রোবটিক্স কি রোবটিক্স এর ব্যবহার এর সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত
রোবটিক্স কি এ রোবট এর সুবিধা ও অসুবিধা, রোবটিক্স এর প্রকারভেদ এবং
রোবটিক্স এর ব্যবহার সম্পর্কে এখন আমি আমার এই আর্টিকেল এর মধ্যে
বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আপনি যদি রোবট ব্যবহারের সুবিধা কি জানতে চান? তাহলে আমার এই আর্টিকেলটি
ভালোভাবে পড়বেন। চলুন তাহলে আর দেরি না করে রোবটিক্স সম্পর্কে সকল তথ্য
ভালোভাবে জেনে নিন।
পেজ সুচিপত্রঃ রোবটিক্স কি
- রোবটিক্স কি
- রোবট এর সুবিধা ও অসুবিধা
- রোবট দিয়ে কি কি সমস্যা সমাধান করা যায়
- রোবটিক্স এর ব্যবহার
- রোবট ব্যবহারের সুবিধা কি
- রোবটিক্স এর জনক কে
- রোবোটিক্স এর প্রকারভেদ
- রোবোটিক্সের সবচেয়ে বড় ৭টি চ্যালেঞ্জ কি
- রোবটের দুর্বলতা সম্পর্কে
- FAQ/রোবটিক্স সম্পর্কিত কিছু আলোচিত প্রশ্নের উত্তর
- লেখকের মন্তব্যঃ রোবটিক্স কি বিস্তারিত
রোবটিক্স কি
আপনারা অনেকেই রোবটিক্স কি এই সম্পর্কে জানেন না। এখন আমি আপনাদেরকে এটি
সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। বর্তমান সময়ে রোবটিক্স না জানা ব্যক্তি খুব কমই
আছে। বর্তমান সময়ে রোবট সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা অনেক জরুরী। কারণ
বর্তমান যুগে প্রযুক্তি অনেক তাড়াতাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ লাইটার পোকা তাড়ানোর উপায় সম্পর্কে জানুন
মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও সহজ করে তোলার জন্য এবং শিক্ষা, শিল্প, চিকিৎসা ও
মহাকাশ গবেষণা করার জন্য প্রতিটি জায়গায় এই আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা
হচ্ছে। এই প্রযুক্তির মধ্যে অন্যতম একটি স্থান দখল করে আছে রোবটিক্স।
রোবটিক্স হচ্ছে এমন একটা বিজ্ঞান শাখা যেখানে মানুষের কঠিন কাজকে সহজ করার
জন্য এবং সঠিক রূপ দেওয়ার জন্য রোবট তৈরি করা হয়।
রোবটিক্সের এই শাখাতে রোবটের ডিজাইন, রোবট তৈরি, রোবটের নিয়ন্ত্রণ এবং
রোবটের প্রোগ্রাম করা হয়। সহজ ভাবে বলতে গেলে একটি রোবটকে মানুষের মতো
চলাফেরা করার জন্য এবং মানুষের মত চিন্তা করা, সিদ্ধান্ত নেওয়া ও বিভিন্ন
কাজ করার ক্ষমতা মূলত রোবটিক্স এর মাধ্যমেই দেওয়া হয়ে থাকে। রোবোটিক্স এর
মাধ্যমে তৈরি করা রোবটগুলো মানুষের নিয়ন্ত্রণে কাজ করে থাকে।
মানুষ যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে রোবটগুলোকে পরিচালনা করতে পারে। এছাড়াও রোবটিক্স
এর মাধ্যমে রোবট এর মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যে
বুদ্ধিমত্তার কারণে রোবট নিজেই তার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বর্তমান যুগে
রোবটিক্স এর দ্বারা সকল জটিল কাজ সম্পাদন করা হয় যেমন চিকিৎসা ক্ষেত্রে,
শিক্ষা ক্ষেত্রে, কৃষি ক্ষেত্রে, মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্রে ইত্যাদি। আশা করছি
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনি রোবটিক্স আসলে কি এই বিষয়ে ভালোভাবে জানতে
পেরেছেন।
রোবট এর সুবিধা ও অসুবিধা
আপনারা অনেকে আছেন যারা রোবট এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন।
বর্তমান সময়ের রোবটের অনেক সুবিধা রয়েছে এটি মানুষের বিভিন্ন ধরনের কাজকে
আরো সহজ এবং দ্রুত সম্পন্ন করতে সাহায্য করছে। এক কথায় বলা যায় যে বর্তমান
যুগে যত সব কঠিন কাজ আছে সেগুলোকে সহজ ভাবে করে দিতে সাহায্য করছে।
এটি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে। রোবট মানুষের জন্য অনেক সুবিধা
তৈরি করলেও এর কিছু অসুবিধা রয়েছে। যেই অসুবিধা গুলো অনেকেই জানেন আবার
অনেকে জানেন না। চলুন তাহলে রোবটের সুবিধা এবং অসুবিধা গুলো কি সেগুলো
বিস্তারিতভাবে জেনে নিই।
রোবটের সুবিধা গুলো হচ্ছে
বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ যেগুলো মানুষের করা উচিত নয় বা করতে করতে
গেলে জীবন হারানোর ঝুঁকি থাকে। সেই কাজগুলোকে এই রোবট খুব সহজেই করে
দিতে পারে। এতে মানুষের জীবনের কোন ঝুঁকি থাকে না। যেমন বোমা
নিষ্ক্রিয়করণ, পারমাণবিক কেন্দ্রে এর ব্যবহার এবং মহাকাশ
ভ্রমণে রোবটের ব্যবহার।
কাজ করতে পারে নির্ভুলভাবে। রোবট মানুষের তুলনায় নির্মূল ভাবে সুন্দর ও
দ্রুত কাজ করতে পারে। এটা মূলত কারখানার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ একটানা তৈরি
করে যেতে পারে এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে এটি নির্ভুলভাবে কাজ
