি ড্রাগন
ফল। এর থেকে বেশি খেলে এটা হজমের সমস্যা এবং ডায়রিয়ার সমস্যা তৈরি
করতে পারে।
অবশ্যই ড্রাগন ফলটি টাটকা থাকতে হবে। এই ফলটি বাজার থেকে নিয়ে এসে
ভালোভাবে ধুয়ে সেটাকে কেটে খোসা ছাড়িয়ে নিতে
হবে। এরপর ভেতরের অংশটুকু খেয়ে ফেলতে হবে। আপনি চাইলে
ড্রাগন ফলের শরবত করেও খেতে পারেন। এই ফলের নরম অংশটুকু ব্লেন্ডারে
ব্লেন্ড করে খুব সহজেই আপনি শরবত বানিয়ে নিতে পারেন।
অবশ্যই যারা ছোট বাচ্চা তাদেরকে এটি অল্প পরিমাণে খাওয়াতে হবে। আর যারা
গর্ভবতী মহিলা তাদের এই ফলটি খাওয়ার আগে ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিতে
হবে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদেরকে অবশ্যই এটি সীমিত পরিমানে
খেতে হবে। তবে সব থেকে ভালো হয় এটি খাওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের
পরামর্শ নেওয়া।
কেন এই ফলের নাম ড্রাগন
অনেকে আছেন যারা জানতে চেয়েছেন যে কেন এই ফলের নাম ড্রাগন রাখা
হয়েছে। চলুন তাহলে এই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। সাধারণত
ড্রাগন ফলের খোসা গোলাপি রঙের হয়ে থাকে এবং এই ফলের খোসায় সবুজ
কাটার মত অংশ বার হয়ে থাকে। যেটা দেখতে একদম ড্রাগনের শরীরের
আঁশ এর মত হয়। যার কারণে এই ফলটির নাম ড্রাগন বলা হয়ে
থাকে।
এমনকি চিনে ড্রাগন নামটি তাদের সৌভাগ্য ও শক্তির প্রতীক হিসেবে পরিচিত।
আর এই ফলটি দেখতে যেহেতু ড্রাগনের মতো এবং উপকারিতাও অনেক বেশি। তাই
তারাও এই ফলটিকে ড্রাগন নামে ডেকে থাকে। আশা করছি আপনি কেন এই
ফলকে ড্রাগন বলা হয় সে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
ড্রাগন ফলের ইংরেজি ও ড্রাগন ফলের বৈজ্ঞানিক নাম
এখন আমি আপনাদেরকে ড্রাগন ফলের ইংরেজি নাম এবং এই ফলের বৈজ্ঞানিক নাম
সম্পর্কে জানাবো। ড্রাগন ফলের ইংরেজি নাম হচ্ছে Dragon
Fruit এবং এই ফলটির বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Hylocereus undated।
আশা করছি আপনি ড্রাগন ফলের ইংরেজি নাম এবং ড্রাগন ফলের বৈজ্ঞানিক নাম
দুটোই আমার এই আলোচনা থেকে জানতে পেরেছেন। আপনি যদি আপনার শরীরের
পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে চান তাহলে অবশ্যই এই ফলটি আপনি নিয়মিত পরিমাণ
অনুযায়ী খাবেন। এটি খেলে আপনার শরীরের পুষ্টির ঘাটতি থাকলে সেটা
পূরণ হবে এবং অনেক সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে
এখন আমি আপনাদেরকে ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানাবো। তাই দেরি
না করে চলুন তাড়াতাড়ি এই ফলের মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণ গুলো জেনে
নিই।
| ড্রাগন ফলের মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণ | ড্রাগন ফলের মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণের পরিমাণ |
|---|---|
| ক্যালোরি | 50 থেকে 60 কিলোক্যালরি |
| পানি | ৮৫ গ্রাম |
| কার্বোহাইড্রেট | ১০ থেকে ১৩ গ্রাম |
| প্রোটিন | ১.৫ গেরাম |
| ফ্যাট | ০.৬ গ্রাম |
| ফাইবার | ৩ গ্রাম |
| ভিটামিন সি | ৪ মিলিগ্রাম |
| ভিটামিন বি১ | ০.১ মিলিগ্রাম |
| ভিটামিন বি২ | ০.১ মিলিগ্রাম |
| ভিটামিন বি৩ | ০.৫ মিলিগ্রাম |
| ক্যালসিয়াম | ১১ মিলিগ্রাম |
| আয়রন | ০.৫ মিলিগ্রাম |
| ম্যাগনেসিয়াম | ১১ মিলিগ্রাম |
| ফসফরাস | ৩০ মিলিগ্রাম |
| অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট | ভালো পরিমাণে |
ড্রাগন ফল খেলে কি রক্ত বাড়ে
ড্রাগন ফল খেলে কি রক্ত বাড়ে এই বিষয়ে আপনারা অনেকেই আছেন যারা জানতে চেয়েছেন।
ড্রাগন ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। আর এই আয়রন থাকার কারণে এটা মূলত
শরীরের মধ্যে রক্ত উৎপন্ন করে। যাদের শরীরের রক্তের ঘাটতি আছে তারা যদি নিয়মিত
ড্রাগন ফল খেতে পারে। তাহলে এই ফলটির মধ্যে থাকা আইরন শরীরের মধ্যে হিমোগ্লোবিনের
মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে এবং এতে থাকা ভিটামিন সি আয়রন গুলোকে কাজে লাগাতে
পারে।
যার কারণে শরীরের রক্তের ঘাটতি থাকলে সেটা পূরণ হয়ে যায়। এই ড্রাগন ফল মূলত
সেইসব ব্যক্তিদের জন্য বেশি দরকারি যেসব ব্যক্তিদের শরীর অনেক দুর্বল। বিশেষ করে
গর্ভবতী মহিলাদের রক্তের প্রয়োজন বেশি হয় তাই তাদের জন্য এটি বেশি
দরকারি। সর্বশেষ বলা যায় যে ড্রাগন ফল খেলে শরীরে রক্ত বাড়াতে সাহায্য
করে।
ড্রাগন ফল খেলে কি ওজন বাড়ে
আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন যে ড্রাগন ফল খেলে কি ওজন বাড়ে। ড্রাগন ফল মূলত
ওজন নিয়ন্ত্রণ বা ওজন কমানোর জন্য মানুষ খেয়ে থাকে। কারণ এর মধ্যে
প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে এবং ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম থাকে। যেগুলো ওজন
কমানোর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে এই ড্রাগন ফল যদি
আপনি পরিমাণ এর চেয়ে বেশি অর্থাৎ অতিরিক্ত খান।
তাহলে এই ড্রাগন ফলের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক চিনি শরীরের মধ্যে শর্করার
মাত্রা বাড়িয়ে অতিরিক্ত ক্যালরি জমিয়ে ফেলতে পারে। যার কারণে ওজন
বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই বলা যায় যে আপনি যদি এটা সঠিক নিয়ম ও
পরিমাণ অনুযায়ী খান, তাহলে এটা আপনার ওজন বাড়াবে না বরং এটা ওজন কমাবে কিন্তু
অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়তে পারে।
ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা
আপনারা অনেকেই ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমরা
অনেকেই ড্রাগন ফলের খোসার উপকারিতা সম্পর্কে জানিনা। যার কারণে আমরা এই ফলের
খোসা ছাড়িয়ে ফেলে দিই। কিন্তু আমরা যদি জানতাম যে এর কত উপকারিতা রয়েছে,
তাহলে কখনোই আমরা এই ফলে খোসা ফেলে দিতাম না।
এই ফলের যে রকম পুষ্টি গুণাগুণ আছে। তেমনি এই ফলের খোসাতেও কিছু ভিটামিন,
মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। যেগুলো স্বাস্থ্যের এবং রূপচর্চার জন্য অনেক
উপকারী। এই ফলের খোসার মধ্যে বিটা ক্যারোটিন, ফ্লাভোনয়েড ও অ্যান্থোসায়ানিন
উপাদান থাকে। এই উপাদানগুলো শরীরের মধ্যে থাকা ফ্রি রেডিক্যাল দূর করতে সাহায্য
করে। যেটা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে।
এছাড়াও ড্রাগন ফলের এমন কিছু উপাদান আছে। যেগুলো রক্তের চিনির মাত্রাকে
নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যার কারণে ডায়াবেটিস থাকে নিয়ন্ত্রণে।
হার্টের জন্য এই খোসার উপকারিতা অনেক। কারণ এই খোসায় থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
ও আঁশ যেগুলো রক্তের কোলেস্টেরল কমায়। যার কারণে হার্টের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন
ভালো থাকে এবং হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়।
এই খোসার মধ্যে ফাইবার থাকে, যার কারণে এটা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়াও এটা
চুলের এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে করে। ত্বককে করে উজ্জ্বল এবং চুল পড়া
কমায়। বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস জনিতরোগ থেকে রক্ষা করে। কারণ এর মধ্যে ভিটামিন সি
এবং আন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এই উপাদানগুলো মূলত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে
অনেক বাড়িয়ে থাকে। এক কথায় বলা যায় যে ড্রাগন ফলের যে গুণাগুণ রয়েছে তার
খোসার মধ্যেও ভালো পরিমাণে গুনাগুন রয়েছে।
ড্রাগন ফল সম্পর্কিত কিছু আলোচিত প্রশ্নের উত্তর
এখন আমি আপনাদেরকে ড্রাগন ফল নিয়ে কিছু আলোচিত প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে
জানাবো। তাই দেরি না করে চলুন ড্রাগন ফলের সেই আলোচিত প্রশ্নের উত্তর
গুলো সম্পর্কে জেনে নিই।
ড্রাগন ফল খেলে কি গ্যাস হয়?