করে। বিভিন্ন সার্জারির সময় একজন মানুষের হাতে ভুল হওয়ার
সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু রোবট সেই সার্জারি বা
অপারেশন নির্ভুলভাবে বহুবার করতে পারে। যার কারণে চিকিৎসা ক্ষেত্রে
ভালো সুবিধা বা উপকার পাওয়া যায়।
রোবট কাজের সময় কম লাগায় এবং খরচ ও তুলনামূলক অনেক কমিয়ে থাকে। এটা
মূলত বিভিন্ন কারখানায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেটা ব্যবসার উৎপাদন
বাড়াতে সাহায্য করে এবং শ্রমিকের তুলনায় এর খরচও কম লাগে। কারণ
রোবট ২৪ ঘন্টা কাজ করতে পারে এর কোন ক্লান্তি থাকে না এবং মানুষের তুলনায়
এটা অনেক বেশি এবং সঠিকভাবে কাজ করতে পারে।
বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেমন উৎপাদনশীল কারখানাগুলোকে লাভজনক করতে
সাহায্য করে এই রোবট। এই রোবটের কোন ক্লান্তি নেই এরা সব সময়
কাজ করতে পারে এবং মানুষের তুলনায় অনেক বেশি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে
পারে। যেটা একজন ব্যবসায়িক বা কারখানাকে লাভবান করতে সাহায্য করে।
রোবটের কারণে কাজের কষ্ট এবং ভারী কাজ খুব সহজেই করা যায়। যার
কারণে মানুষের অতিরিক্ত পরিশ্রম বা কষ্ট হয় না। এটা মূলত বড় বড়
কারখানাগুলোতে বা গুদামে ভারী মালামাল উঠানো নামানোর কাজে ব্যবহার করা হয়।
এছাড়াও এটি কৃষি ক্ষেত্রেও সাহায্য করে। এটা জমি চাষ করা থেকে শুরু করে
বীজ রোপন এবং ফসল কাটা পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়। এমনকি এই রোবট বাড়িঘর
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার কাজও করতে পারে।
একই কাজ মানুষ করতে গেলে বিরক্ত বোধ করে এবং কাজের মান নিম্ন হতে পারে।
কিন্তু রোবটের কোন বিরক্তিবোধ থাকে না। যার কারণে সে টানা ২৪ ঘন্টা কাজ করতে
পারে এবং তার কাজের মান একই থাকে এর মধ্যে কোন পরিবর্তন হয় না। তাই বলা যায়
কাজের মান একই রাখতে এবং অনেক সময় ধরে কাজ করতে রোবটের অনেক সুবিধা।
স্মার্ট রোবট যারা বৃদ্ধ লোক বা অসুস্থ লোক সেবা করতে পারে। এমনকি যারা প্রতিবন্ধী যাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ
ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে। তারা রোবটিক্স অঙ্গ ব্যবহার করে তাদের জীবনকে আরো
সহজ ও সুবিধা করে তুলেছে।
যে জায়গাগুলোতে মানুষ কাজ করতে পারে না। সেই সব জায়গাতে রোবট খুব
সহজেই কাজ করতে পারে। যেমন মানুষ অন্ধকার জায়গায় এবং মানুষ
প্রবেশ করতে পারে না এমন কোন জায়গায় খুব সহজে রোবট প্রবেশ করতে পারে। যেমন
ধরেন সমুদ্রের তলদেশে কোন অনুসন্ধান বা গবেষণা করার জন্য মানুষ
রোবটকে পাঠিয়ে থাকে। যা গবেষণাকে বা কাজকে আরো নিখুঁতভাবে করতে সাহায্য করে।
এছাড়া মহাকাশের বিভিন্ন গবেষণা করার জন্য মানুষ রোবটকে পাঠিয়ে থাকে।
যার কারণে গবেষণা অনেক সহজ হয়।
শিক্ষা ক্ষেত্রে এর সুবিধা অনেক। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের নতুন কিছু
শেখানো এবং নতুন কিছু জানার জন্য রোবট অনেক উপকারী। রোবটের
কারণে শিক্ষার্থীরা বা নতুন প্রজন্মরা গবেষণা এবং নতুন নতুন উদ্বোধনে
আগ্রহী হয়ে ওঠে। ফলে তারা নতুন নতুন আবিষ্কার করতে পারে। এক কথায়
বলা যায় যে এটা শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন গবেষণা ও উদ্বোধনী
কাজে সাহায্য করে থাকে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষের থেকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে রোবট
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে নিয়ে থাকে। যেটা বর্তমান যুগকে আরো সহজ
ও সুবিধাজনক করে তোলেছে। যেমন ট্রাফিককে নিয়ন্ত্রণ করতে রোবট দ্রুত কাজ
করে। এছাড়াও ড্রোন নজরদারিতে রোবট সাহায্য করে।
রোবটের অসুবিধা গুলো হচ্ছে
রোবটের কারণে অনেক মানুষের কর্ম চলে যাচ্ছে যার কারণে বেকারত্বের সংখ্যা
দিন দিন বেড়েই চলছে। রোবট এমন কিছু কাজ করতে পারে যে কাজগুলো মানুষের থেকে
দ্রুত ও অনেক সুন্দর ভাবে হয়। এমনকি বর্তমানে রোবটের ব্যবহার এতই
বেড়েছে যে মানুষ তার ছোট বড় সকল কাজ রোবটের সাহায্যে খুব সহজে করে
নিতে পারছে। যার কারণে মানুষের দিন দিন চাকরি হারাচ্ছে এবং বেকার
হচ্ছে।
রোবটের ব্যবহার কেবলমাত্র যারা বড় ব্যবসায়িক বা প্রচুর টাকা পয়সাওয়ালা
মানুষ তারাই এটির ব্যবহার করতে পারে। কারণ রোবট প্রচুর ব্যয়বহুল
ব্যবস্থা। এটা মূলত তৈরীর জন্য এবং রক্ষাণাবেক্ষণ ও মেরামত করার
জন্য এবং এটিকে পরিচালনা করার জন্য প্রচুর টাকা খরচ করতে হয়।
যেটা ছোটখাটো কোন ব্যবসায়িক বা দরিদ্র দেশে ব্যবহার করতে পারেনা যা
হাতের নাগালের বাইরে।
এর আরো একটি অসুবিধা হচ্ছে রোবটের মধ্যে সৃজনশীলতার অভাব থাকে। রোবট
কেবলমাত্র প্রোগ্রাম অনুযায়ী তার কাজ পরিচালনা করে থাকে। এর
কোন আবেগ, চিন্তা, পরিকল্পনা ও সৃজনশীলতা থাকে না। তারা নিজের
সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে না। এটা মূলত প্রোগ্রামের উপর নির্ভর করে কাজ
করে থাকে।
রোবটের ব্যবহার মানুষের সৃজনশীলতা কে নষ্ট করে দিতে পারে। মানুষ যদি তার
সকল কাজ রোবট দ্বারা পরিচালনা করে। তাহলে মানুষের মধ্যে থাকা দক্ষতা
আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যাবে এবং রোবটের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। যেটা
একজন মানুষকে অলস ও অচল করে দেয়।
রোবট মূলত প্রোগ্রাম করা থাকে এবং এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় কম্পিউটার এবং
বিভিন্ন সফটওয়্যার দ্বারা। ভুলবশত যদি কোন খারাপ লোক এই প্রোগ্রামকে
হ্যাক করে বসে। তাহলে এটা বড় ধরনের দুর্ঘটনা বা অপরাধ ঘটাতে পারে। যেটা
একটা বড় অসুবিধা।
যেসব ফ্যাক্টরিতে রোবট দিয়ে কাজ করা হয়। তাদের জন্য অসুবিধার কারণ হতে
পারে হুট করে এই রোবটের সমস্যা দেখা দিলে। এটা ফ্যাক্টরির কাজের
বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। ফলে বড় ধরনের লোকসান তৈরি করতে পারে। এ
ছাড়াও এটি নষ্ট হলে এটা ঠিক বা রক্ষণাবেক্ষণ করতে প্রচুর পরিমাণে
অর্থ ব্যয় করতে হয়।
রোবট মূলত বিদ্যুৎ বা ব্যাটারির উপর নির্ভরশীল। যদি কারেন্ট বা ব্যাটারি
না থাকে, তাহলে এই রোবটগুলো অচল। তাই যেসব দেশে কারেন্টের বা বিদ্যুতের
সমস্যা আছে। সেসব দেশের ফ্যাক্টরিতে বা যারা এই রোবট গুলোর ব্যবহার করে
তাদের জন্য অসুবিধা হতে পারে।
রোবটের মধ্যে কোন আবেগ বা অনুভূতি থাকে না। যার কারণে কাজের মধ্যে
যেখানে আবেগ বা অনুভূতির প্রয়োজন সেখানে এই রোবট ব্যর্থ হয়। যার কারণে
রোবট কখনোই মানুষের বিকল্প হতে পারে না।
বর্তমান সময়ে রোবট আমাদের কাজকে অনেক সহজ এবং অনেক উন্নত করতে সাহায্য করে।
এর অনেক সুবিধা আছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর অসুবিধা গুলো লক্ষ্য করা যায়।
যেগুলো আমরা উপরে আলোচনা করলাম। আশা করছি উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনি রোবটের
সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
রোবট দিয়ে কি কি সমস্যা সমাধান করা যায়
বর্তমান সময়ে রোবট দিয়ে এমন কোন কাজ নাই যেটা করা যায়
না। বর্তমানে অনেক মানুষ তাদের বিভিন্ন কাজে বা বিভিন্ন
সমস্যা সমাধান করার জন্য রোবটের ব্যবহার করে থাকে। রোবট
দিয়ে কি কি সমস্যার সমাধান করা যায় সেগুলো সম্পর্কে
অনেকেই জানতে চাই। কিন্তু তারা সঠিক তথ্য বা উত্তর কোথাও খুঁজে পাই
না। তাই এখন আমি আমার এই আলোচনাতে রোবট দিয়ে কি কি সমস্যার সমাধান
করা যেতে পারে সে সকল বিষয়ে আলোচনা করবো।
শিল্প কারখানাগুলোতে এমন অনেক কাজ থাকে যেগুলো একজন মানুষের করা অসম্ভব
হয়ে পড়ে বা জীবনের ঝুঁকি থাকে। এমনকি অনেক ভারি ভারে জিনিসপত্র
উঠানামা করা লাগে। এগুলো রোবট দিয়ে খুব সহজেই করা যায়। যার
কারণে মানুষের জীবনের কোন ঝুঁকি থাকে না এবং কোন কষ্ট হয় না। ১০০ জন
মানুষ কারখানাতে যে কাজ করে সারাদিনে। রোবট সে কাজটি একাই কয়েক মিনিট
অথবা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে করে ফেলে।
বিভিন্ন যন্ত্রপাতিতে নিখুঁতভাবে কাজ করতে এবং সেই যন্ত্রপাতির ছোটখাটো
সমস্যা থাকলে। সেই সমস্যাকে খুব সহজে খুঁজে বের করতে পারে। যেটা মানুষের
দ্বারা সম্ভব হয় না। বর্তমানে রোবট দিয়ে চিকিৎসা
ক্ষেত্রেও বিভিন্ন জটিল সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে। এই রোবট
বিভিন্ন জটিল সার্জারি যেটা মানুষের দ্বারা কঠিন সেইসব
সার্জারি সফলতার সাথে এই রোবট করে থাকে। যারা বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী তারা
তাদের দৈনন্দিন কাজ এবং জীবনের প্রতিটা ধাপে সমস্যায় পড়ে।
এই সমস্যা সমাধান করার জন্য স্মার্ট রোবট অনেক সাহায্য করে। এই
স্মার্ট রোবট গুলো বৃদ্ধ বা প্রতিবন্ধী মানুষের সেবা,
খাবার ও চলাফেরা করার জন্য সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও
বিভিন্ন গবেষণা করার জন্য যেসব স্থানে মানুষ পৌঁছাতে পারেনা।
সেইসব স্থানে রোবট পাঠিয়ে গবেষণার কাজ চালিয়ে যাই এবং যত সমস্যা
থাকে সে সমস্যাগুলো সমাধান করা হয়। যেমন গভীর সমুদ্রের তলদেশে মানুষ
সহজে যেতে পারে না।