উত্তরঃ ড্রাগন ফল যদি সঠিক নিয়ম এবং পরিমাণ অনুযায়ী খাওয়া হয়। তাহলে এটা
গ্যাস করে না বরং পেটের বিভিন্ন সমস্যা ভালো করে থাকে এবং গ্যাস দূর
করে। তবে এটা যদি পরিমাণ এর চেয়ে বেশি অর্থাৎ দিনে একটি ড্রাগন ফল এর
বেশি যদি খাওয়া হয় তাহলে গ্যাস হতে পারে। তাই অতিরিক্ত না খেয়ে সীমিত
পরিমানে খাওয়া উচিত।
ওজন কমাতে ড্রাগন ফল খাওয়া যাবে কি?
উত্তরঃ ড্রাগন ফল এর মধ্যে ফাইবার অনেক বেশি পরিমাণে থাকে এবং এই ফলটিতে
ক্যালরি ও অনেক কম থাকে। যার কারণে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে না। এই
ফলটি মূলত ওজনকে কমানোর জন্য ভালো কাজ করে। কারণ এর ফাইবার পেটকে
অনেকক্ষণ ভরিয়ে রাখে এবং শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরিও জমে না। যার কারণে আস্তে
আস্তে ওজন কমতে শুরু করে। তাই বলা যায় ওজন কমাতে ড্রাগন ফল খাওয়া যাবে।
ড্রাগন ফল খেলে কি পায়খানা লাল হয়?
উত্তরঃ ড্রাগন ফল লাল হওয়ার কারণে এটি খাওয়ার পর পায়খানা
বা প্রসাব করার সময় সেটির রং লাল হতে পারে। তাই বলা
যায় ড্রাগন ফল খেলে পায়খানা লাল হয়।
ড্রাগন ফল মুখে মাখলে ত্বকের কি কি উপকার হয়?
উত্তরঃ ড্রাগন ফল ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য অনেক
উপকারী। এই ফলটি যদি মুখে মাখা হয় তাহলে এই ফলটিতে থাকা প্রাকৃতিক
পুষ্টি গুনাগুন গুলো ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করতে সাহায্য
করে। সেই সাথে ত্বকে ব্রণ বা দাগ থাকলে সেই দাগ দূর করে।
ত্বকে বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে। ত্বককে নরম মসৃণ এবং সুন্দর করে।
এছাড়াও এটি ত্বকে মাখলে রোদে পোড়া দাগ এবং রোদ থেকে ত্বককে সুরক্ষা দিয়ে
থাকে।
একটি ড্রাগন ফলে কত ক্যালরি থাকে?
উত্তরঃ একটি ড্রাগন ফল সেটার ওজন যদি ১০০ গ্রাম হয়। তাহলে এটার মধ্যে
প্রায় ৬০ ক্যালোরি থাকে আর যদি ১০০ গ্রামের উপরে একটি ড্রাগন ফলের ওজন হয়।
তাহলে এই ড্রাগন ফলের মধ্যে ক্যালোরি পরিমাণ থাকতে পারে ১৬০ থেকে ২০০
ক্যালোরি। আশা করছি একটি ড্রাগন ফলে কত ক্যালরি থাকে সেটা জানতে
পেরেছেন।
লেখকের মন্তব্যঃ কিডনি রোগী কি ড্রাগন ফল খেতে পারবে
কিডনি রোগী কি ড্রাগন ফল খেতে পারবে এই বিষয়ে আমি আমার আর্টিকেলের মধ্যে
বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এর পাশাপাশি ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা,
ড্রাগন ফল খাওয়ার সঠিক সময় এবং ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আলোচনা
করেছি। আশা করছি আমার এই আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনি ড্রাগন ফল
সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে পেরেছে।
আপনি যদি আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে আমার এই
আর্টিকেলটি আপনি আপনার পরিচিত মানুষদের কাছে শেয়ার করবেন এবং তাদেরকেও জানার
সুযোগ করে দিবেন। এছাড়াও আপনার যদি আমার এই আর্টিকেলটি নিয়ে কোন প্রশ্ন বা
মতামত থাকে অথবা আপনি যদি নতুন কোন বিষয় সম্পর্কে জানতে চান?
তাহলে আমাদের যোগাযোগ পেজে অথবা নিচে থাকা কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে
জানাবেন।


অপরাজিতা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url