যেগুলোতে রোবট পাঠিয়ে অনুসন্ধান চালানো যায় এবং মহাকাশে বিশেষ করে মঙ্গল
গ্রহে সাধারণত মানুষ যেতে পারে না। সেখানেও রোভার রোবট পাঠানো হয় এবং
তাদের অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন বিপদজনক
কাজে রোবট সাহায্য করে থাকে। যেমন উদ্ধার কাজে, আগুন নেভানো কাজে,
বোমা নিষ্ক্রিয় করা কাজে। এগুলোর পাশাপাশি এই রোবট শিক্ষা
ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিল বিষয়গুলোর সমাধান করে এবং শিক্ষাকে আরো এগিয়ে
নিয়ে যায়।
এক কথায় বলা যায় যে মানুষের জন্য যে কাজগুলো কঠিন বা সমস্যা তৈরি করে।
সেই সব কাজ বা সমস্যাগুলো রোবট খুব সহজেই সমাধান করতে পারে। আশা করছি
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনি রোবট দিয়ে কি কি সমস্যার সমাধান করা যায় সে
সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
রোবটিক্স এর ব্যবহার
বর্তমানে কমবেশি সকল কাজের রোবটের ব্যবহার করা হচ্ছে। বলা যায়
দিন দিন রোবটের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে এই রোবটের
ব্যবহারগুলো বিভিন্ন শিল্পকারখানা গুলোতে বেশি করা হচ্ছে। এছাড়াও
এইগুলো চিকিৎসা ক্ষেত্রে, শিক্ষা ক্ষেত্রে, কৃষি ক্ষেত্রে এবং বিভিন্ন
ঝুঁকিপূর্ণ যে কাজগুলো সে কাজের ক্ষেত্রে
ব্যবহার হচ্ছে। চলুন রোবটিক্স এর ব্যবহার কিসে কিসে
হচ্ছে এগুলো একটু বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
- বর্তমানে শিক্ষা ও বিনোদন ক্ষেত্রে রোবটিক্স এর ব্যবহার অনেক বেড়েছে। এটা শিক্ষার্থীদের নতুন নতুন এবং জটিল যেকোনো বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে থাকে। এবং প্রোগ্রামিং কোড বা প্রোগ্রামিং শেখানোর জন্য এটি অনেক ব্যবহার হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের খেলনা যেগুলো এআইভিত্তিক রোবট দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে এগুলো মূলত গেমিং রোবট এগুলো বিনোদনের জন্য মানুষ ব্যবহার করছে।
- বাড়ির বিভিন্ন ধরনের কাজে রোবটের ব্যবহার। রান্নার কাজে স্মার্ট কুকিং রোবট ব্যবহার করা হয় এবং ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখার জন্য ক্লিনিং রোবট ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও সিকিউরিটি রোবট ব্যবহার করা হয় বাড়ির নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য।
- রোবটিক্স এর ব্যবহার বিভিন্ন ধরনের গাড়ি তৈরিতে করা হয়ে থাকে। এছাড়াও এটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশ বানানো এবং জোড়া লাগানো জন্য রোবট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই রোবট এই কাজগুলোকে নিখুঁতভাবে করতে পারে।
- শিল্প কারখানায় অনেক ভারি ভারি জিনিসপত্র তোলা ও সরানো লাগে। যেগুলো মানুষের জন্য বিপদজনক ও কষ্টকর হয়। এই ভারী কাজগুলো এখন রোবট দিয়ে খুব সহজেই তোলা ও সরিয়ে ফেলা যায়। যার কারণে মানুষের কষ্ট ও জীবনের ঝুঁকি থাকে না।
- যেকোনো যন্ত্রাংশের ভেতরের ছোটখাটো সমস্যা থাকলে। সেই সমস্যাকে খুব সহজেই ধরে ফেলতে পারে এই রোবট। যার কারণে বিভিন্ন যন্ত্রাংশের কারখানাতে বা দোকানে এই রোবটের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এরা যন্ত্রাংশের ভেতরের ত্রুটি খুঁজে বার করে এবং সেটিকে নিখুঁতভাবে ভালো করে।
- চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোবট ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে এই রোবট সফলতার সাথে বড় বড় সার্জারি বা অপারেশন করে থাকে। এছাড়াও এটি রোগীদের সেবা, ওষুধ দেওয়া ও দেখাশোনায় ব্যবহার হয়। শরীরের ঘা বা কাটা জায়গার ইনফেকশন থাকলে। সেই ইনফেকশন জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহার হয়।
- এই রোবট যারা বৃদ্ধ মানুষ ও প্রতিবন্ধী মানুষ তাদের দৈনন্দিন কাজের জন্য বা চলাফেরা করার জন্য এবং বিভিন্ন সেবার জন্য ব্যবহার করা হয়। এই রোবটগুলো তাদের জীবনকে আরো সুন্দর ও সহজ করে দিয়েছে।
- বিভিন্ন ধরনের গবেষণার কাজে এই রোবটের ব্যবহার করা হয়। সমুদ্রের তলদেশে মানুষ যেতে পারে না। সেসব জায়গায় গবেষণা ও অনুসন্ধান চালানোর কাজে সাবমেরিন রোবট ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও মহাকাশ গবেষণা ও অনুসন্ধানের কাজেও রোভার রোবট ব্যবহার করা হয়।
- বিভিন্ন বিপদজনক পরিবেশে এই রোবট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেখানে মানুষের জীবন যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। সে সব জায়গায় এই রোবট ব্যবহার করা হয়। যেমন বোমা নিষ্ক্রিয়করণ, কোন জায়গায় আগুন লাগলে সেই আগুনকে রোবট দিয়ে নেভানো। ভূমিকম্পে ভবন ধসে গেলে সেখানে উদ্ধার কাজ পরিচালনায় রোবট ব্যবহার করা।
- রোবটিক ড্রোন দিয়ে দ্রুত একই স্থান থেকে অন্য স্থানে জরুরি ওষুধ, খাবার অথবা বিভিন্ন ধরনের পার্সেল খুব সহজেই পৌঁছে দেওয়ার কাজে এই রোবট ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও মানুষ বিহীন রোবটিক গাড়ি মানুষকে মানুষের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্যবহার হচ্ছে।
- বাড়ির রান্না করার কাজ, ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখার কাজ এমনকি বাড়ির নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সিকিউরিটির কাজে এই রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে।
- পুলিশ প্রশাসনকে তাদের মিশনে সহায়তা করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে রোবট। তারা রোবট ব্যবহার করে দ্রুত তাদের মিশনে সফলতা আনছে এবং তারা বিভিন্ন অপরাধ দমন করছে। এমন একটা সময় আসবে ভবিষ্যতে যে সময়ে মানুষের জায়গায় রোবট যুদ্ধ করবে সেনাবাহিনী হয়ে।
রোবট ব্যবহারের সুবিধা কি
অনেকে আছেন যারা জানতে চেয়েছেন রোবট ব্যবহারের সুবিধা কি। তাদের কে
বলতে চাই যে রোবট ব্যবহারের অনেক সুবিধা আছে। বর্তমান
সময়ে এমন কোন কাজ নেই যে কাজে রোবটের ব্যবহার নেই। এখন প্রতিটা
সেক্টরেই এই রোবটের ব্যবহার হচ্ছে এবং মানুষ সেটা থেকে সুবিধা নিচ্ছে।
এই রোবট মানুষের জীবনকে আরো সহজ ও সুন্দর করে তুলেছে। মানুষ যে কাজগুলো
করতে পারেনা, সেসব কাজগুলো এই রোবট করে থাকে। এমনকি বিভিন্ন ধরনের ভারী ও
বড় ধরনের কাজ এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো এই রোবট করে থাকে। আসলে এর সুবিধা
বলে শেষ করা যাবে না।
রোবটের ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে বিভিন্ন কারখানা গুলোতে। রোবট ব্যবহার
করে শিল্প কারখানাগুলো তাদের পণ্য উৎপাদন অনেক বাড়ায়।মানুষের
তুলনায় এই রোবটগুলো বেশি কাজ করতে পারে এবং খুব দ্রুত সময়ে কাজগুলো
সম্পন্ন করতে পারে। এর সুবিধা বলতে গেলে যারা বয়স্ক লোক বা পঙ্গু
তারা তাদের কাজ কাম করতে পারে না। এই কাজকাম গুলো করার জন্য রোবট ব্যবহার
করা হয়ে থাকে।
যেটা তাদের জীবনকে কঠিন থেকে সহজ করেছে। এছাড়াও রোবটের ব্যবহার
বিভিন্ন সেনা মিশনে বা প্রশাসনিক মিশনে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বর্তমানে এই রোবটগুলো ব্যবহার করে মানুষ নতুন নতুন আবিষ্কার করছে এবং নতুন
কিছু জানতে পারছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে এর ব্যবহার হচ্ছে যেটা
শিক্ষার্থীদেরকে ভালোভাবে জানার ও বুঝার শিক্ষা দিচ্ছে।
বিনোদন জগতেও এর ব্যবহার অনেক। বর্তমানে এর ব্যবহার করে চিকিৎসা
ক্ষেত্রেও ভালো উন্নত করা যাচ্ছে। যেসব সার্জারি ডাক্তাররা করতে হিমশিম
খেত। সেইসব সার্জারি বা অপারেশন সফলতার সাথে রোবট দিয়ে করা
হচ্ছে। যেটা এই যুগকে আরো সহজ ও সুবিধা জনক করে তুলেছে। আশা
করছি উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনি রোবট ব্যবহারের সুবিধা কি সেগুলো
জানতে পেরেছেন।
রোবটিক্স এর জনক কে
রোবটিক্স এর জনক হচ্ছে জোসেফ এঙ্গেলবার্গার। জোসেফ
এঙ্গেলবার্গার হচ্ছেন একজন আমেরিকান উদ্বোধক ও প্রকৌশলী। জোসেফ
এঙ্গেলবার্গার ও জর্জ ডেভল দুজনে একসাথে প্রথম বাণিজ্যিক
রোবট আবিষ্কার করেছিলেন। তারা এই রোবটটি বানিয়েছিলেন ১৯৫০
দশকে।
যে রোবট গুলো বিভিন্ন শিল্পকারখানা গুলোতে প্রথম ব্যবহার শুরু হয়েছিল
এবং এটি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছিল ইতিহাসে। তাই তাকে ফাদার অফ
রোবটিক্স বলা হয়। তবে রোবট এই নামটি সর্বপ্রথম চেক
নাট্যকার ১৯২১ সালে তার একটি নাটকে ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু
বাস্তবে এই রোবটকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন জোসেফ এঙ্গেলবার্গার।
রোবোটিক্স এর প্রকারভেদ
এখন আমি রোবটিক্সের প্রকারভেদ গুলো আপনাদের সামনে তুলে
ধরবো। রোবটের কাজের ধরন এর ব্যবহার এবং এর নকশা ও
সক্রিয়তার মাত্রা অনুযায়ী রোবটিক্সের অনেক প্রকারভেদ
আছে। যে প্রকারভেদ গুলো বিভিন্ন কাজের উপর ডিপেন্ড করে বানানো
হয়ে থাকে। চলুন সেই প্রকারভেদ গুলো কি জেনে নেওয়া যাক।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবটঃ এই রোবট গুলো মূলত বিভিন্ন শিল্পকারখানা গুলোতে
ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই রোবট মূলত কারখানার বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন
করতে এবং ওয়েল্ডিং, পেন্টিং ও প্যাকেজিং করার জন্য বানানো হয়।
মোবাইল রোবটঃ এ রোবট এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করতে
পারে। এই রোবটগুলোতে চাকা, পা, অথবা ট্র্যাক লাগানো
থাকে এবং আশেপাশের পরিবেশ বুঝার জন্য এদের মধ্যে সেন্সর ও ক্যামেরা
লাগানো থাকে। এগুলো সাধারণত বিভিন্ন শিল্পকারখানায় মালপত্র নিয়ে
আসা যাওয়া করে, এছাড়াও এটি হাসপাতালে এবং ডেলিভারির কাজে ব্যবহার
করা হয়ে থাকে। এই রোবট মানুষের কাজকে অনেক সহজ এবং
তাড়াতাড়ি করতে সাহায্য করে।
হিউম্যানয়েড রোবটঃ রোবটি দেখতে পুরোপুরি মানুষের মত হয়ে
থাকে। কারণ এই রোবটে মানুষের মত মাথা হাত, পা এবং চোখ থাকে। এরা
মানুষের মতোই চলাফেরা করতে পারে এবং মানুষের মতন কথা ও অঙ্গভঙ্গি করতে
পারে। এই রোবটকে সাধারণত তৈরি করা হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
দিয়ে। এই রোবট এ আই সেন্সর এবং ক্যামেরা ফিট করে বানানো
হয়।
যেন তারা মানুষের সাথে কথা বলতে পারে এবং মানুষকে চিনতে পারে। সেই
সাথে মানুষের কথার উত্তর দিতে পারে। এই রোবট মূলত শিক্ষা
ক্ষেত্রে, গবেষণা ক্ষেত্রে, বিনোদনের ক্ষেত্রে এবং বিভিন্ন সেবামূলক
কাজে ব্যবহার করা হয়। এর একটি উদাহরণ হচ্ছে রোবট
সোফিয়া এটি একটি হিউম্যানয়েড রোবট।যেটা ২০১৭ সালে আমাদের
বাংলাদেশে ভ্রমণ করেছে।
এ্যারিয়াল রোবটঃ এই রোবট সাধারণত আকাশে উড়তে
পারে। যেগুলোকে ড্রোন বলা হয়ে থাকে। এই ড্রোন গুলোকে সেন্সর,
ক্যামেরা এবং জিপিএস দিয়ে তৈরি করা হয়। যেটা ব্যবহার
করে আকাশ থেকে ছবি তোলা হয় ভিডিও করা হয় বিভিন্ন পরিস্থিতিকে
নজরে রাখা হয়। এটা কৃষি কাজে, সামরিক বাহিনীর বিশেষ
অভিযানে, ফটোগ্রাফির কাজে, বিভিন্ন উদ্ধার কাজে এবং আকাশ পথের সকল
গবেষণার কাজে এই রোবটের ব্যবহার হয়ে থাকে।
আন্ডারওয়াটার রোবটঃ এই রোবট গুলোকে মূলত তৈরি করা হয় পানির নিচে
বিভিন্ন গবেষণা ও কাজ করার জন্য। এই রোবট কে বানানো
হয় ক্যামেরা, সেন্সর এবং বিশেষ প্রোপেলারের সাহায্যে। যেন এটা
পানির মধ্যে খুব সহজে চলাচল করতে পারে। এর ব্যবহার মূলত হয়ে থাকে
পানির নিচে উদ্ধারকাজ। পানির নিচে থাকা পাইপ লাইন বা কেবল মেরামত করা।
এমনকি এটা সামরিক কাজেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই রোবট
গুলো মূলত পানির নিচে যেসব কাজ মানুষ করতে পারেনা সেসব কাজ করে থাকে।
স্টেশনারি রোবটঃ এই রোবট এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকে এবং সেখান থেকেই তার
সকল কাজ সম্পন্ন করে। এই রোবটের ব্যবহার মূলত বিভিন্ন শিল্পকারখানা গুলোতে
করা হয়ে থাকে। এগুলো গাড়ি জোড়া লাগানোর কাজ বিভিন্ন ভারী জিনিসপত্র তোলা
ও নামানোর কাজ ওয়েল্ডিং এর কাজ এবং রং করার কাজ করে থাকে। এরা মানুষের
থেকে খুব দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে একই কাজ বারবার করতে পারে ও অনেক সময় ধরে
কাজ করতে পারে। যেটা কোম্পানির বা কারখানা গুলোর উৎপাদনশীলতাকে বাড়ায়।
ম্যানুয়ালি কন্ট্রোলড রোবটঃ এই ধরনের রোবট গুলো কন্ট্রোল করার
জন্য মানুষের প্রয়োজন হয়। এই রোবট গুলোকে রিমোটের মাধ্যমে
কম্পিউটারের মাধ্যমে অথবা বিভিন্ন ডিভাইসের মাধ্যমে কন্ট্রোল করতে
হয় এ কথায় বলা যায় এসব রোবটকে মানুষই চালাই। যেমন বোমা
নিষ্ক্রিয় করা, বিপদজনক জায়গায় মানুষ না গিয়ে রোবট পাঠিয়ে
সেটা দূর থেকে কাজ করা। মানুষ ছাড়া চলতে পারে না।
অটোনোমাস রোবটঃ এই রোবট গুলো মানুষের সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজে চলতে পারে
এবং নিজে নিজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। এগুলোকে বিভিন্ন প্রোগ্রামের
মাধ্যমে সেন্সর ক্যামেরা জিপিএস ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি করা হয়।
যেমন রোবটিক গাড়ি যে গাড়ি নিজে নিজেই চলতে পারে, ডেলিভারি রোবট এবং
মহাকাশ অনুসন্ধানকারী রোভার।
সেমি অটোনোমাস রোবটঃ এই ধরনের রোবট মূলত কিছু ক্ষেত্রে নিজে চলতে
পারে আবার কিছু ক্ষেত্রে মানুষের প্রয়োজন হয়। উদাহরণস্বরূপ
মেডিকেলের অপারেশন বা সার্জারির জন্য যেসব রোবট ব্যবহার করা হয়। সেই সব
রোবট সক্রিয়ভাবে যন্ত্র চালাতে পারে।
কিন্তু ডাক্তার সেটাকে যেভাবে আদেশ দেয় সেভাবে এই যন্ত্র
সার্জারি সম্পূর্ণ করে। অর্থাৎ এই যন্ত্রটা অর্ধেক নিজে কাজ করে আর জটিল
সমস্যাগুলো ডাক্তারেরা নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও ড্রোন রোবট নিজে
নিজে উড়তে পারে। কিন্তু সে কোন দিকে যাবে বা কি করবে সে আদেশটা মানুষ
দিয়ে থাকে।
রোবোটিক্সের সবচেয়ে বড় ৭টি চ্যালেঞ্জ কি
এখন আমি রোবটিক্সের সবচেয়ে বড় ৭টি চ্যালেঞ্জ
সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। তাই দেরি না করে চলুন
সেই চ্যালেঞ্জ গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
- রোবটিক্সের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রোবট কে মানুষের মতো সঠিক সিদ্ধান্ত ও বুদ্ধিমান করার চেষ্টা। বিশেষ করে এমন কোন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে রোবট যেন সঠিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে বা নিশ্চিত করতে পারে। এইরকম একটি রোবট তৈরি করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
- রোবটকে দিয়ে বিভিন্ন পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করানো হয় যেটা সেন্সরের মাধ্যমে। তবে অনেক সময় এই সেন্সর সঠিকভাবে তথ্য দিতে পারে না। আর এই তথ্যকে ভালোভাবে এবং নিখুঁতভাবে সেন্সর যেন আইডেন্টিফাই করতে পারে। এইরকম ব্যবস্থা তৈরি করা রোবটিক্সের সবচেয়ে বড় একটি চ্যালেঞ্জ।
- রোবট এবং মানুষের মধ্যে ভালোভাবে বোঝাপড়া ও যোগাযোগ করার মত প্রক্রিয়া তৈরি করা অনেক কঠিন। রোবট যেন মানুষের আচার আচরণ ভালোভাবে বুঝতে পারে এবং সে অনুযায়ী রোবট তার প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। এইরকম একটি রোবট তৈরি করা রোবটিক্সের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
- বিভিন্ন ধরনের এলাকা বা পরিস্থিতিতে রোবটকে চলাফেরা করানোর জন্য যে প্রক্রিয়া তৈরি করতে হবে। সে প্রক্রিয়াটা তৈরি করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
- একটি রোবটের ব্যাটারি যেন অনেকক্ষণ থাকে এবং এটা দীর্ঘ সময় ধরে যেন কাজ করতে পারে ও একই স্থান থেকে অন্য স্থানে অর্থাৎ বহু দূরে বসে এটাকে কন্ট্রোল করতে পারা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
- এমন একটি রোবট তৈরি করা যে রোবটটা হ্যাকিং হবে না এবং এই রোবটটা হবে নিরাপদ নির্ভরযোগ্য ও সাইবার সুরক্ষিত একটি রোবট। যেটা মানুষের জন্য কোন ক্ষতি বা বিপদ করবে না। এইরকম রোবট তৈরি করা রোবটিক্সের একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
-
রোবট মূলত গরিব মানুষের বা অর্থ সম্পদ কম আছে এরকম মানুষের হাতের
নাগালের বাইরে। উন্নত যে রোবট গুলো এ রোবটগুলো তৈরি করতে অনেক খরচ
হয়। এগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ ও আপডেট করতে প্রচুর পরিমাণে টাকা পয়সা
খরচ হয়। যেটা অনেক মানুষের হাতের নাগালের বাইরে। এই
রোবটের উচ্চ দাম কমিয়ে সেটাকে কম খরচে তৈরি করা ও
রক্ষণাবেক্ষণ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
রোবটের দুর্বলতা সম্পর্কে
বর্তমান যুগে রোবটের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এটা মানুষের
কঠিন কঠিন কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। এই রোবটের কারণে
মানুষের দীর্ঘমেয়াদির কাজ খুব অল্প সময়ে সম্পূর্ণ করা হচ্ছে।
এছাড়াও এর আরো অনেক উপকারিতা বা সুবিধা আছে যেগুলো আমি উপরে আলোচনা
করেছি আপনি চাইলে সেই সুবিধা গুলো পড়ে আসতে পারেন। এ রোবট অনেক উপকারী
হলেও এ রোবট গুলোর কিছু দুর্বলতা আছে যেগুলো এখন আমি আপনাদেরকে
বলবো।
রোবটের দুর্বলতার মধ্যে অন্যতম একটি দুর্বলতা হচ্ছে যে এই রোবট নিজে নিজে
নতুন কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। কেবলমাত্র রোবটকে প্রোগ্রামের
মাধ্যমে যে কাজ বা যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বলা হয়ে
থাকে শুধুমাত্র সেই সিদ্ধান্তই রোবট নিতে পারে।
রোবটের মধ্যে মানুষের মতো কোন আবেগ রাগ অনুভূতি কাজ করে না। এটা মানুষের
মত পরিস্থিতি অনুযায়ী অঙ্গভঙ্গি করতে পারে না। এক কথায়
বলা যায় রোবটের মধ্যে কোন অনুভূতি বা আকাঙ্ক্ষা থাকে না এটা মূলত
নির্দেশিত কাজেই ফোকাস দিয়ে থাকে।
রোবট যেকোনো পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না। কেবলমাত্র
তাকে যে পরিস্থিতির জন্য বানানো হয়েছে সে
পরিস্থিতিতেই কেবলমাত্র কাজ করতে পারে। অজানা কোন নতুন তথ্য বা কঠিন
কোন সমস্যায় পড়লে সে সমস্যাতে রোবট সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।
এমন কিছু রোবট আছে যেগুলো অনেক ভারী কাজ করতে পারে না আবার
অনেক কঠিন পরিস্থিতিতেও কাজ করতে পারে না। এগুলো মূলত রোবটের
শরীরের উপর নির্ভর করে যে সে কত ভারী কাজ করতে পারে বা কত কম ভারী
কাজ করতে পারে।
এ রোবটের ব্যাটারি অনেকক্ষণ চলে না যার কারণে এটাকে বারবার রিচার্জ
করতে হয়। যেটা অন্য দূর থেকে কন্ট্রোল করাও সম্ভব হয় না অর্থাৎ এর
পাশাপাশি বা একটি রেঞ্জ থাকে এই রেঞ্জের মধ্যে এটি কাজ করতে
পারে। বলা যায় এই রোবট গুলোর শক্তির ও ব্যাটারির সীমাবদ্ধতা
থাকে।
রোবটের প্রোগ্রামে যদি কোন ভুল বা ভ্রান্তি থাকে। তাহলে সে রোবট
অনিয়ন্ত্রিত হতে পারে। যার কারনে রোবট সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।
ফলে কাজের মধ্যে ভুল করতে পারে এবং মানুষের বিভিন্ন ক্ষতি করতে পারে।
FAQ/রোবটিক্স সম্পর্কিত কিছু আলোচিত প্রশ্নের উত্তর
এখন আমি রোবোটিক সম্পর্কে আলোচিত কিছু প্রশ্নের উত্তর আপনাদেরকে
জানাবো। তাই দেরি না করে চলুন সেই উত্তরগুলো জেনে আসি।
রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়ার কি?
উত্তরঃ রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে এমন এক ব্যক্তি যে রোবটকে তৈরি করে।
অর্থাৎ রোবটের ডিজাইন থেকে শুরু করে এর আকার আকৃতি, প্রোগ্রাম,
যন্ত্রাংশ ও সেন্সর সব কিছুই সঠিকভাবে সংযুক্ত করে এবং
রোবটকে কাজ করার জন্য তৈরি করে। একেই মূলত বলা হয় রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়ার।
প্রথম ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট কোনটি?
উত্তরঃ প্রথম ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট হচ্ছে ইউনিমেট। এই রোবটটি ১৯৬১
সালে তৈরি করা হয়েছিল। এই রোবটটি দিয়ে গাড়ির
ফ্যাক্টরিতে কাজ করানো হতো। এটা ভারী বস্তু তোলার জন্য এবং
ওয়েল্ডিং করার জন্য ও একই কাজ বারবার করার জন্য ভালো ছিল। এই
রোবটটা আধুনিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট গুলোর পথপ্রদর্শক হিসেবে বেশ
জনপ্রিয়।
পৃথিবীর প্রথম রোবট কোনটি?
উত্তরঃ পৃথিবীর সর্বপ্রথম রোবট হচ্ছে হেরণ অটোমাটন। কিন্তু আধুনিক যুগের
দৃষ্টিকোণ থেকে সবথেকে কার্যকরী এবং সফলতার প্রথম রোবট বলা হয়
ইউনিমেটকে যেটা ১৯৬১ সালে তৈরি করা হয়েছিল।
রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং কি আইআইটি?
উত্তরঃ রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এটা কোনো আইআইটি না। কারণ রোবটের
ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে এমন একটি শাখা যেখানে রোবট ডিজাইন প্রোগ্রামিং এবং
পরিচালনা করা হয়। আর আইআইটি হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে
রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এর পড়াশোনা করানো হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ
রাজশাহীর সেরা ব্লগারকে জানুন বিস্তারিত
রোবট কি?
উত্তরঃ রোবট এমন একটি যন্ত্র যে যন্ত্রটা মানুষ তৈরি করে তাদের বিভিন্ন
কাজের বা সমস্যার সমাধান করার জন্য। এই রোবট বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এবং
প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়। যেটা মানুষের তৈরি করা
প্রোগ্রাম অনুযায়ী কাজ করে থাকে। এই রোবট অনেক ধরনের কাজ করতে
পারে। যেমন চিকিৎসা ক্ষেত্রে, সামরিক অভিযানে,
উদ্ধারকাজে, নজরদারিতে, কৃষিক্ষেত্রে, রান্নাবান্নার
কাজে, বাড়িঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার কাজে, গবেষণা ও অনুসন্ধানী
এবং বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে উৎপাদন ও ভারী বস্তু ওঠানামা করার
কাজে ইত্যাদি।
লেখকের মন্তব্যঃ রোবটিক্স কি বিস্তারিত
আমি আমার আর্টিকেলের মধ্যে রোবোটিক্স কি এই
সম্পর্কে আপনাদেরকে বিস্তারিত জানিয়েছি। তার সাথে আপনাদেরকে রোবট
এর সুবিধা ও অসুবিধা রোবটিক্স এর ব্যবহার রোবটিক্স এর জনক কে এবং
রোবোটিক্সের এর প্রকারভেদ সম্পর্কে জানিয়েছি। আশা করছি আমার এই
আর্টিকেলটি পড়ে আপনি রোবটিক্স সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে পেরেছেন।
আপনি যদি আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে আমার
এই আর্টিকেলটি আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং তাদেরকেও
জানার সুযোগ করে দিবেন। এছাড়াও আপনার যদি আমারে আর্টিকেল নিয়ে
কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে অথবা আপনি যদি নতুন কোন বিষয়ে জানতে
চান? তাহলে আমাদের নিচে থাকা কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে
জানাবেন।
অপরাজিতা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url